Beanibazarview24.com
প্রথমে দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধ, অতপর জোটের। প্রথমটিতে ডজন খানেক প্রার্থীকে পেছনে ফেলে নৌকার মাঝি হন। কিন্তু, ঝামেলা বাঁধায় জোটের হিসাব। তবে শেষ পর্যন্ত নির্ভেজালভাবে সেই ঝামেলাও মিটে যাওয়ায় অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছেন সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনের নৌকার মাঝি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সেই সাথে পেয়েছেন সিলেট অঞ্চলের অন্যতম ইসলামী দল আনজুমানে আল ইসলাহ’র সমর্থন।
নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-দুঃখ, মান-অভিমান ভাঙ্গাতে ইতিমধ্যে অনেকটা সক্ষম হয়েছেন। বিশেষত নাহিদ বিরোধী বলয় হিসেবে চিহ্নিত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পলব গ্র“পও নৌকার পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নেমেছে গত মঙ্গলবার থেকে। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও ২/১ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামতে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এখন বেশ ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী নাহিদ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত লগ্নে এসে নৌকার পালে লেগেছে দখিনা হাওয়া।
দেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ ডজনখানেক আওয়ামী লীগ নেতা। সকলকে পেছনে ফেলে শেখ হাসিনার ভরসার পাত্র হিসেবে নাহিদই হন দলের মনোনীত প্রার্থী।
দলীয় মনোনয়ন পেলেও থেকে যায় জোটের হিসাব নিকাশ। এ আসনে মহাজোটে যোগ দেওয়া বিকল্পধারা থেকে প্রার্থী হন শমসের মুবিন চৌধুরী। মহাজোটের মনোনয়ন না পেলেও প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি শমসের মুবিন। জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শুরু করেন প্রচার প্রচারণা। এতে কিছুটা অস্বস্থিতে পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে। তবে গত রবিবার শমসের মুবিন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিকল্প ধারার সভাপতি ঢাকাস্থ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে।
তিনি নুরুল ইসলাম নাহিদের পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানাবেন। এতে অনেকটা নির্ভার হয়েছেন এ আসনের টানা দুইবারের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। আর একই সাথে রবিবার বিজয় দিবসে পেয়েছেন আরেকটি সুখবর। সিলেট অঞ্চলে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় দল আল ইসলাহর সমর্থন। আলামা হুছামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলির নেতৃত্বাধীন আল ইসলাহ তাকে সমর্থন দিয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। রবিবার এক মতবিনিময় সভায় তাঁকে সমর্থন এবং তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন হুছামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলি।
এদিকে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের দুই উপজেলাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উলেখযোগ্য একটি অংশ বিভিন্ন কারনে দলীয় প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপর ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ ছিল। নিজেদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ও সাংগঠনিক নানা কারনে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-দুঃখ-অভিমান ছিল। তফশীল ঘোষণার পর থেকে নুরুল ইসলাম নাহিদ নির্বাচনী এলাকায় এসে ধারাবাহিকভাবে দলীয় বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে মিলিত হন। নির্বাচনী বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় গিয়ে মতবিনিময়, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও সভা-সমাবেশ করছেন প্রতিনিয়ত। এসবের মধ্য দিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যেমন সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন, তেমনি দলীয় নেতাকর্মীদের দুঃখ-ক্ষোভ ও অভিমান ভাঙ্গাতে সফলতা পেয়েছেন। ইতিমধ্যে দলের বিভিন্ন স্তরের প্রায় সকল নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে নির্বাচনী কাজে মাঠে নেমেছেন। বিভক্ত ছাত্রলীগের সকল গ্র“পের নেতাকর্মীরাই এখন নৌকার প্রচার-প্রচারণায় ভোটের মাঠে রয়েছেন। সর্বশেষ দলের অভ্যন্তরে প্রকাশ্যে নাহিদ বিরোধী বলয় হিসেবে পরিচিত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পলব গ্র“পের সাথেও বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যস্থতায় আবুল কাশেম পলবের সাথে নানাভাবে আলোচনার পর কেন্দ্র ও জেলা নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত এই বলয়কে বাগে আনতে সক্ষম হয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। গত ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পৌরসভাস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে দলের কেন্দ্র, জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কর্মী সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন আবুল কাশেম পলব ও তার অনুসারীরা। এতে করে নির্বাচনী মাঠে এখন দলীয়ভাবে শতভাগ ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল গ্র“প, উপগ্র“পগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য ও স্বত:স্ফূর্ততা বিরাজ করছে নির্বাচনের ক্ষেত্রে। দলীয় এই সুসংসহত অবস্থানের কারনে নৌকার বিজয়ের বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়ায় সাধারণ ভোটাররাও ক্রমান্বয়ে নৌকার পক্ষে ঝুঁকছেন। ফলে ৩০ তারিখের নির্বাচনকে ঘিরে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি এ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে জোটের প্রার্থীর পক্ষে না নেমে নিরব ভূমিকায় রয়েছে। সেজন্য বিগত সময়ে তাদেরকে মূল্যায়ন না করা ও বর্তমান নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় সভা বা কোন বৈঠক না করার ফলে অভিমান থেকেই তারা দূরে ছিল। তবে স¤প্রতি বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ উপজেলায় দ্বি ধারায় বিভক্ত জাতীয় পার্টির উভয় অংশই নিজেদের মধ্যে সভা করেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে তাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ফলপ্রসূ পর্যায়ে রয়েছে। তাই ২/১ দিনের মধ্যেই জাতীয় পার্টি ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার পক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছেন।
এছাড়া প্রবাসী অধ্যুষিত এই দুই উপজেলার প্রায় দেড়শতাধিক প্রবাসী নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী মাঠে নৌকার পক্ষে কাজ করতে ইতিমধ্যে দেশে এসেছেন। এদের অধিকাংশই দেশে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। নির্বাচনী মাঠে তাদের সম্পৃক্ততা দলীয় সংহতি সুদৃঢ়করণ সহ নৌকার পক্ষে ভোট টানতে উলেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সবমিলিয়ে নির্বাচনের চূড়ান্ত লগ্নে এসে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে নৌকার পালে লেগেছে দখিনা হাওয়া বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। সে হাওয়ার তালে তালে নৌকার হাল ৩০ তারিখ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলে বিপুল ভোটে হ্যাটট্রিক বিজয়ী হতে যাচ্ছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.