Beanibazarview24.com
ফেনীর সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাড়িতে দাদির কবরের পাশে নুসরাত জাহান রাফির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা বেজে ৫ মিনিট। সোনাগাজীর চর চান্দিয়ায় নিজ বাড়িতে প্রবেশ করে নুসরাত জাহান রাফির মরদেহ। সঙ্গে সঙ্গে ভিড় জমান অপেক্ষারত এলাকাবাসী ও স্বজনরা। আর এ সময় উৎসুক জনতার সেলফি আর ফেসবুক লাইভের হিড়িক বেড়ে যায়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকবার লাঠিপেটা করলে তারা সরতে যেন নারাজ। জানাজার নামাজের জন্য মরদেহ রাখা হলে সেখানেও সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার নুসরাতকে এক পলক দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে পুরো এলাকাজুড়ে। রাস্তা ঘাট কোথাও দাড়াবার জায়গা নেই। এ সময় সেলফি নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষদের সরিয়ে দিলে নুসরাতের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে কেন্দ্র করে ফের জড়ো হয় অনেকেই।
এদিকে নুসরাতের মরদেহ তার বাড়িতে মিনিট দশেক রাখার পর জানাজার নামাজের জন্য সোনাগাজী পৌরসভা বাজারস্থ সাবের স্কুলের মাঠে নেওয়া হয়। সেখানে বিকেল ৫টা ৫৩ মিনিটে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাজার থেকে নুসরাতের বাড়ি দুই কিলোমিটার দূরত্ব হলেও মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের পেছন পেছন মানুষ জানাজাস্থলে যান। কানায় কানায় পূর্ণ হয় পুরো স্কুল মাঠ।
জানাজার নামাযে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন নুসরাতের বাবা মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা কেএম মুসা। জানাজা নামাজ পড়ানোর সময় তিনি বেশ কয়েকবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানাজা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজার আগে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র এড. রফিকুল ইসলাম খোকন বক্তব্য রাখেন।
আরো বক্তব্য রাখেন ফেনী ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান, পুলিশ সুপার এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বিকম, সোনাগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান জেড. এম কামরুল আনাম, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ, নিহত নুসরাতের বাবা একেএম মুসা ও বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি। পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন।
প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিল। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে এর আগেও ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা (নম্বর ১০) দায়ের করেন।
আসামিদের মধ্যে পলাতক রয়েছে— সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলম, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার অন্যতম সহযোগী নূরউদ্দিন, ওই মাদ্রাসার ছাত্র সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হাসান ও আব্দুল কাদের।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.