Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বাবা আর্মি অফিসার দুই মেয়ে ব্যারিস্টার


সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আব্দুর রাজ্জাক। তার দুই সন্তান রিজওয়ানা রাজ্জাক রাহি ও শাহরিনা রাজ্জাক জুহি। দুজনই ব্যারিস্টার। বাংলাদেশে তো বটেই ব্যারিস্টারি সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান লিংকন্স ইনসের ইতিহাসেও সহোদর দুই বোনের একসঙ্গে ব্যারিস্টারি কল পাওয়ার ঘটনা নেই বলে জানিয়েছেন রাহি ও জুহি। আবার চাকরিরত সেনা অফিসারের সন্তানের মধ্যে তারা দুজনই প্রথম ব্যারিস্টার।

সেনা পরিবারে বেড়ে উঠা রাহি ও জুহি ছোট বেলা থেকেই ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। বড় বোন রাহি এ লেভেল পড়া অবস্থায় লাক্স সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। বহু প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে অর্জন করেন চতুর্থ স্থান। শতাধিক নাটকে অভিনয় করা লাক্স সুন্দরী রাহি মিডিয়ার চাকচিক্যময় জীবন বেছে না নিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

অপরদিকে ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখে আসা ছোট বোন জুহি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্ডারে এলএলবি ফার্স্ট ইয়ারেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন; যা তাকে ব্যারিস্টারি পড়তে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তারপর দুই বোন একসঙ্গে নর্দাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়ে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডনে যান।

ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করে এসে বড় বোন রাহি করপোরেট জগতে প্রবেশ করেছেন। জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা মেজর রুহুল আমিন সজীবকে। করপোরেট আইন নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি করপোরেট পারসোনালিটি হতে চান রাহি। অন্যদিকে ছোট বোন ব্যারিস্টার জুহি আইন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে রাজনীতিতে নামতে চান।

বাবা-মাকে ঘিরে দুই বোনের বেড়ে উঠার গল্প, আগামীর পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন ব্যারিস্টার রাহি ও ব্যারিস্টার জুহি। দুই মেয়েকে নিয়ে স্বপ্নের কথা বলেছেন মেজর জেনারেল আব্দুর রাজ্জাক-কোহিনুর রাজ্জাক দম্পত্তিও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক মেহেদী হাসান ডালিম।

প্রতিবেদকের প্রশ্ন- দুই বোনের বেড়ে উঠা …।

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি-ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: আমাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের সফিপুরে। বাবা মেজর জেনারেল মো: আব্দুর রাজ্জাক। মা কোহিনুর রাজ্জাক।

আমি রাহি। আমার জন্ম ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম সিএমএইচে। তখন আমার আব্বুর পোস্টিং ছিল কাপ্তাইয়ে। ছোট বেলাটা আসলে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টেই কেটেছে। স্কুল লাইফ কেটেছে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে। ওখান থেকেই ও লেভেল করে বের হই। এ লেভেল করেছি মাস্টারমাইন্ডে। অনার্স করেছি ব্রিটিশ ল’তে নিউ ক্যাসেল একাডেমি থেকে। মাস্টার্স করেছি নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে। তারপর ২০১৫ সালে বার এট ল করতে লন্ডনে চলে যাই।

আমি জুহি। আপুর মতই আমারও জন্ম চট্টগ্রাম সিএমএইচে ১৯৯৩ সালে। আমারও প্রথম স্কুল ছিল বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ। এখান থেকেই আমি ও লেভেল, এ লেভেল দুটোই করেছি। এরপরে এলএলবি নিয়ে নিউ ক্যাসেলে ভর্তি হই। ফার্স্ট ইয়ারে ডিপ্লোমা অব ল’তে আমি বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাই। ভাল রেজাল্ট করার কারণে বাকী দুই বছর আমি স্কলারশিপে পড়ার সুযোগ পাই। তারপর থার্ড ইয়ারে আমি এলসিএসে চলে আসি। ওখানেও আমাকে সেভেনটি পারসেন্ট স্কলারশিপ দেয়। অনার্সে টু ওয়ান পাই। তারপর বার এট ল করতে ২০১৫ সালে দুই বোন একসাথে লন্ডনে যাই।

প্রতিবেদক: ব্যারিস্টারি পড়ার আগ্রহ কীভাবে হলো ?

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি: যখন এ লেভেল করা শেষ হলো আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো আমি কি পড়তে চাই। প্রথমে এআইইউবিতে জার্নালিজম নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। ভর্তিও হয়েছিলাম। তিনদিন ক্লাস করার পরে সামহাউ ওটা আমার ভাল লাগেনি। তখন আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে কথা হলো। ও বলল তোর ওগুলো ভাল না লাগলে আইন বিষয় নিয়ে পড়। ওভাবেই আসলে ল পড়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু অনার্স করার পর বার এট ল করেছি টোটালি বাবা-মায়ের ইচ্ছাতে। এখন পর্যন্ত সার্ভিং আর্মি অফিসারের মেয়ে বা ছেলে কেউ কিন্তু ব্যারিস্টার হয়নি। আমার বাবাই চাকরিরত প্রথম আর্মি অফিসার যার দুই মেয়ে ব্যারিস্টার।

ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: প্রথমে ড. মো: ইউনুছকে দেখে ইকোনোমিস্ট হতে ইনসপায়ার্ড হয়েছিলাম। কিন্তু আব্বু একদিন বললেন, এমন কিছু হও যেন তোমার একটা ইমপ্যাক্ট অনেক মানুষের জীবনে থাকে। তারপর ভেবে চিন্তে দেখলাম যে, ব্যারিস্টার হলেই মনে হয় ভাল হবে। আপুর কাছ থেকে সব জেনে নিলাম। আপুও বলল, আমার মনে হয় তুমি এ লাইনে এলে ভাল করবে। এলএলবিতে যখন ভাল রেজাল্ট করলাম তারপরই প্ল্যান করলাম একদিন বার এট ল শেষ করবো। আর ওখান থেকেই ব্যারিস্টার হওয়া।

প্রতিবেদক: দুই বোনের একসাথে ইংল্যান্ডে কাটানো দিনগুলো …।

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি-ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: ইংল্যান্ডে সময়টা আসলে অনেক বেশি ভাল কেটেছে। দুই বোন ক্লাসমেট ছিলাম। পড়াগুলো জুহি বেশি বুঝতো। ওই আমাকে মেইন হেল্পটা করেছে। আসলে জুহির হেল্প না পেলে ব্যারিস্টারি পড়াটা সহজে আমি শেষ করতে পারতাম না। এটা আমি ওপেনলিই বলি। আমরা লন্ডনে গিয়ে কাজ ভাগ করে নিয়েছিলাম। পড়াশুনার সাইডটা জুহি বেশি কভার করতো। বাসা ম্যানেজ করা, শপিং করা মানে এডমিন সাইডটা আমি দেখতাম। আর স্টাডি সেক্টরটা জুহি দেখতো।

ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: বোন থাকাতে অন্যরকম একটা পাওয়ার ছিল। দুই বোন থাকাতে এত স্মোথলি যে বার এট ল করে এসেছি কেউ শুনলে বিশ্বাস করতে পারে না। নর্দাম্বিয়ার ক্যাম্পাস লাইফটা খুব মিস করি। তারপর সবাই যখন বলতো ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া দুই বোন তখন সবাই অন্যভাবে দেখতো। নর্দাম্বিয়া থেকে নরমালি বাংলাদেশি একজনকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমরা দুই বোনই পেয়েছিলাম।

প্রতিবেদক: ডিনস অ্যাওয়ার্ড সম্পর্কে জানতে চাই …

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি-ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: আসলে ডিনস অ্যাওয়ার্ড একটা স্কলারশিপ। নর্দাম্বিয়ার যিনি ডিন তিনিই সিলেক্ট করেন কোন বাংলাদেশি স্টুডেন্টকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে।

ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার জন্য একটা কমপিটিশন করতে হয়। ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলে ওই শিক্ষার্থীর টোটাল টিউশন ফি থেকে একটা এমাউন্ট কমিয়ে দেয়। আমাদের সময় বাংলাদেশ থেকে চারজন সিলেক্টেড হয়েছিলাম। লাকিলি আমরা দুই বোনই তার মধ্যে ছিলাম। আবার বার এট ল করার জন্য আমরা একাডেমিক স্কলারশিপও পেয়েছিলাম।

প্রতিবেদক: দুই বোনের একসঙ্গে ব্যারিস্টারি সনদ অর্জন করার অনুভূতি কীভাবে প্রকাশ করবেন ?

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি-ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: প্রথমত, একইদিনে কল পাওয়া কিন্তু ডিফিকাল্ট। এটাও একটা আশ্চর্যের ব্যাপার। কল শেষ করার পর ড্রিংক সেকশনে সবাই মিলে জুস টুস খাওয়া হয় তখন লিংকন্স ইনসের একজন রিপোর্টার এসে বলেন যে, ‘আর ইউ টুইন।’

‘তখন বলি না, আমি ছোট, সে আমার বড় বোন। এরপর সেই রিপোর্টার বলেন যে, ‘আমি এখানে আছি ১২ বছর। দুই ভাইয়ের ছবি তুলেছি। কিন্তু এই প্রথম দুই বোনের ছবি তুলছি যারা একসঙ্গে ব্যারিস্টার হচ্ছে। তোমাদের একটা ছবি নেবো এবং আমি রিপোর্ট করবো। তখন তিনি আমাদের তিন/চারটা ছবি তোলেন।

দ্বিতীয়ত, ব্যারিস্টার হয়ে আসার পরে আমরা যতটা না বলি আমার আব্বু-আম্মু কোন পার্টিতে গেলে দুই মেয়েকে ব্যারিস্টার বলে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রাউড ফিল করেন। আর্মিতে আমার আব্বু আম্মুর শুভাকাঙ্খী অনেক। সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রায় সবাই জানেন যে, মেজর জেনারেল রাজ্জাকের দুই মেয়ে ব্যারিস্টার। অনেক আংকেল, আন্টি তাদের বাচ্চাদের বলেন, দেখো তোমরা রাহি আপু, জুহি আপুর মত হবে। আমাদের দেখে অনেক সেনা কর্মকর্তার ছেলে মেয়ে আইন বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হয়েছেন।

প্রতিবেদক: এবার রাহি আপুর কাছে জানতে চাইছি। আপনার লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বিষয়ে কিছু বলুন।

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি: আমি তখন এ লেভেল পড়ছিলাম। আব্বুর অনুপ্রেরণাতেই ২০০৬ সালে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। প্রতিযোগিতার এক পর্যায়ে আমি টপ সিক্সে চলে আসি। এরপর অনেক এস এম এস আসার পরও প্রযোগিতায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। কারণ, আমি যদি টপ থ্রি তে উঠতাম তাহলে দারুচিনি দ্বীপ নামের মুভিটা করতে হতো। কিন্তু আমি যেহেতু আর্মি অফিসারের মেয়ে আমার কিছুটা বাইন্ডিংস ছিল। মুভি করা আসলে আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ওইখান থেকে আসার পরে জানতে পারি ফোর্থ পজিশনে ছিল আমার নাম। আমার সাথে প্রথম হয়েছিল মম, দ্বিতীয় বিন্দু, তৃতীয় বাঁধন।

মিডিয়াতে আমি তিন বছর কাজ করেছি। ১০০টির মত নাটকে অভিনয় করেছি। পরে আমি যখন ল তে এডমিশন নেই তখন বুঝতে পারি আমাকে যে কোন এক সাইড বেছে নিতে হবে। আসলে নাটকের সুটিং করে এসে ল স্টাডি করা পসিবল না। আমার মনে হচ্ছিল ওই জায়গা থেকে ব্যারিস্টারি পড়াটা বেটার।

প্রতিবেদক: আপনি বলছিলেন, সেনা কর্মকর্তার মেয়ে হওয়ার কারণে কিছু বাইন্ডিংস ছিল। সেই বাইন্ডিংসটা কি?

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি: আসলে আমাদের মত পরিবার থেকে যারা প্রতিযোগিতায় যায় কিছু জিনিস তাদের জন্য বাইন্ডিংস রাখা হয়। যেমন আমরা র‌্যাম্পে হাঁটতে পারবো না। সিনেমা করা যাবে না। এ রকম কিছু নিয়ম আছে। তৎকালীন যারা আর্মিতে পারমিশন দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাছ থেকে লিখিত পারমিশন নিয়েই আমি নাটক ও অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছি।

প্রতিবেদক: আপনার বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলুন …।

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি: আমার হাজবেন্ডের নাম রুহুল আমীন সজীব। আর্মিতে মেজর পদবীতে দায়িত্ব পালন করছেন। পোস্তুগোলা ক্যান্টনমেন্টে পোস্টিং। আমি সারাজীবন বাবাকে ইউনিফর্ম পরা দেখে এসেছি। আমার আম্মুরও ইচ্ছা ছিল মেয়ের জামাই যেন আর্মি অফিসার হয়। পারিবারিকভাবে ২০১২ সালে আমাদের বিয়ে ঠিক করে রাখা হয়। এর মধ্যে আমার হাজবেন্ড ইউএন মিশনে গেলেন। আর আমি ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডনে পাড়ি জমালাম। ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করে আসার পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের বিয়ে হয়। আমি ব্যারিস্টার হয়ে এসেছি- এটা নিয়ে আমার শ্বশুড় শাশুড়িও অনেক প্রাউড ফিল করেন।

আর একটা কথা বলতেই হয়, ব্যারিস্টারি পড়ার ক্ষেত্রে আমার হাজবেন্ডের শতভাগ সাপোর্ট ছিল। তিনি আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তার ওয়াইফ ব্যারিস্টার- এটা নিয়ে তিনিও যথেষ্ট প্রাউড ফিল করেন।

এ পর্যায়ে প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহির স্বামীকে প্রশ্ন: আপনি সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা, আপনার স্ত্রী ব্যারিস্টার। দুইজন ভিন্ন পেশার মানুষ। সংসার জীবনে কীভাবে ব্যালেন্স করেন?

রুহল আমীন সজীব: এটা নিয়ে কোন ধরণের সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই। আমি আগে থেকেই জানি ওর প্রফেশন কি। এখন কিন্তু আমাদের আর্মির মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগেরই মিসেস সার্ভিস হোল্ডার। নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। ও আমাকে হেল্প করবে, আমি ওর প্রফেশনের জন্য হেল্প করবো- এটাই নিয়ম। রাহি ওর প্রফেশনে হাইয়েস্ট পর্যায়ে যাক, সে জন্য নিজেকে আরো যোগ্য করে তুলুক। তার জন্য আমার যে ধরণের সহযোগিতার প্রয়োজন সেটা অবশ্যই আমি করবো।

প্রতিবেদক: বর্তমানে কী করছেন, ভবিষ্যতে কী করার স্বপ্ন দেখেন?

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি: এখন আমি ইউনিয়ন গ্রুপে Head of Security and Surveillance হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। করপোরেট সেক্টরটা আমার ভাল লাগে। করপোরেট পারসোনালিটি হওয়ার আগ্রহ আছে। করপোরেট ল নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। এছাড়া ইউএন- এ আমার হিউম্যান রাইটস এবং চাইল্ড প্রটেকশন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: আমি তো ব্যারিস্টার ওমর সাদাত স্যারের চেম্বারে জয়েন করেছি। সেখানে কাজ করছি। আপনাকে একটা ঘটনা বলি, আমার এক আংকেল আব্বুর টুআইসি ছিলেন। তিনি হাত দেখতে পারতেন। তার কথা সত্যি হতো- এমন একটা কথা চালু আছে। তিনি আমার হাত দেখে বলেছিলেন, ৪০ বছর বয়সে তুমি এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে। তুমি কিন্তু সেইভাবে প্রিপারেশন নেবে। যখন ইকোনোমিক্সের ক্লাস করতাম তখন এক স্যার বলতেন, তোমাকে দেখলে আমার বেনজির ভূট্টোর কথা মনে হয়। আমার সিনিয়র ব্যারিস্টার ওমর সাদাত স্যারও আমাকে রাজনীতি করার কথা বলেন। শুনে শুনে রাজনীতি করার একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের সফিপুরে আব্বুর ভাল ইনফ্লুয়েন্স আছে। ভবিষ্যতে ওখান থেকেই রাজনীতি শুরু করার পরিকল্পনা আছে। বাবা হবেন আমার উপদেষ্টা। এখন থেকেই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সফিপুরে একটা চেম্বার করবো। সপ্তাহে একদিন গিয়ে সেখানে বসবো। এলাকার গরীব মানুষদের ফ্রি আইনি সেবা দেবো। দুই বোন মিলে সমাজের উন্নয়নে, এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।

প্রতিবেদক: জীবনে এ পর্যায়ে আসার পেছনে বাবা-মায়ের অবদান সম্পর্কে কিছু বলুন।

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি-ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: আমাদের আব্বু আম্মুর কারণে আমরা দুই বোন ব্যারিস্টার হয়েছি। আব্বু-আম্মু তাদের বেশির ভাগ জিনিস সেক্রিফাইস করে আমাদের এখানে নিয়ে এসেছেন। আব্বুর যেখানে পোস্টিং থাকতো সেখানে থাকার অনেক ভাল ফ্যাসিলিটিজ থাকতো। কিন্তু শুধু পড়ালেখার জন্য বাসা ভাড়া করে আমার আম্মু আমাদেরকে নিয়ে ঢাকায় থেকেছেন। আমাদের লিভিং স্ট্যান্ডার্ড বা এডুকেশন কোয়ালিটি নিয়ে তারা কখনও কম্প্রোমাইজ করেননি। আব্বু আম্মু যদি এই ত্যাগ স্বীকার না করতেন তাহলে হয়তো নরমাল এমবিএ বিবিএ করে বসে থাকতে হতো।

প্রতিবেদক: বাবার যে কথাগুলো সব সময় প্রেরণা যোগায় …।

ব্যারিস্টার রিজওয়ানা রাহি ও ব্যারিস্টার শাহরিনা জুহি: আব্বু আমাদেরকে শিখিয়েছেন একটা মানুষকে সাকসেসফুল হতে গেলে থ্রি সি মেইনটেইন করতে হয়। প্রথমত, তার ভাল ক্যারেক্টার থাকতে হবে; দ্বিতীয়ত, কাজের প্রতি তার কমিটমেন্ট থাকতে হবে। লাস্ট হচ্ছে কমপিটেন্স। একটা মানুষের সেই কমপিটেন্স লেভেলটা থাকতে হবে যে, আমি কাজটা পারি এবং আমি এটা করতে পারবো। এই তিনটা সি এর ডেভেলপমেন্টের দিকে যদি আমরা নজর দেই তাহলে আমরা সাকসেসফুল হতে পারবো। আরেকটা কথা, আব্বু সব সময় বলেন, আমরা অনেকেই আছি খুব ইজিলি মানি চাই। কিন্তু আগে তুমি জিনিসটা ডিজার্ভ করো তারপর ডিজায়ার করো। অর্থাৎ ফার্স্ট ডিজার্ব দেন ডিজায়ার- এই কথাগুলো সবসময় প্রেরণা যোগায়।

এই পর্যায়ে বাবা-মা’য়ের কাছে প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে প্রশ্ন: দুই মেয়েকে নিয়ে আপনারা কী স্বপ্ন দেখেন?

মেজর জেনারেল আব্দুর রাজ্জাক ও কোহিনুর রাজ্জাক: স্বপ্নটা এরকম না যে আমাদের দুই মেয়েকে প্রধান বিচারপতি হতে হবে বা নামকরা ব্যারিস্টার হতে হবে। কি পরিমাণ টাকা উপার্জন করছে বা কত ক্ষমতা আছে সেটা দিয়ে কিন্তু সাফল্যের সংজ্ঞা হয় না।

ক্ষমতাটা হল আমি কত মানুষকে সাহায্য করতে পারছি। কত মানুষ আমার দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। আমাদের দুই মেয়ের চেয়েও অনেক মেধাবী ছাত্রী আছে যারা সুযোগ না পাওয়ার কারণে ব্যারিস্টার হতে পারেনি। সেই জন্য আমরা চাই আমাদের দুই সন্তান দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। তারা গরীব মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে, সৎ পথে জীবন পরিচালনা করবে। আমাদের আর্মি কমিউনিটির সবাই আমার মেয়েদের অ্যাপ্রিশিয়েট করেন। (রাইজিংবিডি)

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.