Beanibazarview24.com
বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হ’ত্যা মা’মলার চার্জশিটে স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথকে আ’সামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ মা’মলার অন্যতম আ’সামি রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজী। তাদের দাবি, রিফাত হ’ত্যার মাস্টারমাইন্ড সুনাম। অথচ তাকে আ’সামি করা হয়নি।
মঙ্গলবার বরগুনার আদালতে তাদের হাজিরা শেষে প্রিজনভ্যানে ওঠানোর সময় এসব কথা বলে চিৎকার করতে থাকেন রিফাত ও রিশান ফরাজী। এর পর পু’লিশ দ্রুত তাদের প্রিজনভ্যানে তুলে বরগুনা কা’রাগা’রে নিয়ে যায়।
‘এটা অন্যায়, এটা অবিচার। যে (রিফাত শরীফ হ’ত্যার পরিকল্পনা) করছে সে কেন ৭ নম্বর, সুনাম দেবনাথ কেন আ’সামি নাই, সুনাম দেবনাথ হ’ত্যার নির্দেশদাতা, সে কেন আ’সামি নাই, বাদশা হ’ত্যার কেন বিচার নাই? এটা অবিচার, এটা অন্যায়।’
তবে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা সুনাম বলছেন, তার দুর্নাম রটাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে এই হ’ত্যাকাণ্ডে তার নাম জড়ানো হচ্ছে।
গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ হ’ত্যাকাণ্ডের পর থেকে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক।
মা’মলার ধার্য দিনে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রিফাত হ’ত্যা মা’মলায় গ্রে’ফতার ১৪ আ’সামিকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক আ’সামিদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয়জনকে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে এবং বাকিদের বরগুনা কা’রাগা’রে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মা’মলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে আদালত চত্বরে রাখা প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় মা’মলার ১ নম্বর আ’সামি রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজীসহ অন্য আ’সামিরা চিৎকার করে রিফাত হ’ত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে সুনাম দেবনাথের নাম বলে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
প্রায় ২ মিনিটের এই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রিজনভ্যানে তোলার পরও আ’সামিরা চিৎকার করে সুনামের কথা বলে যাচ্ছিল।
গতকাল আদালত চত্বরে আ’সামিরা চিৎকার করে যে বক্তব্য দিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে সুনাম দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনারা জানেন আ’সামিদের একটি অংশ আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ওই প্রতিপক্ষের ছত্রচ্ছায়ায় এরা এসব অপকর্ম করে বেড়াত। তাদের শেখানো কথাই এখন আ’সামিরা বলে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে কেউ কোথাও আমার সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেছে কিনা। যদি সেখানে তারা এসব না বলে থাকে, তবে এখন এমন বক্তব্যের মানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।’
রিফাত-রিশানের চিৎকার নিয়ে সুনাম আরও বলেন, মা’মলার প্রধান দুই আ’সামি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ওই প্রতিপক্ষের ছত্রচ্ছায়ায় এরা এসব অপক’র্ম করে বেড়াত। তাদের শেখানো কথাই এখন আ’সামিরা বলে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে।
রিফাত হ’ত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির যোগসাজশের ইঙ্গিত সুনাম তার ফেসবুক পোস্টে করেছিলেন। পরে তা সরিয়েও নেন। হ’ত্যা মা’মলা দায়েরের সময় সাক্ষীর তালিকায় মিন্নির নাম থাকলেও এখন তিনিও একজন আ’সামি।
প্রসঙ্গত বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ হ’ত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হ’ত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আ’সামি করে মা’মলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আ’সামি করা হয়। এ মা’মলার প্রধান আ’সামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পু’লিশের সঙ্গে বন্দু’কযু’দ্ধে নি’হত হন। মা’মলার এজাহারভুক্ত ছয় আ’সামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রে’ফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দিয়েছে।
রিফাত হ’ত্যা মা’মলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রে’ফতার ও রিমান্ডে গিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দেয়ার পর থেকে মা’মলা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পু’লিশলাইনসে নিয়ে যায় পু’লিশ। এর পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে রিফাত শরীফ হ’ত্যা মা’মলায় গ্রে’ফতার দেখানো হয়।
পর দিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আ’ইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।
পর দিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পু’লিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হ’ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হ’ত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হ’ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দেন।
এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের দাবি, মিন্নির কাছ থেকে জোর করে জবানব’ন্দি নেয়া হয়েছে। তিনি এ হ’ত্যা মা’মলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আ’সামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দায়ী করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘সবকিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’ শম্ভুর ছেলে সুনামের বিরুদ্ধে কিশোরের অভিযোগ, তার জন্যই এতদিন মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি আ’ইনজীবীরা। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু সমালোচনার পর বরগুনা ও ঢাকার আ’ইনজীবীদের একটি অংশ মিন্নির পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লি করুন…
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.