Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক মায়ের খোলা চিঠি







মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনার কাছে আমার এই খোলা চিঠি পৌঁছাবে কিনা জানি না। আমার পরিচয় , আমি একজন সাধারণ নিরপেক্ষ নাগরিক, একজন নারী , সর্বাপরি একজন মা। এই চিঠি টা লিখতে চেয়েছিলাম অনেক আগে থেকে কিন্তু লেখা হয়নি। আজ বসেছি লিখতে। কারন আজ বিষন্ন ভারাক্রান্ত মন নিয়ে লিখছি, আমার কষ্ট গুলো আপনাকে শেয়ার করার জন্য।



সেই ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি আমাদের পরিবারে ভাইবোনদের, আত্মীয় স্বজনদের রাজনৈতিক যে কোনো আলোচনায় আপনাকে নিয়ে অনেক গল্প করতে শুনেছি , এমনো দেখেছি পক্ষ বিপক্ষ আলোচনায় কোনো কথা যদি আপনার বিরুদ্ধে যেত দেখতাম আমার ভাইদের করুন চেহারা।আপনাকে উনারা শুধু একজন নেত্রী হিসেবে দেখেনি ।দেখেছি ,আমার পরিবার -আত্মীয় স্বজনদের চোখে আপনি একজন মা, বড় বোন । যার স্নেহে তাদের রাজনৈতিক পথ চলা । সবচেয়ে বড় পরিচয় আমাদের বঙ্গঁবন্ধুর সাহসী কন্যা।যার হতে সমর্পন করা হয়েছে এই দেশের লাল সবুজের পতাকা। সেই থেকে আপনার প্রতি আমার ভালবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ।



আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি পরিবারে বড় হলেও রাজনৈতিক সম্পর্কে আমার ধারনা বা আগ্রহ ছিল না তেমন , তবে রাজনৈতিক আলোচনা গুলো উপভোগ করতাম।আজ আমি একজন মা হয়ে আরেকজন মায়ের কাছে আবেদন নিয়ে এসেছি, জানতে চাচ্ছি : আর কতো চোখের পানি ফেললে আমরা শান্তির ঘুম দিতে পারব। আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবার , তাদের মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাল , ডাল আর নুনের হিসেব করতে করতে চলে যায় , বিনোদন বললে মাসে একবার ভালো রান্না কিংবা সন্তানদের সাথে একটু পার্কে ঘুরা, তবে সব মাসে তা সম্ভব হয়ে উঠে না।
প্রত্যেক মাসে টেক্স কিন্তু দিয়ে দেয়। খায় আর না খায় প্রত্যেক মাসে স্কুল , শিক্ষকের বেতন , ঘর ভাড়া, পানির বিল, বিদুৎ বিল সব পরিশোধ করতে হয়। কারন আমি আমার দেশে ফ্রি বসবাস করি না। তাহলে আমার দেশের নাগরিক হিসেবে সকল সুবিধা ভোগ করার অধিকার আমার আছে। সরকারের তহবিল চলে এই সম্মলিত নাগরিকের ভ্যাট দিয়ে। আমি নাগরিক হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় অধিকার হলো নিরাপত্তা। যেটা আমার সরকার আমাকে দিতে বাধ্য।

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ,

নাগরিক হিসেবে আপনার কাছে নিরাপত্তার অধিকার চাওয়া কি আদিখ্যাতা?

আমার তো প্রতিটি রাত নির্ঘুম দুশ্চিন্তায় কাটে, ঘুমাতে পারি না একফোটা ,স্বাধীন দেশে পরাধীনতার শিকল বেঁধে। যখনি কোনো নিস্পাপ শিশু হিংস্রতার বলিদান হয় , তখনি বুক ফাটা আর্তনাদে মন কেঁদে উঠে।
“আবরার ফাহাদ “- নিস্পাপ একটা ছেলে, যার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছুঁবে, তাই ছোট শহর থেকে ছুটে এসেছে এদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ এ পড়তে। লাখে একটা সোনার টুকরা ছেলে । যার স্বভাব থেকে চলাফেরা সব কিছুই ছিল একশ তে একশ। নিরপেক্ষ স্বাধীন মনে বড় হয়ে উঠা ছেলে, যার মনেও ছিল দেশের প্রতি ভালবাসা। তাই গণতান্ত্রিক এই দেশে ফেইসবুকে পোষ্ট করেছিল তার শিশু সুলভ কিছু কথা , সেটাই তার কাল হলো। সে বুঝতে পারিনি তার এই ছোট্ট একটি পোষ্ট তার জীবন শেষ করে দিবে।

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী , আপনার মনে আছে কিনা জানি না, কিছুদিন আগে কিশোর কিশোরিদের প্রশ্ন উত্তর পর্বে আপনি এসেছিলেন। একঝাঁক কিশোর কিশোরি দের মাঝে আপনাকে সেদিন অনেক প্রাণবন্ত দেখেছিলাম। সেখানে এক কিশোরির প্রশ্ন করেছিল -“ আপনি আপনার শরীর এতো সুন্দর করে মেইনটেইন করেন কিভাবে, এরজন্য কোনো শারিরীক ব্যায়াম করেন কি না?

আপনি এর উত্তরে প্রাণবন্ত একটা হাসি দিয়ে বলেছেন- আমি পাঁচওয়াক্ত নামায পড়ি, এটাই আমার মেইনটেইন। “ সেদিন আমার এই কথাটা অনেক ভালোই লেগেছিল । যে যেই ধর্মেরই হোক না কেনো, প্রত্যেক মানুষ যদি তার নিজ ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চলে অবশ্যই সে মানুষ শারিরীক এবং মানসিক দু দিক থেকেই ভাল এবং সুস্হ থাকবে। “

আবরার ফাহাদ” ও নামাজ পড়ত পাঁচ ওয়াক্ত, কিন্তু ওরটা কেনো দোষের হলো??

ও তো ওর মা বাবার দেওয়া ছোট বেলার শিক্ষা থেকে নামায পড়েছে । নামায পড়লে সে কেনো “জামাত “বলে আখ্যায়িত হবে।

আজ যে সব মেধাবী ছেলে গুলোকে খুনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে, তাদের পরিবারের কি শিক্ষা ছিল আমার জানা নেই।তবে এতটুকু বলতে পারি ওদের পারিবারিক শিক্ষায় যদি নীতিনৈতিকতা বোধ থাকত তাহলে ওই ছেলে গুলো মধ্যপ হতো না. টর্চার শেলের ভিলেন হতো না।

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, আপনিও আমার সাথে একমত হবেন নিশ্চয়, -ক্ষমতার অতিরিক্ত ক্ব্ব্যবহার যে কোনো মানুষকে পশুতে পরিণত করে। আজ যারা খুনির খাতায় নাম লিখিয়েছে তারা একদিনে এরকম খুনি পিশাচ হয়নি , ওদের বানানো হয়েছে। যেখানে ওদের হাতে বই খাতা কলম থাকার কথা , সেখানে তুলে দেওয়া হয়েছে অবৈধ অস্ত্র , টাকা, নেশা।

আমরাই আমাদের ধ্বংস করছি।এরাও তো আমাদের ভবিষ্যত ছিল । আজ এরা অন্ধকারে নিমজ্জিত নক্ষত্র ।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ,

যে দেশে নেত্রীতে নারী সেদেশে সব চেয়ে বেশি ধর্ষিত হয় নারী। এটা মানতে পারি না , মানাও যায় না। একটা ছোট্ট শিশু যার শরীরের অঙ্গ প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই সে ধর্ষিত হচ্ছে। যারা বেঁচে থাকবে কি কুৎসিত অতীত নিয়ে বড় হবে। কতটা মানসিক যন্ত্রনা সে ভোগ করবে।ছোট্ট শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধ মহিলা পর্যন্ত এই ধর্ষনের শিকার।কিন্তু বিচারের হাহাকার। বিচার আজ সাধারনদের জন্য নয়, অন্যায়ের পক্ষে।

চান্চ্রল্যকর নুসরাত হত্যার কাহিনী কতটা মানুষের মনকে কাঁদ্য়েছে সেটা বলা বাহুল্য। অথচ সেদিন নুসরাত হত্যার আসামী পক্ষের উকিল সাংবাদিক দের বলছেন – নুসরাত আত্মহত্যা করছে”। যে দেশে ধর্ষকের পক্ষে উকিল থাকে সে দেশ কখনও ধর্ষনমুক্ত হতে পারে না।

তবে ধন্যবাদ প্রধান মন্ত্রী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়ার জন্য।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী,

বঙ্গবন্ধুর মানস কন্যা”, যিনি এশিয়াতে শ্রেষ্ঠ নারী মন্ত্রী হিসেবে ঘোষিত, যা আমাদের গর্ব।

আপনার কাছে প্রশ্ন- আমাদের বাচ্চাদের বই পুস্তক সব জায়গায় আমাদের প্রিয় বঙ্গঁবন্ধুর ইতিহাস , যা এই প্রজন্মের সন্তানদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আমাদের জাতির পিতা, যার নেত্রিত্বে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ মুক্তিযাদ্ধা চেতনায় গড়ে ওঠা একটা শক্তিশালী দল। এই দল মুক্তির চেতনায় বিশ্বাসী। অথচ আজ এই দলে কিছু আগাছার কারনে সন্তানদের

কাছে এর সম্মান তুলে ধরতে পারছি না। টিভিতে যখন দেখছে কিভাবে নিস্পাপ ছেলেটিকে সারারাত পিটিয়ে মেরেছে , তখন সন্তানদের কাছে প্রশ্ন – মা তুমি না বললে আওয়মিলীগ মুক্তি যোদ্ধাদের দল , তাহলে কেনো ওরা মানুষ মারে?

এর উত্তর কি দিব?

যেখানে পাওনা টাকা চাওয়াতে মলমুত্র খাওয়াবো পারে , এরচেয়ে পৈশাচিকতা বর্বতা কি হতে পারে আমার জানা নেই?

এটা কখনও আওয়ামিলীগের মুক্ত চেতনার আদর্শ হতে পারে না।

আমি জানি এর মধ্যে আপনি এসব শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বড্ড দেরিতে। একবার যদি যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের প্রতি নজর রাখতেন তাহলে আজ আওয়ামিলীগের এই দুর্দশা হতো না। আজ আমরা জনগণ হতাশ । টপুরো বাংলাদেশ আজ নিরাপত্তার ভুগছে।

আমি আমার সন্তানদের
আজ একজন প্রধানমন্ত্রীকে নয় ,

জয় এবং পুতুলের মায়ের কাছে আমরা মায়েরা সন্তানের নিরাপত্তা চাচ্ছি….

নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই,

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ চাই

নিরাপদ সড়ক চাই

ধর্ষণ মুক্ত বাংলাদেশ চাই
লেখকঃ: তাহমিনা নাসরিন
ফেসবুক স্ট্যাটাস

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.