Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

দালাল ছাড়া যেভাবে যাবেন ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে







উত্তর সাইপ্রাস হচ্ছে ইউরোপের দশম বৃহৎ দ্বীপ রাষ্ট্র। ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি এর অবস্থান। আগে পুরো সাইপ্রাসটাই একটা দেশ ছিল, আর তখন এটি গ্রিস সাইপ্রাস নামেও পরিচিত ছিল।

দেশটির মানচিত্র অনেকটা বিমানের মতো। দেশটির একটা অঞ্চলে তুরস্ক থেকে আসা মানুষগুলো দীর্ঘদিন যাবত এখানে বসবাস করতে করতে এক সময় তারা সেই অঞ্চলটি নিজেদের দেশ বলে দাবি শুরু করল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালে তুরস্ক সরকার ব্যাপক হামলা চালায় সাইপ্রাসের লোকজনের ওপর।


অবশেষে তারা সাইপ্রাস থেকে সেই অংশটি নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র বলে দখল করে নিল। এরপর থেকে ওই অংশটি আলাদা একটা রাষ্ট্র বলে বিশ্বের মানচিত্রে নর্থান সাইপ্রাস অথবা তুর্কি সাইপ্রাস নামে পরিচিতি হয়ে গেল।

যদিও বিশ্বের অনেকেই এখনও সাইপ্রাস নামে যে একটি রাষ্ট্র আছে, সেটাও জানে না। তার মধ্যে নর্থান সাইপ্রাস কিংবা তুর্কি সাইপ্রাস বললে অনেকের কাছে এইটা নতুন কোনো নাম মনে হয়।



১৯৭৪ সালে যখন তুরস্ক সাইপ্রাস থেকে সেই অংশটি কেড়ে নেয়,এরপর থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে সাইপ্রাস দীর্ঘদিন যাবত রাজনৈতিক আলোচনা শেষে গ্রিসের সহযোগিতায় ২০০৪ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে সাইপ্রাস ইউরোপিয়ান সাইপ্রাস নামে পরিচিত।

আর যে অংশটি তুরস্ক কেড়ে নেয়, সেটাকে তুরস্কের লোকেরা বলে তুর্কি সাইপ্রাস আর ইউরোপিয়ান সাইপ্রাসের লোকেরা বলে এটা নর্থান সাইপ্রাস। তুর্কি সাইপ্রাসের আলাদা কোনো সরকার নেই। তুরস্ক থেকে এই দেশটি পরিচালনা করা হয়।


এই দেশের সবকিছু ইউরোপিয়ান সাইপ্রাস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিশেষ করে এখানে কাজের মান এবং মুদ্রার মান হচ্ছে ইউরোপ সাইপ্রাস থেকে অনেক নিচে।

তুর্কি সাইপ্রাসের মুদ্রার নাম হচ্ছে লিরা, প্রায় সাড়ে তিন লিরাতে এক ইউরো হয়। অর্থাৎ এক লিরা বাংলাদেশের প্রায় ৩৩ টাকার সমান। আর ইউরোপ সাইপ্রাসে যে কাজের বেতন মাসে আটশ’ কিংবা এক হাজার ইউরো, সেই একই কাজের বেতন তুর্কি সাইপ্রাসে অর্ধেক। কিন্তু খরচের ক্ষেত্রে ইউরোপ সাইপ্রাস এবং তুর্কি সাইপ্রাস প্রায় একই।





তুর্কি সাইপ্রাসে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে নিয়ে বলি। এখানে সাধারণত দুই ধরনের ভিসায় বাংলাদেশিরা আসেন- স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা।
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে কলেজে প্রথমে প্রায় ৪ হাজার ২০০ ইউরো দিতে হয় এবং এরপর বিমান ভাড়া। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা লাগে স্টুডেন্ট ভিসায় তুর্কি সাইপ্রাসে আসতে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কোনো কোনো দালালেরা সাত-আট লক্ষ টাকাও নিয়ে থাকেন একেকটা ভিসা করাতে। এমনকি ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে এমন রেকর্ড রয়েছে।

আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি- বাংলাদেশ থেকে যখন কেউ তুর্কি সাইপ্রাসে আসে তখন কলেজের টিউশন ফি বাদেও বাংলাদেশ থেকে এয়ারপোর্ট চুক্তি করে আসা লাগে।

বাংলাদেশ থেকে দালালেরা শিক্ষার্থীদেরকে তুর্কি সাইপ্রাসে মাসে ৫০ হাজার, এক লক্ষ টাকা বেতনের চাকরির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তুর্কি সাইপ্রাসে নিয়ে আসছে। অথচ দালালরা নিজেরাই চাকরি করে বিভিন্ন ক্ষেত-খামারে, রেস্টুরেন্টে।


বাংলাদেশে অবস্থানরত কিছু দালাল এ ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অথচ দালালগুলো নিজেরাও জানে না যে তুর্কি সাইপ্রাসে কাজের অবস্থা কেমন!

এই দেশে সহজে কাজ পাওয়া যায় না। স্টুডেন্ট ভিসায় এসে কাজ জোগাড় করা অনেক কষ্টের। যদিও কেউ কোনোমতে চাকরি একটা পায় কোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা ক্ষেত-খামারে, তাহলে মাসে বেতন চারশ’ থেকে পাঁচশ’ ইউরো।

এই আয়ে বাৎসরিক থাকা-খাওয়া, কলেজের টিউশন ফি বাদ দিলে অবশিষ্ট মাত্র এক থেকে দেড় হাজার ইউরো দেশে পাঠানো যায়, যা বাংলাদেশি টাকায় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা মাত্র। তাও যদি সারা বছর নিয়মিত কাজ থাকে। কিন্তু সারা বছর নিয়মিত কাজ থাকে এমন নজির নেই।


আর এখানে এসে তারা এমন একটা অবস্থায় পড়ে যায় যে না পারে এখান থেকে অন্য দেশে চলে যেতে, না পারে ভিসা নিয়ে এখানে থাকতে। অবশেষে অবৈধ হয়ে কেউ কেউ দুই- চার বছর থেকে দেশে চলে যায়। আবার কেউ কেউ রাতের আঁধারে অজানা ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে সাইপ্রাসে ঢুকে পড়ে।

এই হল তুর্কি সাইপ্রাসে আসা শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা। তাহলে দালালদের দেখানো সেই লোভনীয় রঙিন দুনিয়ার সাথে বাস্তবতায় কতোটুকু মিল পেলেন?


ওয়ার্ক পারমিট ভিসা- এই ভিসায় এতো বেশি টাকা লাগে না। মালিক কর্তৃপক্ষ মাত্র এক হাজার ইউরো নেয়, যা বাংলাদেশি টাকায় এক লক্ষ টাকার মতো। এই টাকাটা মালিককে তুর্কি লেবার মিনিস্ট্রিতে জমা করতে হয় উক্ত ব্যক্তির নামে, যিনি সেখানে আসবেন। তারপর তুর্কি সরকার ভিসা দেয়। আর জমাকৃত ওই টাকা ব্যক্তিকে ফেরত দিয়ে দেয় যেদিন সে একেবারে দেশ ত্যাগ করে চলে যাবে। কিন্তু এই টাকা আদৌ কেউ ফেরত পেয়েছে কিনা সন্দেহ!
সে যাই হোক, এক লক্ষ টাকা লাগে ভিসার আগে এবং ভিসার পরে লাগে শুধুমাত্র বিমান ভাড়া। যা সব মিলিয়ে বাংলাদেশি টাকায় মাত্র দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু এই অর্থের পরিমাণটা আসলে কতোতে গিয়ে দাঁড়ায় একজন লোকের কাছে?


উপরেই আলোচনা করলাম, প্রায় আরও এক লক্ষ টাকা চলে যায় আবার এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট করতে। তারপর পরিমাণটা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় আড়াই লাখের উপরে। এরপর দালাল যা নিতে পারে। মোটকথা ছয় থেকে দশ লাখ টাকার নিচে কোনো দালাল আজ পর্যন্ত তুর্কি সাইপ্রাসে কাউকে আনেনি।

এইবার বলি, আসার পর ভিসাগুলো কেমন? কাজ কীসের? তা জেনে নেই।

তুর্কি সাইপ্রাসে সাধারণত দুই ধরনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হয়, রেস্টুরেন্টের ভিসা এবং ক্ষেত-খামারের ভিসা। রেস্টুরেন্টের ভিসাগুলোতে শর্ত থাকে প্রায় ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে ।বেতন মাত্র চারশ’ বা পাঁচশ’ ইউরো। মানে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু এই বেতন কাজ অনুযায়ী একেবারেই নগণ্য।


তীব্র শীত ও গরমের মধ্যেও অনেক কষ্টে ভারী কাজ করতে হয়। কাজের মধ্যে কোনো বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ দেয় না তুরস্কের মালিকগুলো। তারা শ্রমিকদের এমনভাবে খাটায় যা আরবের শেখদেরকেও হার মানায়।

অবশেষে এমন পরিশ্রমের কাজ করতে না পেরে অনেকেই আসার কিছুদিন পর পরেই আবার দেশে ফিরে যায়। মোটকথা তুর্কি সাইপ্রাস এসে সফল হয়েছে এমন বাংলাদেশি একেবারে হাতেগোণা। নেই বললেই চলে।

শুধু তাই নয়, এশিয়ানদের মধ্যে শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান- এসব দেশের লোকও অনেক আছে, কিন্তু তারাও একই পথের ভুক্তভোগী।

আমি ইউরোপিয়ান সাইপ্রাস থাকি। প্রতি বছর তিন-চারবার আমি তুর্কি সাইপ্রাসে যাই। কখনও বাংলাদেশি পরিচিত কেউ থাকলে তাদের সাথে দেখা করতে যাই। আবার গ্রীষ্মকালে যাই বিচে ঘুরতে। তখন বাংলাদেশিদের এসব চিত্রগুলো একেবারে নিজের চোখেই দেখি।


আরেকটা তথ্য জানিয়ে রাখি- যারা ইউরোপিয়ান সাইপ্রাসে থাকে, ভিসা আছে, তারা যখন তখন তুর্কি সাইপ্রাসে আনায়াসে যাওয়া-আসা করতে পারে। কিন্তু তুর্কি সাইপ্রাসে যারা থাকে, তাদের ভিসা থাকলেও ইউরোপিয়ান সাইপ্রাসে ঢোকার অনুমতি নেই।


সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে যারাই তুর্কি সাইপ্রাসে আসার জন্য দালালদের এসব মিথ্যা লোভনীয় ফাঁদে পা দেওয়ার কথা ভাবছেন, দয়া করে ভেবেচিন্তেই আসুন। নাহলে বাকিদের মতো আপনার পরিণতিও একই হতে পারে। আবার অনেক দালাল আছে, তারা ইউরোপ সাইপ্রাসে আনার কথা বলে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে আসছে তুর্কি সাইপ্রাসে। সাবধান থাকুন।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি





You might also like

Comments are closed.