Beanibazarview24.com
একজন বয়স্ক মানুষ সিংহের ন্যায় একাই ন্যায্য কিছু বাক্য উচ্চারণ করলেন, আর তাকে ঘিরে আক্রমণাত্মক মারমুখী মনোভাব নিয়ে হৈ চৈ করলো সড়কে অবরোধকারী একদল মানুষরুপী জন্তু মানসিকতার লোক। ভিডিওটা দেখে খুব বিস্মিত হলাম না, কষ্ট পেলাম খানিক। এদেশে যৌক্তিক কথা বললেই এখন কারো না কারো শত্রু বনে যেতে হয়।
বঙ্গবন্ধু বহু আগেই বলে গিয়েছিলেন, “যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশী হলেও, সে একজনও যদি হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো”।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ করি এই দাবি করা লোকের সংখ্যা এখন বাংলাদেশে কাকের সংখ্যার চেয়েও মনে হয় বেশি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে তার চর্চা করা লোকের সংখ্যা বিলুপ্ত ডায়নাসোরের মতোই বিরল হয়ে উঠেছে। ন্যায্য কথা, উচিত কথা সহ্য করার মতো সহনশীলতা এখন নেই কারো।
আর দাবির কথা বলবো? গোটা বিশ্বেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের কিশোর আন্দোলন এক দারুণ উদাহরণ তৈরি করেছে। কোনো সরকারের বিরুদ্ধে নয়, কোনো রাজনৈতিক মতধারা নিয়ে নয়, কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থের আন্দোলন নয় বাংলাদেশের কিশোররা দাবি তুলেছিল কেবল নিরাপদ সড়কের। তারা চেয়েছিল সড়কে শৃঙ্খলা ফিরুক। সড়কে ইমার্জেন্সি লেন করে তারা উদাহরণও তৈরি করে রেখে গেছে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে যারা কেবল বকবক করে সেই সব রাজনীতিবিদ কিংবা যারা আইনের বাস্তবায়ন করে তারাও সড়কে কতটা আইনবিরোধী কাজ করে অবৈধভাবে রং সাইডে গাড়ি চালিয়ে, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি বের করে।
কিশোরদের সেই আন্দোলন নাড়া দিয়েছিল গোটা জাতিকে। নিরাপদ সড়ক এমন এক দাবি যা সবার জন্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে এই সড়ক কেড়ে নিতে পারে যে কারো প্রাণ৷ অথচ, সেই আন্দোলনেও কিশোরদের উপর নির্লজ্জ রকমে আক্রমণ হয়েছে।
সেই দাবির ফলশ্রুতিতে যখন সরকার সড়ক আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে তখনো একটা পক্ষ বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছে ক্রমাগত। তারা অনৈতিক ভাবে সড়কে অবরোধ দিয়ে গোটা দেশে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা করেছে। তারা এই আইন মানবে না, আইনে সংস্কার আনতে হবে, কঠোর ধারা বাদ দিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি দাবি তাদের।
তাদের এই দাবির বিপরীতে একজন সিংহ পুরুষ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে সাংবাদিকদের কাছে অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি খুব গুছিয়ে মাত্র তিনটা লাইন বলেন- “এটা কোনো আন্দোলন হইতে পারে না। আন্দোলন হয় জনগণের স্বার্থে। এই আন্দোলন কি জনগণের স্বার্থে?”
ব্যাস৷ মাত্র এই তিনটা লাইন তিনি বলার কারণে দেই জায়গায় যেন আগুন ধরে গেল৷ বয়স্ক মানুষটা ঘিরে ধরে রেখেছিল সড়কে অবরোধ পালনকারী হিংস্র কিছু লোকজন। তাদের হিংস্র বলার কারণ তাদের অমানবিক আচরণ। বয়স্ক মানুষটা এই তিন লাইন বলার পরপরই আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবরোধকারীরা মানুষটার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। তারা আঙ্গুল উঁচিয়ে, চিতকার করে মানুষটাকে ঘায়েল করতে চেষ্টা করে। এমন ভাবে ওরা ক্ষেপে যায় যেন বয়স্ক মানুষটা খুব অশ্লীল, অশালীন কিছু বলেছেন।
একদল হিংস্র লোকের সামনে দাঁড়িয়ে মুরুব্বি মানুষটা তখনো প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে তাকে নিষ্ঠুরভাবে গায়ে জোরে ধাক্কা মেরে বসে অবরোধকারীদের একজন। বয়স্ক লোকটার পক্ষে দাঁড়ানোর কেউ নেই সেখানে। বাকি সবাই হিংস্রতার সমর্থক। পারলে মুরুব্বিকে কথার গুলিতে বিদ্ধ করে মেরে ফেলে ওরা। আর কেউ কেউ এতো আক্রমণাত্মক যে মুরুব্বিকে পারলে গণধোলাই দিয়ে বসে সেখানে। ক্যামেরা তখনো রেকর্ডিং করে চলেছে এই দৃশ্য, যে দৃশ্যে একজন সিংহ পুরুষকে ঘায়েলের চেষ্টা করে যাচ্ছে অমানবিক কিছু হায়েনা।
মুরুব্বি ও হতবিহ্বল এইরকম আচরণ পেয়ে। এদেশে ন্যায্য কথা উচিত কথা বলার পুরস্কার এভাবেই দেয়া হয় এটা বোধহয় তিনি ভাবতে পারেন নি। সেদিন জনগণের কি রকম ভোগান্তি সইতে হয়েছে সেটার এক ভুক্তভোগী আমিও। অবরোধকারীরা সড়কে গাড়ি চলতে না দিয়ে কি রকম নৈরাজ্য করেছে তাও জেনেছি আমরা। বিভিন্ন জায়গায় তারা গাড়ির চালকদের মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দেয়। কোথাও কোথাও এম্বুলেন্সকেও ছাড়ে নি ওরা। আবার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রবীন উদ্যোক্তা ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে জুতার মালা দিয়ে তারা ব্যানার বানায়, তার ফাঁসি চায়।
এগুলো কেমন আন্দোলন? অন্য ন্যায্য আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী সহ অন্য মন্ত্রীরা সাথে সাথে ষড়যন্ত্রর গন্ধ শুঁকেন আর এমন নৈরাজ্যকারীদের এই আন্দোলন কিভাবে চলে, কার নির্দেশে এসব হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন না কেউ! সেলুকাস!
সড়কে তাদের বর্বরতার নমুনা তারা টিভি ক্যামেরার সামনে দেখাতেও ভয় পান না। এতোটাই সাহস ওদের যোগান দেয়া হয়! একজন বয়স্ক মানুষ গালি দেন নি৷ কারো বিরুদ্ধে বলেন নি শুধু বলেছেন এই আন্দোলন জনগণের বিপক্ষে গেছে। এইটুকু বলার কারণে তাকে এভাবে ধাক্কা দিতে হবে? গায়ে হাত তুলতে হবে?
সড়কে এসব হায়েনাদের ছাড় দিতে দিতে এদের লাই দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলা হয়েছে। কেউ এদের এসব অমানবিকতার দিকে প্রশ্ন তুলে না, সয়ে যায়। বয়স্ক মানুষটা ঘিরে সিংহের মতো সাহসী উচ্চারণে জনগণের মনের কথাই বলেছেন যেন। স্যালুট জানাই এই সিংহ পুরুষকে, আর তিরস্কার হায়েনা বাহিনীকে…
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন….
লেখকঃ ডি সাইফ, এগিয়ে চলো
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.