Beanibazarview24.com






শেখ মোজাহিদুল ইসলাম, আরব আমিরাত থেকে :: ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়ে নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস।’ প্রবাসীদের সম্পর্কে দেশের মানুষের ধারনা টিক এরকমই, অনেকটা রূপকথার কাহিনীর মত। প্রবাসী বলতে মূলত একটা সুখি মানুষকে ইঙ্গিত করা হয়, যাদের থাকে পকেট ভর্তি টাকা, বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত, নেই কোন অভাব, যাদের যাদের মাঝে নেই দেশ প্রেম। দেশে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ প্রবাসীদদের কে স্বার্থপর হিসাবেই জানে। তাদের ধারনা প্রবাসীরা শুধুমাত্র তারা নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত দেশের কারো খোঁজখবর নেয়ার সময় নেই প্রবাসীদদের।



কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে কতটা ব্যবধান তা কেবল মাত্র ভুক্তভোগী প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করবে না! দেশের মানুষ শুধুই প্রবাসীদের সুন্দর স্বাস্থ্য আর হাসিমাখা মুখটাই দেখে, মূলত আসল সত্যটা মুখের কোনে লুকানো মুছকি হাসি আর চোকে দেখা সুখের আবরণে ঢাকা রয়ে যায়।



দেশে বসবাসকারীদের ঘুম ভাঙ্গে হয়তো ভোরবেলা মুয়াজ্জিনের আজানে, অথবা কারো ঘুম ভাঙ্গে সকাল ৭টা বা ৮ টায়। ঘরে বসবাসকারী মা, বোন বা ভাবির কোমল সুরে নাস্তা তৈরি হওয়ার খবর শুনে, অথচ প্রবাসে বসবাসকারী একজন নির্মাণ শ্রমিকের ঘুম ভাঙ্গে ভোর চারটায় মোবাইলের এলার্মে। ক্লান্ত শরীর যে সময়ে একটু বিশ্রাম নিতে চায় সে সময়ে আবার বাথরুমের সিরিয়াল ধরে গোসল বা ফ্রেস হয়ে কাজের জন্য প্রস্তুতি!



তাড়াহুড়ো করে কোনরকম সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার নিয়ে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়ানো। ভোর হওয়ার আগে কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা তাই অনেকে বাসে ঘুমিয়ে নেন। যারা নামাজ পড়েন ফজরের নামায কর্মস্থলে বালির উপর গামছা বিছিয়ে আদায় করে নেন।
দিনের শুরু হওয়ার সাথে সাথে কর্মমূখর প্রবাসের কাজের ব্যস্ততা শুরু হয়। হাড়ভাঙা খাটুনি। বাড়তে থাকে সূর্য্যি মামার উত্তাপ। ঝরতে থাকে ঘাম। সকালের নাস্থার বিরতির পর আবার শুরু হয় কাজ। যা চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত। অবশ্য আরব আমিরাতে অত্যধিক গরমের কারণে বছরের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ জুনের ১৫ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত (বেলা সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৩ টা) শ্রমিকদের কাজ বন্ধ থাকে।
মধ্যাহৃ বিরতিতে যখন বিশ্রামাগারে, ঘামে ভেজা বুটজুতার নাড়ি ওল্টানো দুর্ঘন্ধ! তারপর ক্লান্তির নিদ্রা যখন দু’চোখে ঠিক তখন মোবাইলের মিসকলে নিদ্রাভঙ্গ। রাজ্যের নানান অভিযোগ।
এর মাঝে আবার ফোরম্যানের ডাক কাজ শুরু হয়ে চলে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত, কাজ শেষে আবার হুড়োহুড়ি করে বাসের লাইনে সবাই অধৈয্য, ঘামে ভেজা, দুর্ঘন্ধে ভরা দেহগুলো গাদাগাদি বসে পড়ে, কেউ উচ্চ ভলিউমে গান শোনে, কেউ আবার দেশে প্রিজনের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলে, ক্যাম্পে আসার আগেই সবাই প্রস্তুত, কার আগে কে নামবে, দৌড়ে ছোট বাথরুমে।
ঘামে ভেজা নোংরা শরীরটা তপ্ত জলে ধুতে হবে। কেউ আবার খাবার রান্না করতে হবে। সময় মিললে হয়তো দেশে ফোন,যেখানে বেশির ভাগই দুঃ সংবাদে,অভাব, অভিযোগ, তারপর হয়তো ক্লান্তির ঘুম, মাঝে মাঝে ঘুম ও হারিয়ে যায়! এভাবেই দিন, মাস, বছর শেষ হয়।ফুরিয়ে যায় একজন প্রবাসীর জীবন। শুধু অভাব ফুরোয় না।
কীভাবে কাটছে প্রবাসীদের জীবন? কেমন আছেন প্রবাসীরা, দেশ ও স্বজনদের দূরে রেখে প্রবাস জীবন কী খুব স্বস্তিতে কাটেছ? নাকি সোনার হরিণের পেছনে দোঁড়াতে দোঁড়াতে প্রবাসীরা ক্লান্ত। প্রবাসীদের এ বিষয় গুলো জানার পেছনে কারো কোনো অযাচিত উদ্দেশ্য নেই। সুখ -দুঃখ আর কষ্টের অনুভূতিগুলো বলার প্রয়াসমাত্র। কারন, কারও কাছে প্রবাসের জীবন বড্ড বেশি অহংকারী। কারও কাছে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
লেখক, সাংবাদিক।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.