Beanibazarview24.com
তার সম্পর্কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই! সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন! পেশায় একজন ব্যারিস্টার। কিন্তু দায়িত্ব নিয়েছেন সমাজ বদলে দেয়ার। একাই এর জন্যে লড়ে যাচ্ছেন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’র মত করে।
কিছুদিন আগের কথা
ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার পথে নরসিংদীর শিবপুরে রাস্তার মধ্যে একটি খুঁটি দেখতে পান তিনি। এমন একটি রাস্তার বাঁকে খুটি দেখে হতবাক হয়ে যান তিনি। দুর্ঘটনা ঘটার ভয়ে ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের এহর কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ফেসবুকে একটি লাইভ করেন তিনি। ব্যাস, লাইভে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুটিটি সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।
এরপর থেকে তার কাছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রাস্তার মাঝে অবস্থিত খুটির ছবি পাঠাতে থাকে বিভিন্ন লোকজন। যা ফলশ্রুতিতে হাইকোর্ট মহাড়কের মাঝে অবস্থিত সকল খুটি ৬০ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেন।
এরপর আসি আরেকদিনের ঘটনায়
হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার পুর্ব হাসারগাও এর চৌপট গ্রামে হবিগঞ্জের সবথেকে বড় ও খরস্রোতা খোয়াই নদীতে একটি নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দিতে গিয়ে লক্ষ্য করেন আরেক বিপত্তি। সেখানে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষের বাড়ি নদীর পূর্বদিকে,অথচ স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, পোস্ট অফিস সব নদীর অপরপার্শ্বে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, স্বাধীনতার এতো বছরেও এ এলাকার মানুষকে জীবনের ঝুকি নিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করতে হচ্ছে। অতঃপর তিনি একটি উক্ত এলাকায় একটি ব্রীজ নির্মাণের জন্যে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অনুরোধ জানান।
তার অনুরোধের পর আশায় বুক বেধেছে এলাকাবাসী।
সমাজের প্রতিবন্ধীদের পাশে ব্যারিস্টার সুমন
শারীরিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) মানুষদেরও পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি । অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শারীরিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের সেবা করা ‘সুইচ ফাউন্ডেশন’এর সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে তিনি হাজির হন ফেইসবুক লাইভে। প্রবাহ২৪ এর সহায়তায় প্রতিবন্ধীদের পরিবহণের জন্য সেচ্ছাসেবীদের হাতে তুলে দেন হুইল চেয়ার।
ডাস্টবিনে ব্যারিস্টার সুমন
এইতো গতকালই তাকে দেখা গেলো অভাবনীয় এক কাজে। রাজধানীর সুরিটোলা বিদ্যালয়ের সামনে ছিল এক ডাস্টবিন। ডাস্টবিন তো নয়, যেন ময়লার ভাগাড়! ময়লার পঁচা দুর্গন্ধে পথচারীরাই ওপাশ দিয়ে তেন যেতে চায় না। অথচ স্কুলের শিক্ষক ও ছোটছোট বাচ্চাদের সেখানে সারাদিন পর করতে হয়। এর একটা বিহীত করতে তিনি তার ফোন নিয়ে নেমে পড়লেন সেই ডাস্টবিনে।
ডাস্টবিনটি সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘স্কুলের বাচ্চাদের বাঁচান, বেঁচে যাবে ভবিষ্যৎ’। এর পরপরই ডাস্টবিনটি সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে আরেকটি লাইভে এসে সুমন জানান, ‘মাত্র ৬ ঘণ্টায় সরে গেল ময়লার ডাস্টবিন। বেঁচে গেল ১৫০০ শিশু’।
এটাই ব্যারিস্টার সুমন। একজন আলোকিত মানুষ। সমাজের সকল অসঙ্গতির অন্ধকার দূর করতে আলোক বর্তিকা হাতে রাস্তায় নেমে পড়া এক আলোর ফেরীওয়ালা।
পৃথিবীতে জাদুর কাঠি, মিডাসের সোনালী স্পর্ষের অভিজ্ঞতা কেউ লাভ করেছে কিনা জানিনা। কিন্তু ব্যারিস্টার সুমনকে দেখছে সবাই, দেখছে সারাদেশ, দেখছে বিশ্ব। তিনি যেখানেই হাত দিচ্ছেন, সেখানেই যেন সোনা ঝরছে। ঠিক যেন র্যাপুঞ্জেল উপকথার সেই জাদুকর বুড়ির মত!
কে বলেছে আমাদের দেশে সোনার মানুষ নেই? এইতো সেই মানুষ, এটাই তো শিক্ষা! এটাই আলো, এটাই সভ্যতা। জাদুবিদ্যা কিংবা অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন সুপারম্যান কেউই নই আমরা। কিন্তু একটু সচেতন হয়ে এগিয়ে এসে সমাজের অনিয়ম-অসঙ্গতি নিয়ে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আমরাই পারি আমাদের এই দেশটাকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে।
এই একজন সুমনের মতো প্রত্যেকটি জেলায় প্রত্যেকটি থানায়-পাড়ায়-মহল্লায়-গ্রামে সংকোচ থেকে বেরিয়ে আসুক হাজারো সুমন; একে অন্যকে দোষাদুষীর সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে নিজের কাঁধেই যদি আমরা দায়িত্ব নিতে পারি; তাহলে সোনার বাংলা বাস্তবায়নের স্বপ্ন সত্যি হতে যে আর বেশি দেরী নেই, তা স্পষ্টাক্ষরেই লিখে দেয়া যায়।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.