Beanibazarview24.com
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সামনে রেখে শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর জি ও থ্রি জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে মধ্যরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলোকে টু জি ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়।
সারা দেশে ২৯৯ আসনে রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটের দিন পেরিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে না। ভোটের দিন শেষে মধ্যরাত (৩১ ডিসেম্বর প্রথম প্রহর-০০.০১ আওয়ার) পর্যন্ত এই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখতে বলেছে তারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেটে ফোর জি ও থ্রি জি সেবা বন্ধ রাখা হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় খোলার পর শনিবার দুপুর পর্যন্ত তা চলছিল।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাবে গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ১৮ লাখের বেশি; এর মধ্যে ৮ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন।
একটি মোবাইল অপারেটরের একজন কর্মকর্তা জানান, বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ করছেন এবং রাত ১১টার পর থেকে টু জি ইন্টারনেটও বন্ধ রয়েছে।
এর ফলে শনিবার রাত ১১টার পর থেকে মোবাইল গ্রাহকরা সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। এর আগে শনিবার বিকাল ৩টার পর থেকে ফোর জির ভয়েস ও ডেটা এবং থ্রি জির ডেটা সেবা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলে বিটিআরসি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হককে মোবাইলে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ইন্টারনেট বন্ধের কারণ ব্যাখ্যায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) জাকির হোসেন খান বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ও গুজব প্রতিরোধে’ সরকারের নির্দেশনায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এখনও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক।
তিনি বলেন, আমরা (আইএসপিএবি) ইন্টারনেটের বিষয়ে কোনও ধরনের নির্দেশনা এখনও পাইনি। সেহেতু ধরে নিতে পারি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদেরটা (ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট) বন্ধ না হওয়াই উচিত। বন্ধ হলে ব্যবসায়িক এবং অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা খোলা রাখলে সরকারের কোনও ক্ষতি হবে না বলে আমরা মনে করি।
প্রসঙ্গত, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে গত ১৩ ডিসেম্বর এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ইন্টারনেটের গতি কমানোর প্রস্তাবনা দেয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
ওই বৈঠকে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সমন্বয়সভায় এই পরামর্শ দেয়া হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। এতে সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সব রিটার্নিং অফিসার, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেন, নির্বাচনে মোবাইল ব্যাংকিং ও বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়। এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন।
ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার ঠেকাতে তিনি নির্বাচনের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে নামিয়ে টুজি করা এবং ভোটকেন্দ্রে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সরাসরি সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দেন।
র্যাবের ডিজি বলেন, ২০১৪ সালের মতো কোনো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। সাইবার ওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত করে গুজব ছড়িয়ে যাতে নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করতে না পারে, সেদিকে তাঁরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
র্যাব বিটিআরসির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনিও ভোটের সময়ে তিন দিনের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে নামিয়ে টুজিতে আনার প্রস্তাব করেন।
নির্বাচনে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে টুজিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন আনসারের মহাপরিচালকও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে তিন দফায় সিদ্ধান্ত নিয়ে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.