Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

জীবনের শেষ ইচ্ছায় দেশের মাটির স্পর্শ পেলেন ক্যান্সার রোগী রানা

জীবনের শেষ ইচ্ছায় দেশের মাটির স্পর্শ পেলেন ক্যান্সার রোগী রানা

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে হু হু করে বাড়ছে মানুষের মৃ’ত্যুর সংখ্যা। কিন্তু এই কঠিন সময়ে করোনায় নয়, ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃ’ত্যুর প্রহর গুনছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী জাহাজ শ্রমিক সিকদার রানা। নিশ্চিত মৃ’ত্যু জেনে দেশের মাটি স্পর্শ ও পরিবারের সঙ্গে জীবনের শেষ সময় কাটানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি। মৃ’ত্যু পথযাত্রী রানার দেশের মাটি স্পর্শ করার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। এবার পরিবারের সঙ্গে কয়েকটি দিন কাটানোর অপেক্ষায় তিনি।

শুক্রবার রাত ১১টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে পৌঁছান নিরাময় অযোগ্য পাকস্থলীর ক্যান্সার আক্রান্ত প্রবাসী রানা। তিনি গত এপ্রিল থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ফ্লাইট অবতরণ করে রানাকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারে (ডিপার্টমেন্ট অব প্যালিয়েটিভ মেডিসিন) আনা হয়।

সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মেডিকেল অফিসার ডা. রুবাইয়াৎ রহমান বলেন, আগামী তিন থেকে চারদিনের জন্য রানাকে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর নারায়ণগঞ্জে থাকা তার পরিবারের কাছে পাঠানো হবে।

ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুরের ডিভিশন অব সাপোর্টিভ অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সহযোগী অধ্যাপক সিনথিয়া গোর। এ চিকিৎসকের কাছে নিজের ক্যান্সারের কথা জানতে পারেন রানা। পাকস্থলীর ক্যান্সারটি লাস্ট স্টেজে ধরা পড়ায় মাত্র কয়েক মাস (সর্বোচ্চ) বাঁচার সম্ভাবনা জানতে পারেন তিনি। কারণ লাস্ট স্টেজে এসে ক্যান্সার মুক্ত হওয়ার প্রায় অনিশ্চিত। তাই মৃ’ত্যুর আগে দেশের মাটিতে ফেরা ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন রানা।

ডা. সিনথিয়া গোর কাছে প্রবাসী রানা জানান, জীবনের শেষ কয়েকটি দিন পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে চান। নিজ দেশে পরিবারের সামনেই মৃ’ত্যুর ইচ্ছা জানান তিনি।

করোনাকালে যেভাবে দেশে ফিরলেন প্রবাসী রানা

সারাবিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বৈশ্বিক সব বিমানের ফ্লাইট বাতিল করেছে, তখন একজন প্রবাসী রোগীকে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে পাঠানো দুঃসাধ্য ছিল। এ জন্য দরকার ছিল প্রচুর টাকার।

ঠিক ওই সময়ে রানার শেষ ইচ্ছে পূরণে এগিয়ে আসেন ডা. সিনথিয়া গো। তার ‘হেল্প সিকদার, ফুলফিল হিজ লাস্ট উইশ-হেল্প সেন্ড ইন হোম’ ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে মানবিক দাতব্য সংস্থা মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স সেন্টার (এমডব্লিউসি)।

দ্য মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড (এমডব্লিউএএফ) বরাবরের মতো সিঙ্গাপুরে দুর্দশাগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী অভিবাসী শ্রমিকদের মানবিক ও জরুরি সহায়তা তহবিল গঠনে করে ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করে (ওয়েব লিংক:www.giving.sg)।

শুধু এই দুই প্রতিষ্ঠান নয়, কঠিন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটি, বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুরসহ অনেকে। এতে প্রবাসী রানার একটি শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

ডা. রুবাইয়াৎ রহমান বলেন, নিরাময়-অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষ ও তার পরিবার নিদারুণ কষ্টকর পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়ে যায়। অনেকে জীবনের আশা ছাড়ার পাশাপাশি অবহেলার শিকারও হন। তবে জীবনের শেষ সময়ে রোগীর দুঃখ কষ্ট লাগবের চেষ্টা পরিবারকে বেশি করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিরাময় অযোগ্য ও শয্যাশায়ী রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করছে। সংস্থাটি সপ্তাহে পাঁচদিন চিকিৎসক, নার্স, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারীর (পিসিএ) সম্মিলিত একটি প্রশিক্ষত দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রোগীদের বাসায় গিয়ে সেবা দিয়ে আসছেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া এ মহতী সেবা এ বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সংগঠন ও মানুষের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে আসছিল।

কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এ মহতী গৃহসেবা প্রকল্পকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কর্মকাণ্ডের আওতায় নিয়ে এসেছে। নিরাময় অযোগ্য রোগীদের দ্বারপ্রান্তে চিকিৎসা সেবা সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। যা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার ইতিহাসে বিএসএমএমইউ-এর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রসঙ্গে এ চিকিৎসক আরো বলেন, অসুস্থ ব্যক্তি যদি কোনো কারণে সেবা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে না পারেন, তবে রোগীর কাছে গিয়ে সেবা পৌঁছানো হবে। জীবনের প্রান্তিক মুহূর্তে অনেক রোগী তার নিজ বাসায় প্রিয়জনের মাঝে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন।

কিন্তু নানা কারণে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবা প্রয়োজন-এমন অনেক রোগীই হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। কখনো শয্যাশায়ী, কখনো বা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কেউ থাকে না। কখনো বা আর্থিক দুরবস্থা আবার কখনো হয়তো হাসপাতালের বিছানা দুষ্প্রাপ্যতা থাকে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.