Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

একটি লেপের জন্য রাস্তায় ঘোরেন ১৯৫২ সালের ম্যাট্রিক পাস খোদেজা


‘আমারে একটা লেপ দেবে বাবা। আমারে একটা লেপ দিও আর কিছু চাই না।’

পরক্ষণেই বিড় বিড় করে বললেন, ‘আমার খাওয়ারই কষ্ট, ওষুধ কেনার টাকা নেই। মাসে ৫শ টাকার ওষুধ কিনেও হয় না। কিন্তু টাকার অভাবে আর কিনতে পারি না। আমার চোখে সমস্যা, কানে সমস্যা, পেটে সমস্যা। পেটের পীড়ায় চিকিৎসা ছাড়া তিন দিন জ্ঞানহারা ছিলাম। আমার সাহায্য করার মতো কোনো স্বজন নেই।’

বলতে থাকেন, ‘স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর একমাত্র মেয়েকে সম্বল করে বেঁচে আছি। ২৫- ২৬ বছর প্রাইভেট পড়িয়ে মা- মেয়ে জীবিকা চালিয়েছি। এখন আমি অক্ষম, মেয়ে অকাল বিধবা। তাই লোকজনের সাহায্য নিয়ে জীবন চালাই।’

কথাগুলো বলছিলেন খোদেজা বেওয়া। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গাঙ্গহাটি গ্রামের বাসিন্দা খোদেজা বেওয়া গাঙ্গহাটি গ্রামের মৃত শাহাদত আলি খাঁনের মেয়ে।

তিনি ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক (এখন এসএসসি) পাস করেন কৃতিত্বের সঙ্গে। শৈশবে পাবনার বেড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর-ঝাউকাদা গ্রামে মামাবাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকে পড়াশোনা করতেন। নাটিয়াবাড়ী ধোবাকোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আ. রহমান ওরফে ন্যাকা মাস্টার। সেই বিদ্যালয় থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন। ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী হিসেবে তার সুনাম ছিল।

ওই সময়ে ম্যাট্রিক পাস করলে তো চাকরির অভাব ছিল না। তাহলে চাকরি করলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বনেদি ঘরের মেয়েদের দিয়ে চাকরি করানো হতো না। তাই তারও চাকরি করা হয়নি।

এরপর বিয়ে হয়ে যায় বাবার বাড়ির গ্রামের আ. সাত্তার মিয়ার সাথে। তাদের সংসারে একটি মেয়েও হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি আরও ২-৩টা বিয়ে করার পর তাকে তালাক দিয়ে তাড়িয়ে দেন।

এরপর শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ। তিনি দুই বেলা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে পেটের ভাত জোগাড় করতেন। শুধু বাংলা-ইংরেজি নয়, তিনি আরবি শিক্ষাও দিয়েছেন বহু শিশুদের।

এখন তিনি বয়সের ভারে ন্যূব্জ। বয়স কত জানতে চাইলে বললেন, সার্টিফিকেট অনুযায়ী জন্মসাল ১৯৩৭। সে হিসেবে ৮৪ বছর। এই বয়সেও তিনি নামাজ-রোজা করেন। পবিত্র কোরআন পাঠ করেন।

পবিত্র কোরআন শরীফ, তাফসিরুল কোরআন, গঞ্জল আরশ, খায়রুল হাশর, বহু নবীর জীবনী রয়েছে তার কাছে। সেগুলো তিনি পড়েন। তবে চোখে ভালো দেখেন না বলে সমস্যা হয়। আর রাতে তো চোখেই দেখেন না বলে জানালেন। চশমা দূরের কথা চোখের কোনো চিকিৎসাও করাতে পারেননি।

বললেন, কে আমাকে ডাক্তার দেখাবে? কে আমাকে চশমা বা চোখের ড্রপ কিনে দেবে? আমার তো কেউ নাই রে বাবা!

বার্ধক্যজনিত নানা অসুখ বিসুখ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। বললেন, চোখে ঠিকমতো দেখতে পারেন না, ঠিকমতো শুনতে পারেন না, মাথা যন্ত্রণা করে, তার মুখ-গলা শুষ্ক কাঠ যেন।

অনেক আগে এক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ওষুধ কিনতেই তার সাধ্যে কুলায় না। মাসে ৫শ টাকার ওষুধই জোগাড় করতে পারেন না। তার খাবারের কষ্ট প্রতিদিনের। খাবারের সংস্থান করতে যেখানে যুদ্ধ করতে হয়, সেখানে ভালো চিকিৎসা করানোর কথা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না।

খোদেজা বেগম দুঃখ করে বললেন- অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়! একমাত্র অবলম্বন মেয়েটির বিয়ে দিয়েছিলেন বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে। কিন্তু কয়েক বছর আগে জামাই সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে মারা যান। তার মেয়ে হয়ে যায় বিধবা। তিনি অল্প বয়সে স্বামী পরিত্যক্তা আর তার মেয়ে অল্প বয়সে হয়েছেন বিধবা।

একটি বিধবা কার্ড রয়েছে তার। সেটার টাকা নিয়মিত পাওয়া যায় না আর পেলেও ওই টাকা তো তার ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। আবার কার্ড ঠিক করার জন্য মাঝে মধ্যে অফিসে অফিসে ঘুরতেও হয়।

তার থাকার জন্য একটি ঘর পাওয়ার কথাও জানালেন। বড় ঘর পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পেয়েছেন ৭ হাত দৈর্ঘ্যের একটি ঘর। সেই ঘরই তার এখন সম্বল।

এই শীতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে বললেন, বাবারে আমার একটা লেপ দিতে পার? আমার একটা লেপ দিও। ….আর কিছু চাই না।

সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামে বাজারের চিকিৎসক গোলাম আযমের সঙ্গে ওই বৃদ্ধার বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, তার বাড়ির কিছুটা দূরে ভদ্রমহিলা থাকেন। তিনি দীর্ঘদিন প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তার অসময়ে দেখার মতো কেউ নেই। এখন দু’মুঠো ভাতের জন্য পরের দুয়ারে হাত পাতেন।

পাবনার সিনিয়র সাংবাদিক আখতারুজ্জামান আখতার জানান, তিনিও নাটিয়াবাড়ি ধোবাকোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছিলেন। ওই বৃদ্ধা ঠিকই বলেছেন যে, ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘ বছর প্রধান শিক্ষক ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আ. রহমান স্যার। এ বিদ্যালয় থেকে ৫২ সালের এসএসসি পাস করা অনেকেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েছিলেন। এই ভদ্র মহিলার সমবয়সী অনেকে আজ হয়ত বেঁচেও নেই। তার এমন দুর্দিন খুবই দুঃখজনক।

প্রবীণ এই বৃদ্ধার জন্য কেউ মানবিকতার হাত বাড়াতে ইচ্ছুক হলে জাগো নিউজের পাবনা প্রতিনিধি আমিন ইসলামের মুঠোফোন ০১৭১৫-৫৭৬৭৬২ অথবা ০১৮১৮- ৪৮৩১৩৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.