Saturday, July 27, 2024
Google search engine
Homeআলোচিতপ্রবাস এক দীর্ঘশ্বাসের নাম

প্রবাস এক দীর্ঘশ্বাসের নাম

প্রবাস এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। আমার কাছে প্রবাসের কোনো ক্লাসিফিকেশন নেই। এর মানে যারা নিজ দেশের বাইরে থাকেন তাদের অধিকাংশেরই অনুভূতি এক ও অভিন্ন। এখানে সবাইকে পরিশ্রম করে টিকে থাকতে হয়। সেটা হোক সৌদি-জাপান-সিংগাপুর-সুইজারল্যান্ড-আমেরিকা-ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়া।

কিছু মানুষ হয়তো তাদের অসম্ভব মেধা ও পরিশ্রমের কারণে সবাইকে ছাড়িয়ে ভিন্ন উচ্চতায় নিজেদের নিয়ে যান। তাছাড়া সবার গল্প এক। প্রতিদিন রুটিন করে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়া, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি। সেই সাথে মাথায় থাকে অসংখ্য দুশ্চিন্তা। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় দেখি কত মানুষ রাস্তায় শুয়ে আছে। গায়ে জামা নেই, খাবার নেই। মাঝে মাঝে ভাবি, এদের কী কোনো অভিযোগ নেই? রাগ নেই?

ক্ষোভ নেই? রাস্তায় শুয়ে বসে থাকা মানুষগুলো মাইগ্রেটেড আর সাদা অস্ট্রেলিয়ান। দেখে খুব মায়া হয়। আজও একজনকে দেখলাম উদোম শরীরে ফুটপাতের মাঝে মাথায় একটা শার্ট জড়িয়ে শুয়ে আছে। জীর্ণশীর্ণ শরীর, শরীরে অসংখ্য দাগ। এতটা নাজুক মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় কমই দেখেছি।

আমাদের অবস্থা হয়তো এত নাজুক নয়। তবে অবস্থানটা কোথায় সেটাও অনুধাবন করা যায়। ঠিক দিনে এনে দিনে খাওয়ার মতো অবস্থা। এদেশে একা উপার্জন করে টিকে থাকাই দুরূহ। টিকে থাকার জন্য কতই না পরিশ্রম করেছি গত ছয়টা বছর! দেশে যে কাজ কখনও কল্পনাই করিনি সেই কাজও করতে হয়েছে সংসারের স্বার্থে।

এদেশে এটাই কাজের সংস্কৃতি। কাজে লজ্জা নেই। কাজ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়। তাই মানুষ কাজ করে। তাছাড়া এখানে কিছু কিছু চাকরি বাদে সবক্ষেত্রেই প্রায় সমান বেতন দেওয়া হয়। বেতন দেওয়া হয় ঘণ্টার ভিত্তিতে।

মাঝে মাঝে ভাবি, আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, তাও কাজ করবে না। আবার সেই মানুষগুলোই দেশের বাইরে গেলে সব কাজ করে। আমরা কাজের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি। পারিনি বিধায় আমাদের একটা বড় জনশক্তি অব্যবহৃত। কিংবা একটা দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র একজন নাগরিকের সেবা থেকে বঞ্চিত থাকে।

অস্ট্রেলিয়ায় শিশুরা ১২ বছরের পর থেকেই কাজ শুরু করে। এতে দেখা যায় যে বয়সে আমি আপনি চাকরির পেছনে ঘুরছি সেই বয়সে তারা বাড়ির মালিক হয়।

বাংলাদেশের মানুষ উচ্চ শিক্ষার জন্য উন্নত বিশ্বে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করেন। অথচ তারা যখন দেশে ফিরে যান সেই কাজের অভিজ্ঞতাগুলো কাউকে বলেন না। অর্থ জমিয়ে বাড়ি গাড়ি করে সেই আগের অবস্থাতেই ফিরে যান। এমন একটা ভাব নিয়ে চলাচল করেন যেনও পূর্বের জনমে সবাই রাজা বাদশা ছিলেন। আমাদের এই সংস্কৃতির পরিবর্তন আবশ্যক।

একটা দেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষের উপার্জন দিয়ে দেশের উন্নতি অনেক কঠিন। আমাদের বাবা-মায়েরা সন্তান চাকরি করার আগ পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব বয়ে বেড়ান। একটা সরকারি চাকরির আশায় জীবন থেকে ৩০-৩৩ বছর চলে যায়। এই অভিশাপ থেকে জাতির মুক্তি দরকার।

আমরা উন্নত বিশ্বের কথা বলি, উন্নত বিশ্বের মতো হতে চাই। কিন্তু উন্নত বিশ্বের উন্নত হওয়ার ম্যাকানিজম ফলো করি না। যার কারণে একজনকেই সংসারের সকল দায়-দায়িত্ব বহন করতে করতে জীবন পার করতে হয়। জীবন পার হয় রাষ্ট্রের।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Last Post