Beanibazarview24.com
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। বেশ কিছু ধাপ পার করে তারপরেই আবেদন করতে হয়। কিন্তু আবেদন করলেই যে ভিসা মিলবে, তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। আবেদনের সাথে কতগুলো ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন কিংবা ভিসা ইন্টারভিউ কতো ভালো হয়েছে, সেটি কোনো বিষয় না। এমব্যাসি কর্তৃক রিজেক্টেড হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়।
আবেদন করার জন্য পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মাসখানেক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে এর প্রথম ধাপ হলো আপনি জার্মানিতে পড়তে যেতে চান, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং আপনি আবেদন করতে পারবেন ও ভর্তির সুযোগ বেশি রয়েছে, এমন বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব কিছু রিকোয়ারমেন্ট এবং অনেক ক্ষেত্রে আবেদনের প্রক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য আলাদা আলাদা ডকুমেন্ট এবং আবেদনপত্র তৈরি করতে হবে। তাছাড়া ইউনি-অ্যাসিস্টের মাধ্যমে আবেদন করলে অ্যাপ্লিকেশন ফি দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করার পর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাড়া পাওয়ার জন্য কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। ভাগ্য ভালো হলে কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েই যাবেন।
ভর্তির সুযোগ পাওয়া মানে হলো পুরো প্রক্রিয়ার মাত্র অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। কঠিন কাজ তো এখনও সামনে পড়েই আছে। আর তা হলো ভিসা। বিভিন্ন এজেন্সি আছে যারা টাকার বিনিময়ে সব ধরনের ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা ও ভিসা আবেদন করতে আপনাকে সহায়তা করবে। তবে নিজেও কাজটি করতে পারেন এবং নিজে করাই ভালো।
ডকুমেন্ট রেডি করার পাশাপাশি ব্লক অ্যাকাউন্টও খুলতে হবে জার্মানির একটি ব্যাংকে যেখানে আপনার জমা করতে হবে ৮,৬৪০ ইউরো। এই টাকা জার্মানিতে আপনার মোটামুটি বছরের খরচের জন্য।
এরপর আপনার কাজ হবে ভিসা ইন্টার্ভিউর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ও ভিসা ফি জমা দেওয়া। সব কিছু ঠিক থাকলে আবেদনের কয়েক সপ্তাহ পর ভিসা পেয়ে যাবেন। এবার আপনার জার্মানি যাওয়ার পালা।
কিন্তু কোনো কারণে যদি এমব্যাসি আপনার ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাহলে কী হবে? প্রথম কথা হলো হতাশ হওয়া যাবে না। এমব্যাসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ থাকে। তবে পুনরায় আবেদন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ থাকে। সেক্ষেত্রে আপীল করলেই যে প্রত্যাশিত ভিসা পাওয়া যাবে, তা নয়।
বিভিন্ন কারণে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে এমব্যাসি। আপনি যদি নিজে থেকে কারণটি শনাক্ত করতে পারেন, তাহলে পরবর্তীবারে আপনার ভিসা পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে।
স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন রিজেক্টেড হতে পারে, এমন কিছু কারণ আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে।
আর্থিক অবস্থা:
জার্মান এমব্যাসি এমন কাউকে ভিসা দেবে না যাকে সেখানে গিয়ে অর্থাভাবে না খেয়ে থাকতে হবে। তারা অন্তত এটুকু নিশ্চিত হতে চায় যে সেখানে গিয়ে পড়ালেখার করার সময়টাতে যেন নিজের খরচ বহন করতে পারেন, এমন আর্থিক সঙ্গতি আপনার আছে। কোনো কারণে যদি জার্মান এমব্যাসি এর উল্টোটা মনে করে, তাহলে ভিসা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেখে তাঁদের যদি মনে হয় প্রথম বছর ৮৬৪০ ইউরো জমা করতে পারলেও পরের বছর থেকে আর পারবেন না, তাহলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে। আর তাই ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনের থেকে বাড়তি অর্থ অ্যাকাউন্টে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
অ্যাকাডেমিক ফলাফল:
জার্মানির শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ কঠিন হিসেবেই বিবেচিত। আর তাই যাদের অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড খুব একটা সন্তোষজনক নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এছাড়া ভালো ফল থাকার পরেও ভিসা ইন্টার্ভিউর সময় যদি মনে হয় আপনি সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন না, তাহলে আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। ফল খারাপ থাকলে আপনার এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে আসুন যাতে করে ইন্টার্ভিউর সময় প্রমাণ করতে পারেন ফল খারাপ হওয়াটা ছিল নিতান্তই অপ্রত্যাশিত।
ভাষাগত দক্ষতা:
জার্মান ভাষা জানাটা সবসময় একটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়। তবে শুধু জানলেই হবে না। জানাটা এমন হতে হবে যেন কারও সাথে ঠিকঠাক কথা বলা যায়। সে ভাষায় যদি কথাই বলতে না পারেন, তাহলে জার্মানি গিয়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ করবেন কীভাবে? তবে জার্মানের পাশাপাশি জানতে হবে ইংরেজিও।
আবেদন পত্র থেকে কিংবা ভিসা ইন্টার্ভিউর সময় যদি মনে হয় আপনার জার্মান দক্ষতা সলার মতো না, তাহলে ভিসা নাও পেতে পারেন।
পড়ার বিষয়:
মাস্টার্সের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে অধিকাংশই তাঁদের পূর্বের বিষয়ের সাথে মিল আছে, এমন বিষয়ের জন্যই আবেদন করে। তবে অনেকেই আবার বিসয় পরিবর্তন করতে চায় যে বিষয়ে তাঁর তেমন কোনো দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা নেই।
এমন হলে ভিসা কর্মকর্তার নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে আপনাকে। তাঁর যদি মনে হয় আপনি এই বিষয় পড়ার যোগ্য না, তাহলে কী হবে বুঝতেই পারছেন। আর তাই নিজ নিজ বিষয়ের জন্য আবেদন করাই শ্রেয়। তবে নিতান্তই অন্য বিষয়ে যেতে চাইলে সে বিষয়ে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতার প্রমাণ থাকাটা বেশ জরুরি।
ব্যক্তি প্রোফাইল:
প্রতিটি উন্নত দেশই কিছু বিশেষ মানুষকে তাদের দেশে যেতে দিতে আগ্রহী। এসব দেশের অধিকাংশই দক্ষ তরুণদের তাদের দেশে পেতে চায় যারা সেখানে গিয়ে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হতে পারবে যা নিজস্ব অধিবাসীদের দিয়ে সম্ভব না। তারা সবসময়ই সম্ভাবনাময় তরুণদের খোঁজে থাকে যারা সে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে।
একই কথা জার্মানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্যও। আপনার বয়স যদি তাদের টার্গেট গ্রুপের মধ্যে না পড়ে কিংবা আপনার শিক্ষাগত ও পেশাগত দক্ষতা তাদের পছন্দের তালিকায় না থাকে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।
ভিসা ইন্টারভিউ:
ইন্টারভিউ সবসময়ই মানসিক চাপের মধ্যে রাখে। আর ভিসা ইন্টারভিউ হলে তো কথাই নেই। ফলে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় সহজেই অনেকে ঘাবড়ে যায়। এ কারণে আগে থেকে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো।
ইন্টারভিউতে ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে জার্মানি এবং সেখানে অধ্যয়নের বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হতে পারে। তারা যদি বুঝতে পারে আপনার এসব বিষয়ে তেমন কিছুই জানা নেই, তাহলেই ঝামেলা।
তাই অবশ্যই ইন্টারভিউর আগে সম্পর্কিত বিষয় এবং জার্মানি সম্পর্কে বিভিন্ন সাধারণ তথ্য অবশ্যই জেনে নিতে হবে। যে স্টেটে পড়তে যেতে চান, সে স্টেট সম্পর্কেও সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.