Beanibazarview24.com





ঘটনাটি ১৯৯১ সালের। একদিন ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছিলেন মুনিরা আব্দুল্লা। পথে বাসের সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়। সেসময় ৩২ বছর বয়সী মুনিরার সঙ্গে ছিল চার বছর বয়সী আরেক ছেলে ওমর ওবেয়ার। ছেলে ওমরের কিছু না হলেও মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে কোমায় চলে যান মা মুনিরা আবদুল্লা।
এরপর একদিন-দু’দিন করে কেটে গেছে ২৭ বছর। শিশু ওমরও এখন ত্রিশোর্ধ্ব যুবক। মায়ের সুস্থ হওয়ার আশা কখনো ছাড়েননি ছেলে ওমর। মা একদিন কোমা থেকে জেগে উঠবেন এমন আশায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে তার সে আশা পূরণও হয়েছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ তার মা জেগে উঠেছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদপত্র দ্য ন্যাশনালের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। ওমর গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি কখনো তার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেইনি। কারণ আমার সবসময় মনে হতো একদিন তিনি জেগে উঠবেন। আমি এ ঘটনার কথা সবাইকে জানাচ্ছি। কারণ এমন অবস্থা হলে কেউ যেন তাদের প্রিয়জনের ব্যাপারে আশা ছেড়ে না দেন। এরকম অবস্থায় কেউ থাকলে তাকে মৃত বলে ধরে নেবেন না।’
মুনিরা আবদুল্লাকে প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। পরে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থাকে চিকিৎসকরা ‘ভেজিটেটিভ’ বলে বর্ণনা করেন। পরে তাকে আবার আমিরাতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। একটি হাসপাতালে রেখে তাকে টিউবের মাধ্যমে খাবার দেয়া হতো। তাছাড়া শরীরের মাংসপেশী ঠিক রাখতে ওই অবস্থাতেই তাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়।
২০১৭ সালে এক সরকারি অনুদানের অর্থে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জার্মানিতে। সেখানে তার ওপর কিছু অস্ত্রোপচার করা হয়। কোমা থেকে জাগিয়ে তুলতে তাকে কিছু ওষুধও প্রয়োগ করা হয়। এরপর সম্প্রতি একদিন ঘটে আশা জাগানো সেই ঘটনা। ওমরের সঙ্গে হাসপাতালের একজনের বাগবিতণ্ডা হচ্ছিল। সেই শব্দে হঠাৎ জেগে ওঠেন তার মা।
ওমর বলেন, ‘হাসপাতালের ওই রুমে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমার মা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন আমি বিপদে আছি। সেটি তাকে যেন একটি ধাক্কা দিয়েছিল। তিনি অদ্ভুত শব্দ করছিলেন। আমি চিকিৎসকদের ডাকছিলাম তাকে পরীক্ষা করার জন্য। পরীক্ষা করে তারা বলছিলেন সব স্বাভাবিক আছে।’
‘এর তিনদিন পর কারও ডাকে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি। কেউ আমার নাম ধরে ডাকছিল। উঠে দেখি আমার মা আমাকে ডাকছেন, আমি আনন্দে যেন উড়ছিলাম। ২৭ বছর ধরে আমি এই মুহূর্তটার স্বপ্ন দেখেছি। এখন আমার নাম ধরেই তিনি প্রথম ডাকলেন।’
মুনিরা আবদুল্লা এখন আরও অনেক বেশি সাড়া দিচ্ছেন। তাকে আবুধাবিতে নিয়ে ফিজিওথেরাপি দেয়া হচ্ছে।
জ্ঞান হারানোর বহু বছর পর এরকম চেতনা ফিরে পাওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। তবে এরকম অবস্থায় থাকা কেউ কখন তার সংজ্ঞা ফিরে পাবেন, সেটা অনুমান করা কঠিন।
টেরি ওয়ালিস নামে এক মার্কিন নাগরিক ১৯ বছর পর তার সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছিলেন। এক গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন এই ১৯ বছর।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.