Saturday, July 27, 2024
Google search engine
Homeআলোচিতসুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ ও স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়

সুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ ও স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়

উন্নত জীবনযাপনের জন্য বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। বিশেষ করে ব্যাংকিং, শিক্ষাব্যবস্থা এবং উচ্চ জীবনযাত্রার মানের কারণে বিশ্বব্যাপী আকর্ষণীয় দেশটি। মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সুইস সরকার বরাবরই শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। সরকারি তহবিলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও দিয়ে থাকে উচ্চশিক্ষায় নানা স্কলারশিপ। প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে স্কলারশিপগুলোর ধরন হয় বিভিন্ন রকম। জেনে নেওয়া যাক সুইস স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়গুলো।

সুইজারল্যান্ডে যত স্কলারশিপ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সুইজারল্যান্ডের সরকারি স্কলারশিপ হচ্ছে গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ। প্রতিবছর যেকোনো বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের বাইরের স্নাতকোত্তর গবেষকদের এই স্কলারশিপটি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাসিক জীবনযাত্রা, পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচ, স্বাস্থ্য বীমা, ভ্রমণ খরচ/বিমান ভাড়া এবং আবাসন খরচ অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডক্টরেট বা পোস্ট-ডক্টরাল স্তরে গবেষণার জন্য সুইজারল্যান্ডগামী হয় হাজারো শিক্ষার্থী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্কলারশিপের মধ্যে ইটিএইচ জুরিখ এক্সিলেন্স মাস্টার্স স্কলারশিপ, মাস্টার্স ডিগ্রীধারীদের জন্য ইপিএফএল এক্সিলেন্স ফেলোশিপ, গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট জেনেভা স্কলারশিপ, পিএইচডির জন্য জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং মানবাধিকার জেনেভা একাডেমি স্কলারশিপ অন্যতম।

এসব বৃত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক পর্যন্ত অনুদান দিয়ে থাকে। এর মধ্যে পড়াশোনার খরচ ছাড়াও আবাসনসহ জীবনযাত্রার অন্য খরচও মিটে যায়।

সুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা
গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপটি শুধু স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির জন্য দেওয়া হয়, বিধায় আবেদনকারীদের কমপক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হয়। আবেদনকারীদের অবশ্যই সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র পেতে হয়। মূলত এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হয় যে তিনি শিক্ষার্থীর গবেষণার তত্ত্বাবধান করতে ইচ্ছুক। আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ একটি গবেষণা প্রস্তাবণা থাকতে হয়। এর ওপর নির্ভর করেই প্রফেসর শিক্ষার্থীর গবেষণার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এখানে একাডেমিক রেজাল্টও গুরুত্ব দেওয়া হয়। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার দেশটিতে এরকম আকর্ষণীয় স্কলারশিপ মূলত বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে। তাই যথাযথ মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমেই আবেদনকারীদের স্কলারশিপের জন্য নির্বাচন করা হয়। স্বভাবতই খুব ভালো সিজিপিও এক্ষেত্রে সবার আগে গুরুত্ব পায়।

গবেষণাটি চলবে ইংরেজিতে, বিধায় শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন দেখা হয়। পাশাপাশি তাঁর ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সনদ প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএসে কমপক্ষে ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর দরকার হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্কলারশিপের ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীর অনুরূপ যোগ্যতা চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে যেহেতু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষার্থীদের থেকে আবেদন নেওয়া হয়, সেহেতু স্নাতকোত্তর সনদপত্রটি সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালোভাবে যাচাই করে তবেই শিক্ষার্থীদের তাঁদের অধ্যয়নসম্পর্কিত পরবর্তী কার্যক্রমে যেতে অনুমতি দেয়।

স্কলারশিপের জন্য আবেদন
গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ ঘোষণার সময় এফসিএস (ফেডারেশন কমিশন ফর স্কলারশিপস)-এর ওয়েবসাইটে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলোর একটি প্যাকেজ দেওয়া থাকে। এই প্যাকেজ অনুসারে নিম্নলিখিত নথিগুলো প্রস্তুত করতে হবে—
১. শিক্ষার্থীর স্বহস্তে স্বাক্ষরসহ কম্পিউটারে টাইপ ও প্রিন্ট করা এফসিএস আবেদনপত্র
২. একাডেমিক প্রকাশনা ও অর্জনের তালিকাসহ একটি সম্পূর্ণ সিভি
৩. সর্বোচ্চ দুই পৃষ্ঠার একটি মোটিভেশন লেটার
৪. শিক্ষার্থীর স্বহস্তে স্বাক্ষরসহ সর্বোচ্চ পাঁচ পৃষ্ঠার একটি পরিপূর্ণ গবেষণা প্রস্তাবণা
৫. সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্রের অনুলিপি, যেখানে উল্লেখ থাকবে যে কেন তিনি শিক্ষার্থীর গবেষণা তত্ত্বাবধান করতে চাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে চিঠির সঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত সিভি সংযোজন করতে হবে
৬. এফসিএস রেকমেন্ডেশন ফরম ব্যবহার করে দুজন ভিন্ন অধ্যাপকের নিকট থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার
৭. সকল শিক্ষাগত সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্টের প্রত্যায়ন করা ইংরেজি ভাষায় অনুদিত ফটোকপি
৮. এফসিএস ফরম অনুযায়ী স্বাস্থ্য সনদপত্র
৯. শিক্ষার্থীর পাসপোর্টের ফটোকপি সাইজ ছবি।

বেসরকারি স্কলারশিপগুলোর ক্ষেত্রেও এ ধরনের নথি কম-বেশি প্রয়োজন হয়। তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের ধারা ভিন্ন। তাই সেগুলোর নিজ নিজ ওয়েবসাইট থেকে খুঁটিনাটি ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার। তা ছাড়া প্রতিটি সুইস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই খুব সহজেই অনলাইন আবেদন করা যায়।

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের জন্য মূলত তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের যাচাই করা হয়। সেগুলো হলো প্রার্থীর প্রোফাইল, গবেষণা প্রকল্প বা শৈল্পিক কাজের গুণমান এবং গবেষণাটির ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। তাই আবেদনের মুহূর্তে সিভি ও গবেষণা প্রস্তাবণায় এই বিষয়গুলোকে সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা আব্যশক।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Last Post