Beanibazarview24.com
অ’স্ত্রোপ’চারকক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা মবশ্বির আলী। কিছুক্ষণ পর কক্ষ থেকে বের করা হলো তাঁর মেয়ে নাইমা আক্তারকে (১২)। এরপর মেয়েকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। মেয়ের হাতে তখন স্যালাইনের সুই দেওয়া। মেয়ের মুখ দেখে বাবা মবশ্বিরের মুখে হাসি ফুটল। বাবার হাসি দেখে মেয়েও মুচকি হেসে দিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। এভাবে গত চার দিন ধরে অসহায় ঠোঁট ও তালুকাটা শিশু, আগুনে ঝলসে যাওয়া ত্বক, জোড়া আঙুলে জন্ম নেওয়া রোগীদের বিনা মূল্যে অ’স্ত্রোপ’চার ও প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে এই হাসপাতালে।
সিলেটে অসহায় ৬০ জন সেবাপ্রার্থীর মুখে হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে স্মাইল বাংলাদেশ নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা। এতে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি) ও শহীদ শামসুদ্দীন আহমদ হাসপাতাল। স্মাইল বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসক, প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ, নার্সসহ ২৫ জনের একটি দল এই কার্যক্রমে অংশ নেয়।
বিশ্বনাথের আতাপুর গ্রামের মবশ্বির আলী বলেন, ‘মেয়ের জন্মের পর থেকে ঠোঁটকা’টা। এই রোগের কীভাবে চিকিৎসা করাতে হয়, আমরা জানতাম না। দুই তিন-মাস আগে এলাকায় একটি সমিতির মাধ্যমে নাম লিখিয়ে ছিলাম। পরে তারাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সময় নির্ধারণ করেছে। এতে কোনো টাকাপয়সা দিতে হয়নি। মেয়ের মুখ স্বাভাবিক অবস্থায় দেখে এখন ভালো লাগছে।’
স্মাইল বাংলাদেশের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বিনা মূল্যে এসব সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এবার সিলেটে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে সংগঠনটি।চলতি বছরের ২০ জুলাই থেকে সিলেট অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসহায় সেবাপ্রার্থীদের নিবন্ধন করা হয়। প্রাথমিকভাবে ৯০ জনকে বাছাইয়ের পর এর মধ্য থেকে ৬০ জনের অ’স্ত্রোপ’চার করা হয়। এদের সবার বয়স পাঁচ মাস থেকে ১৮ বছরের নিচে।
স্বাভাবিক হাসি ফিরে পাওয়া তিন বছরের শিশু লামিছার মা শিরিন আক্তার বলেন, মেয়ের মুখে সমস্যা ছিল। চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় এখন স্বাভাবিক হয়েছে। এ জন্য বাড়তি কোনো কিছুই করতে হয়নি।
স্মাইল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক খৃস্টিনা রোজারীও বলেন, তাঁদের সংগঠনের সভাপতি চিকিৎসক শাহিদ আজিজ বাংলাদেশি। তাই তাঁর দেশের অসহায় মানুষের সেবা করার মানসিকতা থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু ঠোঁট ও তালুকাটা অবস্থায় জন্ম নেয়। প্রতিবছর দুবার করে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকেরা বাংলাদেশে এসে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.