Beanibazarview24.com
সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত হবে ক্যানসার। তাও আবার মাত্র দশ মিনিটে। একটি দুটি নয় বরং সব ধরনের ক্যানসারের উপস্থিতি জানা যাবে নতুন আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিতে। এমনটাই দাবি করছেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যানো টেকনোলজির একদল বিজ্ঞানী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০১৫ সালে ক্যানসারে বিশ্বব্যাপী ৮৮ লাখ রোগী মারা গেছেন। প্রতি ছয়জনে মারা গেছেন একজন। হৃদরোগের পরেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়।
ক্যানসারকে বলা হয় মরণব্যাধি। সঠিক সময়ে এই রোগ নির্ণয় করতে না পারায় প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে ক্যানসারে মৃত্যুর মিছিল। চিকিৎসাশাস্ত্রে যে কই ধরনের ক্যানসার শনাক্তের পদ্ধতি চালু আছে, তা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা, ডিএনএ এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছেন, যার উপস্থিতি আছে সব ধরনের ক্যানসারে। আর জটিল রোগ ক্যানসার শনাক্তের জন্য আবিষ্কার করেছেন দুই ধরনের কৌশল।
বিজ্ঞানীদের প্রধান তিন সদস্য দলের একজন হচ্ছেন, প্রবাসী বাংলাদেশি ড. আবু সিনা। যিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
আবু সিনা বলেন, মানব দেহের গ্লুকোজ বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয়ের মতোই সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় মিলবে ক্যানসার উপস্থিতির তথ্য।
আমরা ডিএনএ এর বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করতে পেরেছি, যাকে বলছি ইউনিভার্সেল ক্যানসার বায়ো মার্কার। যা সব ধরনের ক্যানসারে আছে। পাশাপাশি এই বৈশিষ্ট্য ধরে এমন পদ্ধতি বের করেছি যা দিয়ে সবধরনের ক্যানসার শনাক্ত সম্ভব।
পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া আসেন আবু সিনা। দেশটিতে স্থায়ী বসবাস শুরুর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। আবু সিনা ও তার দলের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে দুইভাবে শনাক্ত করা যাবে ক্যানসার।
তিনি বলেন, একটি হচ্ছে খালি চোখে। এ পদ্ধতিতে, রক্ত থেকে ডিএনএকে আলাদা করে সোনার দ্রবনে (গোল্ড ন্যানো পার্টিকেল সলিউশন) মেশানো হবে। সঙ্গে যোগ করা হবে লবন। যদি ক্যানসার থাকে তবে দ্রবনের রং পরিবর্তন হবে না। আর যদি রক্তে ক্যানসার না থাকে, তবে দ্রবনের রং গোলাপী থেকে নীল হবে।
আরেকটি হচ্ছে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল পদ্ধতি। ডায়াবেটিকস শনাক্তের জন্য প্রচলিত যেসব ছোট ছোট মোবাইল ডিভাইস আছে, হয়ত ঠিক তেমনি মেশিন আসবে বাজারে। যা দিয়ে সহজে শনাক্ত করা যাবে ক্যানসার, জানিয়েছেন আবু সিনা।
এ অধ্যাপক বলেন, এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট ট্রাউ, আবু সিনা এবং পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো ডক্টর লরা কারাসকোসা। গবেষণাগারে দুইশরও অধিক রক্ত এবং টিস্যুর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেছেন তারা। বছর খানিক সময় লাগবে এ আবিষ্কারের সুফল পেতে।
এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে গবেষণাগারের এ আবিষ্কার। প্রায় সব ধরনের ক্যানসারের কয়েক হাজার নমুনা নিয়ে কাজ করতে লেগে যাবে আরো কয়েক বছর। তবে এ আবিষ্কারে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ।
চাঁদপুরের ছেলে আবু সিনার বাবা- মা দু’জনই শিক্ষক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্রিসবেনেই থাকেন তিনি। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এ আবিষ্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি। আশা করি আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। সুযোগ পেলে দেশের জন্যও অবদান রাখতে চাই, বলেছেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আবু সিনা।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.