Beanibazarview24.com






স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুঃস্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছেন ২৭ তরুণ। দালালের কথায় ভুলে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন তারা। দীর্ঘ তিন-চার বছরে বহু পথ ঘুরে বন, সাগর, মরুভূমি পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হলেও ঠিকানা হয় কারাগারে। কারাভোগের পর বুধবার ভোররাতে দেশ ফিরেছেন তারা।



এই ২৭ জনের একজন সিলেটের বিয়ানীবাজারের আবদুল ওয়াদুদ। অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে দেড় বছর কারাভোগ করেন তিনি। বুধবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি বলেন, দালাল বলেছিল, মাত্র পাঁচ-ছয় লাখ টাকা খরচ করলেই স্বপ্নের দেশ আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। এর পর আর কাজের অভাব নেই। সংসারের অভাবও ঘুচে যাবে।



এই প্রলোভনেই যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা শুরু করেন ওয়াদুদ। ২০১২ সালে প্রথমে ভারতে যান। সেখান থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় ব্রাজিল। সেখানে তার মতো আরও অনেক বাংলাদেশি ছিল। তাদেরও একই গন্তব্য। ব্রাজিল যাওয়ার পর কয়েক মাস তাদের সেখানেই রাখে দালালরা।
এরপর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বন আমাজনের ভেতর দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভেনিজুয়েলা পৌঁছান শতাধিক বাংলাদেশি। সেখানে আবার কিছুদিন লুকিয়ে থাকা। তারপর বন-পাহাড় পেরিয়ে পৌঁছান কলম্বিয়া। সেখান থেকে কখনও হেঁটে, কখনও গাড়িতে চড়ে পানামা, কোস্টারিকা, নিকরাগুয়া, হন্ডুরাস, গুয়েতামালা হয়ে মেক্সিকো পৌঁছান। ততদিনে কেটে গেছে সাত মাস। মেক্সিকো পৌঁছানোর আগে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না ওয়াদুদের ।
মেক্সিকোর দালালরা যুক্তরাষ্ট্রের পৌঁছে দিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা দাবি করে। নয়তো প্রাণে মরতে হবে। ওয়াদুদ বাড়িতে টেলিফোন করে সব কথা জানান। তার ভাই আবদুল বাসিত জানান, ওয়াদুদের পেছনে মোট ৩৬ লাখ টাকা লেগেছে।
যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছানোর আগে প্রায় ২২-২৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছে গিয়েছিলেন ওয়াদুদরা। কিন্তু কপাল মন্দ। ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। আবদুল বাসিত টেলিফোনে জানান, জেলে থাকার সময় প্রতি সপ্তাহে ফোন করত ওয়াদুদ। টাকা দিতে হতো। দালাল ও পুলিশের ‘চাহিদা’ মেটাতে গিয়ে তার পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।
সাভারের মঞ্জুরুল ইসলাম মাসুদের গল্পও একই রকম। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর একাধিক যুবক এ পথেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ভাগ্য ফিরিয়েছেন। ডলার কামিয়ে তারা এখন এলাকার অন্যতম বিত্তবান। তিনিও চেয়েছিলেন তাদের মতো হতে।
২৭ বাংলাদেশি দেশে ফেরার পর তাদের গ্রহণ করে অনির্বাণ ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির সমন্বয়ক আল আমিন নয়ন বলেন, এই ২৭ জন বাকিদের জন্য শিক্ষা। তাদের দেখে বাকিরা বুঝতে পারবে, অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা নিজের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
Comments are closed.