Beanibazarview24.com






অপরাধটা ছিল প্রেম। অনার্স পড়ুয়া তানিয়ার প্রেম করার কারণেই হতে হল খুন। তাও নিজের মায়ের হাতে। তানিয়া তার একসহপাঠিকে ভালোবাসতো। এ ভালোবাসার কারণে তার মা মেয়েকে রাতের আধাঁরে হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে রাখে।
নোয়াখালীর চাঞ্চলকর কলেজ ছাত্রী তানিয়া হত্যাকান্ডে বোন চাঁদনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দেন। আজ রাতে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
গত ১১ই নভেম্বর নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে নোয়াখালী পৌরবাজার সংলগ্ন এলাকায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম তাবাসসুম তানিয়া (২২)।
গত ১৫ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশের ডোবা থেকে তার অর্ধগলিত মৃত দেহ উদ্ধার করে সুধারাম থানাপুলিশ। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৫ই নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানিয়ার বন্ধু তাপস নামে এক যুবককে আটক করেছিল পুলিশ। হত্যাকান্ডের ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও থানা পুলিশ কোন কুলকিনারা করতে না পারায় জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ইলিয়াছ শরীফ এর বিপিএম-পিপিএম (সেবা) নির্দেশে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কে।
ডিবির ওসি আবুল খায়ের মামলাটি হাতে নিয়ে নিহত শিক্ষার্থীর মা সাজেদা আক্তার নিপু (৫৫), বোন চাঁদনি (১৯) ও তার মামা সোহেলকে বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার বাড়ি থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে হত্যাকান্ডের সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। আটক নিহতের বোন চাঁদনিকে আজ নোয়াখালী বিচারিক আদালত-২এ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ সোহেব উদ্দিন খাঁন এর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি প্রদান করেন।
জানা যায়, তানিয়ার বাবা শাহাজাদা ব্যবসায়ীক কাজে ঢাকায় থাকেন। গত ৮-১০ দিন আগে নিহতের মা তাকে ও তার ছোট বোন চাঁদনিকে বাসায় রেখে ঢাকায় যান। গত ১১ই নভেম্বর তানিয়ার মা সাজেদা আক্তার নিপু আন্তঃনগর ট্রেন উপকুল এক্সপ্রেস যোগে মাইজদী ফেরেন। তানিয়া তার মাকে মাইজদী কোর্ট রেলস্টেশনে এগিয়ে আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এর কিছু সময় আগে তানিয়ার মা সাজেদা আক্তার বাসায় ফিরে মেয়েকে খোঁজ করে না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
নিখোঁজ জিডি’র ৪দিন পর ১৫ নভেম্বর দুপুরে মাইজদী পৌর বাজার সংলগ্ন তানিয়াদের বাড়ীর পাশে একটি ডোবায় তানিয়ার অর্ধগলিত লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন সুধারাম থানা-পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এ কথাগুলো জিডিতে উল্লেখ ছিল।
যে কারণে হত্যা করা হয় তানিয়াকে:
নোয়াখালী শহরের সোনাপুর ডিগ্রী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম তানিয়া তার কলেজের সহপাঠি হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে তাপসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তানিয়ার মা ঢাকা থেকে বাসায় আসার পর তার মা’র অনুপস্থিতিতে তাপসের সঙ্গে তানিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা ছোট বোন চাঁদনি মাকে বলে দেয়। এ কারণে মা ক্ষিপ্ত হয়ে তানিয়াকে এলোপাতাড়ি মারধর ও লাথি মারে। এতে তানিয়া অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তানিয়ার মা, মামা ও বোন তার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। গভীর রাতে তিনজন মিলে লাশ বাড়ির পাশে ডোবায় ফেলে রেখে থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করে।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের দুই দিন পর তানিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে তার কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাইজদী শহরে মানব বন্ধন সমাবেশ করেছে।
ওসি ডিবি আবুল খায়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার মা ও বোন হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় নিহতের বোনকে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। মা ও মামা কে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.