Beanibazarview24.com





প্রানঘাতী করোনায় মৃত্যুর আতঙ্কের মাঝে আরেক আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় মুসলিম প্রবাসীরা। করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, সেখানে মৃত্যুর পর লাশের জন্যও অপেক্ষা করতে হচ্ছে কয়েক দিন। হাসপাতালে মারা গেলে লাশ পাওয়া যাচ্ছে না কয়েক ঘন্টার মধ্যে। অপেক্ষা করতে হয় কয়েকদিন। তারপর লাশ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে কবরের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা।



এদিকে নিউইয়র্কে বর্তমানে দীর্ঘদিন মরদেহ রাখারও সুযোগ নেই। এক সঙ্গে এত মৃত্যুর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। ভয়াবহ এ বাস্তবতায় বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরও মৃত্যু ঘটছে। প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকায় জোড়ায় জোড়ায় নতুন নাম যোগ হচ্ছে। এর মধ্যেই শুধু নগরীতে অর্ধ শতাধিক মৃত্যুর খবর দুদিন আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। এসব মৃতদেহের কবর বা শেষকৃত্য নিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ কিছু নির্মম বাস্তবতা।



নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন তিন প্রজন্মে চলছে বলা হয়। এখন পর্যন্ত নগরীর অনুমোদিত পূর্ণ বাংলাদেশি মালিকানাধীন ফিউনারেল হোম গড়ে ওঠেনি। আমেরিকায় মৃত্যুর পরের আনুষ্ঠানিকতাও বেশ নিয়মের মধ্যে। এখানে মারা যাওয়ার পর পরিবারের পক্ষে ফিউনারেল হোমকে মরদেহ গ্রহণ করতে হয়। ফিউনারেল হোম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন করে বিবরণী জমা দিতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিবাসীবহুল নিউইয়র্ক নগরীতে প্রায় প্রতিটি কমিউনিটির ফিউনারেল হোম রয়েছে।



বাংলাদেশের কোনো মুসলমান ধর্মাবলম্বী মারা গেলে অন্য যেকোনো মুসলমান কমিউনিটির ফিউনারেল হোমের সাহায্য নেওয়া হয়। হিন্দুদের জন্য ফ্লাশিং এলাকায় একটি ফিউনারেল হোম থেকে সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। এসব ফিউনারেল হোমও কঠিন নিয়ম মেনে সবকিছু করে। মরদেহ বহন করার জন্য রয়েছে পৃথক গাড়ি। ফিউনারেল ডিরেক্টর পদবির লাইসেন্সধারী একজনকে এসব শেষকৃত্যের দায়িত্ব পালন করতে হয়।



নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মরদেহ সমাধির কাজে দীর্ঘদিন থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কমিউনিটি সংগঠক জেড চৌধুরী জুয়েল। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেড চৌধুরী জুয়েল প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে দেওয়া তথ্যে জানালেন, বর্তমান অবস্থায় লাশ দাফনের জন্য স্কেজুয়েল (সময়সূচি) করাটাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফিউনারেল হোম ব্যবস্থা করাসহ দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা নিয়ে বেশ জটিলতা ও চরম সংকট রয়েছে। যাদের পরিবারের লোকজন মারা যাচ্ছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত শোকের সঙ্গে নেমে আসছে চরম বিড়ম্বনা। জানাজায় পর্যন্ত যোগ দিতে পারছেন না কেউ। বারবার অসহায় মানুষের ফোন কল আসছে সাহায্য চেয়ে।



জুয়েল বলেন, অনেক চেষ্টা করে তিনি ৬ ও ৮ এপ্রিল ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল গোরস্থানে আটজন প্রবাসীর ফিউনারেলের সময়সূচি ঠিক করে রাখতে পেরেছেন। নিউইয়র্কে মৃত্যুও ব্যয়বহুল। কবরের জায়গার জন্য সর্বনিম্ন ১৩০০ ডলার থেকে ২ হাজার ডলার লাগে। ফিউনারেল হোম হাসপাতাল থেকে বাক্সবন্দী (কাস্কেট) লাশ পরিবহন করে কবরস্থানে পৌঁছে দেওয়ার কথা। করোনা আক্রান্ত রোগীদের গোসল করানো না হলেও মুসলিম ফিউনারেল হোমে ধর্মীয়ভাবে পবিত্র করানো হচ্ছে। কবরস্থানে পৌঁছে দেওয়া ও ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করার জন্য ফিউনারেল হোমকে দিতে হয় ১৮০০ ডলারের বেশি। কবর খনন ও মাটি ভরাট করানোর জন্য আরও ২৫০০ ডলার। শনিবার বা রোববার হলে এ ব্যয় আরও বেশি হয়।
জুয়েল আর জানান, সব মিলে ছয় হাজার ডলারের প্রয়োজন পড়ছে প্রতিটি লাশ দাফন করতে। হিন্দু বা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বেলায়ও প্রায় একই ব্যয়। অনেক পরিবারের জন্য এ অর্থের ব্যবস্থা করা কঠিন। জুয়েল বলেন, এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের পরিবার, পরিচিতজন, আত্মীয়স্বজনরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছেন। কয়েকজনকে কমিউনিটির সহানুভূতিশীল লোকজনের সাহায্য নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সমিতির কেনা কবরের জায়গা আছে। যদিও এ সংখ্যা এখন বেশ অপ্রতুল মনে হচ্ছে। সমিতিগুলো প্রবাসীদের চরম এ সংকটের সময়ে যতটা পারে প্রয়োজনে এগিয়ে আসছে। যদিও ফিউনারেলের ব্যয় নির্বাহের জন্য নিউইয়র্কে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কোনো সমন্বিত সাহায্য তহবিল নেই। নিরুপায় পরিবার কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে?—এসব প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.