Beanibazarview24.com
লিবিয়ায় অ’স্ত্রধারীদের এলোপাতারি গু’লিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহ’ত ও ১১ জন আহ’ত হন। ভাগ্যক্রমে একজন পালিয়ে রক্ষা পান। পরে এক লিবায়ার নাগরিকের আশ্রয়ে জীবন রক্ষা করেন তিনি। দূতাবাসের সাথে ঐ বাংলাদেশি যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানান। বর্ণনা করেন ম’র্মান্তিক সেই ঘটনা। ঐ বাংলাদেশির নাম মোহাম্মদ সাইদুল। তার বাড়ি মাদারিপুর জেলার রাজৈর উপজেলায়। টেলিফোনে মাদারিপুরে তার এক বন্ধুর সাথেও কথা বলেন সাইদুল।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ( ২৮ মে ) লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহ-তে (ত্রিপলি হতে ১৮০ কি.মি. দক্ষিণে) এই ঘটনা হয়।বলেন , তিনি একজন লিবিয়ানের আশ্রয়ে আত্মগো’পনে আছেন। ১৫ (পনের) দিন আগে বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে মানবপা’চারকারীরা এ সকল বাংলাদেশিকে ত্রিপোলিতে নিয়ে আসার পথে তিনিসহ মোট ৩৮ (আটত্রিশ) জন বাংলাদেশি মিজদাহ শহরে নিকট লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর একদল দু’ষ্কৃতকারীর হাতে জি’ম্মি হন। মু’ক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে জি’ম্মিকারীরা অমানবিক নি’র্যাতন করতে থাকে। প্রতিনিয়তই অমা’নবিক নির্যা’তন করতো বন্দিদের।
তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে বন্দিরা সিদ্ধান্ত নেয় ব’ন্দিকারিদের নেতাকে আ’ক্রমন করে পালিয়ে যাবেন তারা। সেই মতে শীর্ষ নেতাকে আ’টক করে সব ব’ন্দি একত্রিত হয়ে তাকে ‘মে’রে ফেলে। একইসাথে আরেক সুদানী পা’চারকারীকেও মে’রে ফেলে তারা। এই ঘটনার প্রতিশো’ধ নিতেই ব’ন্দিকারির পরিবারের সদস্য ও অন্য পাচারকারিরা হা’মলা চালায় ক্যাম্পে। তারা এলোপাতারি গু’লি করতে থাকে। এতে গু’লিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সকলে। মোহাম্মদ সাইদুলও সকলের সাথে মৃতের মতো পড়ে থাকে।
এক পর্যায়ে রুমের ভিতরে একজন অ’স্ত্রধারি প্রবেশ করে মৃ’ত্যু নিশ্চিত করতে। তখন সাইদুল ঐ ব্যক্তির পি’স্তল কেড়ে নিয়ে গু’লি করতে থাকে। তখন পাচারকারিরা পিছু হটলে তিনি ভিন্ন পথ দিয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন।
এই মর্মা’ন্তিক ঘটনায় ২৬ (ছাব্বিশ) জন বাংলাদেশি নিহ’ত হয় এবং আরও ১১জন বাংলাদেশি হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গু’লিবি’দ্ধ হন।
এ সংবাদ পেয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মিজদাহ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আহ’তদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া, মৃ’তদেহগুলো মিজদাহ হাসপাতালের ম’র্গে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। আহ’তদেরকে পরবর্তীতে দূতাবাসের সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ত্রিপোলিতে অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে।
গু’রুতর আহ’ত তিনজনের শরীর হতে গুলি বের করার জন্য অ’স্ত্রোপচা’রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস লিবিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আইওএম লিবিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখছে এবং তারা আহ’ত ব্যক্তিদের জন্য সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করছেন। মিশনের কর্মকর্তারা আহ’তদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণসহ নিহ’তদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন।
এ ম’র্মান্তিক যটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী গভীর শো’ক প্রকাশ করেছেন এবং আহ’তদের সুচিকিৎসার নিশ্চিতকরণে দূতাবাসকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দূতাবাস লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরো ঘটনার ত’দন্তসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রে’প্তার, দোষীদের যথাযথ শা’স্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে, লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজদাহের সুরক্ষা বিভাগকে অপরা’ধীদের গ্রে’প্তার এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস দ্রুততম সময়ে আহ’তদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, মানব পা’চারে জড়িতদের বিবরণ এবং লিবিয়ান সরকার কর্তৃক এ বিষয়ে পদক্ষেপের বিস্তারিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
উল্লেখ্য যে, মিজদাহ শহরে এখন যু’দ্ধাবস্হা বিরাজমান এবং এ অঞ্চলটি এখন দুটি শ’ক্তিশালী পক্ষের যু’দ্ধক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। কিছুদিন আগে ত্রিপোলি ভিত্তিক এবং ইউএন সমর্থিত জিএনএ সরকার এই অঞ্চলটি দখল করে নিলেও জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব ভিত্তিক সরকারি বাহিনী দু’দিন আগেও শহরটিতে বোমাবর্ষণ করেছে। ত্রিপোলি ভিত্তিক সরকারের এ অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। বর্তমানে এমনকি ত্রিপোলি শহরেও বিরোধীপক্ষ মাঝেমাঝে বো’মাব’র্ষণ করে থাকে। দু’টি শ’ক্তিশালী প’ক্ষ যু’দ্ধরত থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক নয়। এ কারণে অধিকাংশ দেশ তাদের দূতাবাস তিউনিসিয়াতে স্হানান্তর করলেও বাংলাদেশসহ মাত্র তিনটি দেশ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ প্রতিকূল অবস্থাতেও বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার সকল প্রকার মা’নব পা’চারের সম্পূর্ণরূপে বিরো’ধী এবং মা’নব পাচার রোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যার ফলে বাংলাদেশ হতে মানব পা’চারের পরিমাণ বহুলাংশে হ্রা’স পেয়েছে। এ সমস্যাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃ’দ্ধিরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসাথে কাজ করা প্রয়োজন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.