Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

‘হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসায় কোন তদারকিই নেই’







পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে হয়েছে অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানকে। ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত এই ঘটনার মাঝেই বুধবার রাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বায়েজীদ বোস্তামী থানায় একটি মাদ্রাসা থেকে ১১ বছর বয়সী একজন ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

তার পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে যে, মাদ্রাসার একজন শিক্ষক শিশুটিকে অনেক মারধোর করেছিলেন। দু’দিন আগে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জে একটি মাদ্রাসায় দু’জন কিশোরকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে সেখানে মামলা হয়েছে।



এসব ঘটনার প্রক্ষাপটে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় মনিটরিং বা তদারকির ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। রাজশাহীতে একটি মসজিদের ইমামতি করেন মো: মাসুদউল্লাহ। তিনি গত ১০ বছর ধরে কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করেছেন।

তিনি বলছিলেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া ও এবতেদায়ী মাদ্রাসায় তদারকির ঘাটতি আছে। আর কওমী মাদ্রাসা তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই।

নিজের অভিজ্ঞতায় তিনি এমন পরিস্থিতিই দেখেছেন। “পরিচালনায় যারা থাকেন, বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসায় একক কর্তৃত্ব। মাদ্রাসাগুলোতে ঐ ধরণের কোনো নজরদারি না থাকাতে কেউ সেখানে দায়িত্ব নিয়ে দেখভাল করে না।”



শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে পুরোপুরি সরকারি তিনটি আলিয়া মাদ্রাসা আছে। আর নয় হাজারের মতো আলিয়া এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসা আছে সরকারি এমপিও ভূক্ত।

এর বাইরে সরকারি স্বীকৃত মাদ্রাসা আছে হাজার তিনেক।

এছাড়া কওমী মাদ্রাসার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এই মাদ্রাসাগুলোর বোর্ড বলছে, দেশে ২০ হাজারের বেশি কওমী মাদ্রাসা রয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেন রাশেদা কে. চৌধুরী। তিনি বলেছেন, হাজার হাজার মাদ্রাসা সরকারিভাবে তদারকিতে ব্যাপক ঘাটতি আছে। সেকারণে জবাবদিহিতা না থাকায় সব ধরণের মাদ্রাসা থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে বলে তিনি মনে করেন।



“সরকারি তত্বাবধানে পরিচালিত হয় আলিয়া এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসা। কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে, তাদের মনিটরিংয়ে আমরা নানা ধরণের দূর্বলতা দেখি।”

“এর বাইরে যে হাজার হাজার মাদ্রাসা আছে, কওমী মাদ্রাসাগুলো, তারা কিন্তু সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্বেও কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে চায় নি। আমি নিয়ন্ত্রণের কথা বলছি না। আমি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা বলছি, যার মাধ্যমে সরকারের এক ধরণের তদারকির দায়িত্বভার থাকবে।”

দিনাজপুর জেলার একটি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কওমী মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের।

এই অভিভাবকরা মাদ্রাসার কঠোর শাসনকে মেনে নেন। আর কঠোর শাসনের জন্য অভিভাবকের কাছেও কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় অনেক সময় সেই শাসন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় বলে তিনি মনে করেন।



কওমী মাদ্রাসাগুলোর জন্য বেসরকারিভাবেও একক কোনো বোর্ড নেই। তাদের মধ্যেও বিভক্তি আছে। যদিও কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতা আহমদ শফীকে তারা সবাই মানেন।

মি: শফির নেতৃত্বাধীন বোর্ডের সহসভাপতি মুফতি মো: ফয়জুল্লাহ বলছিলেন, “কওমী মাদ্রাসা যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে কওমী মাদ্রাসার কারিকুলাম, তার অবকাঠামো-এসব বাধাগ্রস্ত হবে বলে মানুষ মনে করে।”

তারা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাদ্রাসা বিভাগকে পৃথক করার পর জেলা উপজেলা পর্যায়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসাগুলোকেই তদারকির কোনো কাঠামো প্র্রতিষ্ঠা করা এখনও সম্ভব হয়নি।



শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আলমগীর বলছিলেন, “আলিয়া মাদ্রাসা যেটা সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়, তারা সরকারের কারিকুলাম এবং নিয়ম কানুন দ্বারা পরিচালিত হয়।”

“কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে, তার জন্য নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি হয়। তবে যতটা মাদ্রাসা আছে, আমাদের তত জনবল না থাকায় নিয়মিত পরিদর্শনে কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে।”




“আর কওমী মাদ্রাসা, এটাতো সরকারের নিয়ন্ত্রণে না। তারা সরকারের সিলেবাসও অনুসরণ করে না। তারা সরকারের কাছে অর্থও নেয় না। তারা স্বাধীনভাবে চলে।”

সরকারি কর্মকর্তারা সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসার তদারকির দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করার কথা বলছেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, কওমী মাদ্রাসার ক্ষেত্রে রাজনীতি এবং ভোটের রাজনীতি রয়েছে। সেজন্য কওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা










You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.