Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

অবৈধপথে আমেরিকা পাড়ি দেয়ার আগে ভাবুন দয়া করে ! এই আমেরিকা সেই আমেরিকা নয় (ভিডিও)








বাংলাদেশ থেকে আমেরিকাকে মনে হতো চাঁদের দেশ। সেখানে কোনো চাঁদের বুড়ি আপন মনে চরকা কাটছে আর সেখানকার মানুষ লাল-নীল ফিতা উড়িয়ে রঙিন, ঝলমলে জীবনের ঝরনাধারায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে। আহা! সেই দেশটা দেখতে কেমন? সেখানে যদি একবারের জন্য হলেও যাওয়া যেত? কিন্তু তা-ও কী কখনো সম্ভব?



আমেরিকার জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে দেশটায় আসি। দেখা যায় বেশির ভাগ সময়ই আমাদের লালিত স্বপ্ন ভেঙে যায়। আমাদের স্বপ্নে দেখা সেই আমেরিকাকে বাস্তবে আর যেন কিছুতেই খুঁজে পাই না। তবে এ কথা সত্য যে আমেরিকা হলো স্বপ্নপূরণের দেশ। যে স্বপ্নটা বুকের ভেতর ঘুমিয়ে আছে, তাকে ঠিক জাগিয়ে তুলতে পারে আমেরিকার জাদুর কাঠির ছোঁয়া।



ফজলুল হক আমেরিকায় এসেছিলেন ওপি ওয়ান ভিসায় সেই নব্বইয়ের দশকে। তখন ওপি ওয়ান লটারির জন্য আবেদন করতে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশে ফজলুল হক পুরান ঢাকায় ছোট্ট একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। তাঁর মূল কাজ ছিল লুঙ্গি সেলাই করা। প্রতিটি লুঙ্গি সেলাই করে তিনি সেই সময় পেতেন পাঁচ টাকা। পড়াশোনা তাঁর জানা ছিল না। নিজের নামটা সই করতে পারতেন। এ পর্যন্তই তাঁর দৌড়। হঠাৎ করে ওপি ওয়ান পেয়ে গেলেন। তখনো ফজলুল হক জানতেন না যে আমেরিকা কী জিনিস। শুধু এটুকুই তাঁর জানা ছিল যে আমেরিকা মানেই বিস্তর টাকাপয়সার দেশ, যেখানে টাকা শুধু আকাশে উড়ে বেড়ায়। দিনক্ষণ ঠিক করে একদিন তিনি নিউইয়র্কে চলে এলেন। শুরু হয় তাঁর নতুন জীবন বা বলা যায় স্বপ্নের দেশে স্বপ্নপূরণের নতুন জীবন।



একটি বাঙালি মালিকানাধীন গ্রোসারিতে কাজ করেন। ইংরেজির কিছু টুকটাক শব্দ তত দিনে তাঁর ঝুলিতে যোগ হয়েছে। বিশেষ করে তিনি তো বাংলা বা ইংরেজি কিছুই পড়তে পারেন না। তাহলে? কীভাবে পাতাল রেলের স্টেশনগুলোর নাম মনে রাখেন? কীভাবে তিনি জানেন যে এই রাস্তাটি বা অ্যাভিনিউর নাম হলো এই? প্রশ্ন করতেই হেসে দিলেন।



তারপর যে তথ্যটি দিলেন তা হলো মোটামুটি এই রকম। বাসা থেকে প্রতিদিন কাজ খোঁজার জন্য ফজলুল হক ম্যানহাটনের ব্যস্ত শহরে ধরনা দিতেন। ‘ইয়েস’, ‘নো’, ‘থ্যাংকিউ’ শব্দগুলো আগে থেকেই মুখস্থ করেছিলেন। পকেটে ভর্তি থাকত প্রচুর চক বা রংপেনসিল। পাতাল রেলস্টেশনে তিনি চক দিয়ে বিশেষ বিশেষ দাগ দিয়ে চিহ্ন করে রাখতেন, যাতে সঠিকভাবে স্টেশনটি শনাক্ত করতে পারেন। এবং হারিয়ে না যান। এভাবেই ধীরে ধীরে পাতাল রেলস্টেশনগুলো তিনি দ্রুত চিনে ফেলেছিলেন। একদিন কাজ খুঁজতে খুঁজতে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ পেয়ে যান।



তাঁর ছিল গায়ে খাটার কাজ। কিন্তু তাতে কী? বাংলাদেশে লুঙ্গি সেলাইয়ের চেয়ে ঢের ভালো। প্রতি সপ্তাহে তাঁর বেতন ছিল ১৫০ ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশের টাকায় সেই সময় প্রায় ৮ হাজার টাকা। ধীরে ধীরে ফজলুল হক টাকা জমাতে শুরু করেন। দেশে মুন্সিগঞ্জের ভাঙা বাড়িটা ধীরে ধীরে বদলে যায় এবং সেখানে একটি ছোটখাটো দালান ওঠে। বড় ভাইও দরজির কাজ করতেন। এবার বড় ভাইকে একটি কাপড়ের দোকান কিনে দিলেন।

পকেটে টাকা বাসা বাঁধলে যা হয়। ফজলুল হকের মনে ধীরে ধীরে ভালোবাসার রং লাগে। তিনি এবার বিয়ে করতে চান। একদিন বাংলাদেশে গিয়ে তাঁর গ্রামেরই একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। মেয়েটি সেখানকার স্থানীয় একটি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল। নিরক্ষর হলে কী হবে, তত দিনে ফজলুল হক আমেরিকার নাগরিক।



অতএব, কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বিয়ে করা তাঁর জন্য কঠিন কিছু ছিল না। বিয়ে করে কিছুদিন পর আবার নিউইয়র্কে চলে এলেন। এবার নতুন সমস্যা দেখা দিল। নতুন বিয়ে করা বউকে চিঠি লিখবেন কীভাবে? বউ প্রতি সপ্তাহেই প্রাণভরে মনের সুখে চিঠি লিখেই চলেছেন। কিন্তু ফজলুল হক তো আর লিখতে-পড়তে জানেন না। এবার দ্বারস্থ হলেন তাঁর শিক্ষিত এক রুমমেটের। বউ আমেরিকায় না আসা পর্যন্ত সেই দীর্ঘ সময় ওই রুমমেটই ফজলুল হক হয়ে চিঠি লিখে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করছিলেন। বলা বাহুল্য, সেই রুমমেট ছিলাম আমি নিজেই।



এই তো সেদিন। সেই ফজলুল হকের সঙ্গে আমার আবার খুব কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে গেল। আমি ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ারের আশপাশে চোখ ভোলানো ঝকমকে দোকানগুলোর ক্রিসমাস উপলক্ষে ‘উইনডো ডেকোরেশন’ উপভোগ করছি। হঠাৎ পেছন থেকে পরিচিত একটা বাঙালি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।

দেখি এক বাদাম বিক্রেতা, যাঁর দোকানে বড় করে লেখা ‘Nuts for nuts’, আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কী অবাক কাণ্ড! ফজলু ভাই না? তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। দেখতে পেলাম ওনার বাদামের দোকানটিতে রমরমা ব্যবসা। বিভিন্ন রকম বাদাম বিক্রি করেন। কথায় কথায় তিনি জানালেন, এমন আরও চারটি বাদামের দোকান তাঁর রয়েছে। অন্যগুলো ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এটি তিনি নিজেই চালান।



নিউইয়র্কে একটা বাড়ি কিনেছেন। দুটি মেয়ে আছে। তাঁরাও নাকি বেশ ভালো কোনো স্কুলে পড়ছে। সাধারণত বাঙালিদের যা হয়, ঝটপট তিনি আমার খেদমতে লেগে গেলেন। বিভিন্ন রকম স্বাদের বাদাম খাওয়ালেন এবং বাসায় নিয়ে আসার জন্য একটি ছোট্ট ব্যাগও দিয়ে দিলেন। আমার চোখের সামনে বারবার তখন সেই ফজলুল হকের চেহারাই ভেসে আসছিল। স্বপ্নও তাহলে সফল হতে পারে?



শেষ কথা হলো সেই একটাই। স্বপ্নের দেশ আমেরিকা। আমেরিকা হলো স্বপ্নপূরণের দেশ। স্বপ্ন আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি। স্বপ্ন আছে বলেই আমরা হাজার মাইল পথ পাড়ি দিতে পারি। আমেরিকার বাঙালি প্রবাসীরাও তাঁদের সেই স্বপ্নটাকে ছোট্ট বুকে আগলে ধরে বেঁচে থাকেন। প্রবাসী মানেই যেন স্বপ্নচারী কিছু অভিযাত্রিক, যাঁরা অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্যই বিশেষ অভিযানে নাম লিখিয়েছেন। অভিযাত্রীরা স্বপ্নপূরণের জন্য ঈপ্সিত ঠিকানার খোঁজে নিয়ত বন্দর থেকে বন্দরে ঘুরে বেড়ায়।
ভিডিওটি দেখতে চাইলে এখানেই ক্লিক করুন


You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.