Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সিলেটে ভ’য়ঙ্কর সব অ’পরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা







সামান্য জুতা হারানো নিয়ে ত’র্কাত’র্কি। এনিয়েই পি’টিয়ে মে’রে ফেলা হয় তানভির হোসেন তুহিনকে। যারা এই হ’ত্যাকা’ন্ডে অংশ নেয় তারাও বয়সে কিশোর। তুহিনেরই সহপাঠী। এই হত্যার ঘটনায় যে দশজনের বি’রুদ্ধে মা’মলা হয় তাদের প্রত্যকেরই বয়সে ১৬ থেকে ১৮’র মধ্যে।

বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ ঘটানা ঘটে। নি’হত ও হা’মলাকারী সকলেই এই কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী।

কেবল এই একটি ঘটনাই নয়। সিলেটে এমন ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে ভ’য়ঙ্কর সব অ’পরাধে। খু’ন, মা’রামা’রি, ছি’নতাই, চাঁ’দাবাজি- এমন সব অ’পরাধে উঠে আসছে কিশোরদের নাম। গত একমাসে নগরীতে অন্তত দুটি হ’ত্যাকা’ন্ডে কিশোররা জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠছে।



সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটজুড়ে মা’দক ও জু’য়াবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এসব অভিযানে গ্রে’প্তারকৃতদের তালিকার একটি বড় অংশে রয়েছে কিশোররা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ’রিদ্রতা, পিতা মাতার অ’বহেলা, পর্যাপ্ত বিনোদনের অভাব ও আর্থ সামাজিক সক্ষমতার অভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর অপরাধ। এসব কারণে অ’পরাধ প্রবণতা এখন সমাজে বেড়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা এক ধরনের মা’নসিক সমস্যা। কিশোর বয়স থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। একজন কিশোর যখন মনে করে যে সে কিছুই করতে পারছে না বা তার দ্বারা কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না তখন থেকেই এ সমস্যার শুরু হয়।



কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে কথা হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম বেলায়েত হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘অ’পরাধ হচ্ছে অপরাধির মত আচরণ। অ’পরাধ ২ প্রকার। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বা আইনি অ’পরাধ। আমাদের এখানে সাধারনত রাষ্ট্রীয় অপ’রাধকে যে গুরুত্ব দেয়া হয় সামাজিক অ’পরাধের ক্ষেত্রে সে গুরুত্ব দেয়া হয় না। অ’পরাধের শুরুটাই হয় সমাজ এবং পরিবার থেকে। যেমন পরিবার বা এলাকার মুরব্বিদের সাথে খারাপ ব্যবহার, পরিবারের অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি। সামাজিক বা পারিবারিক অ’পরাধের জন্য কোন শা’স্তির বিধান নেই। তাই একজন কিশোর অ’পরাধির মত আচরণ করা শুরু করে দেয়। ধীরে ধীরে অ’পরাধ করার মা’নসিকতা আরো পাকা হয় তার ভিতরে।’



সিলেটের প্রেক্ষাপটে এসব অপরাধ সর্ম্পকে বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এই বিভাগে দ্রুত গতিতে নগরায়ন হচ্ছে। এ ধরনের নগরায়নে প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে মাইগ্রেশন বেড়ে যায়। তখন কাজের তাগিদে অন্য এলাকার লোকের সমাগম বেড়ে যায়। যার ফলে স্থানীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাথে অন্যান্য এলাকার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি মিলে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় । এই দুইয়ের মধ্যে কোনটা প্রভাবশালী হবে তা সময় নির্ধারণ করে।



এক সময় দেখা যায় স্থানীয় সংস্কৃতি প্রভাব বিস্থার করতে পারে না। তখন মিশ্র সংস্কৃতি প্রভাব বিস্তার করে। যখনই এধরনের মিশ্র সংস্কৃতির পরিবেশ তৈরি হয় তখন পরিবারের ব্যবস্থাপনা বদলে যায়। যৌথ থেকে একক পরিবার সৃষ্টি হবে। পরিবার থেকে আলাদা হলেই সন্তানের প্রতি পিতা মাতার অবহেলা বেড়ে যায়। তখন শিশু কিশোররা অ’পরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সামাজিক সংহতির অভাব, ক্ষমতার প্রর্দশন, নগরায়ন, কম সহনশীলতা , সং’ঘবদ্ধ অ’পরাধ, দ্রুত নগরায়ন, সাংস্কৃতিক দূরত্ব ও প্রযুক্তির অপব্যবহার কারণে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’



তিনি বলেন, ‘যে অপরাধ ঘটায় সে নিজেকে একা মনে করে। তাকে সর্মথন বা তাঁর সমস্যাগুলো ভাগ করে নেওয়ার জন্য কোনো লোক থাকে না। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় পরিবার তাকে সাহায্য করে না। সে পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন হয়ে পরে।’ পারিবারিক বিচ্ছিনতার কারণে মানুষ হীনমন্যতায় ভোগে। এ সমস্যা থেকে শুধু অপরাধ নয় মানুষ আত্মহত্যাও করে।’

নগরায়ন ও দ্রুত নগরায়নের অপরাধ বৃদ্ধিও জন্য একটি বড় কারন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বিভাগীয় শহরগুলোতে মানুষের ধৈর্যের সক্ষমতা, সহনশীলতা কমছে। অন্যের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার প্রবনতা কমে গেছে। মানুষ প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে পরেছে। এছাড়াও দ্রুত নগরায়নের কারণে আমাদের দেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। যত দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক অগ্রগতি ততটা দ্রুত হচ্ছে না।’




ডিজিটালাইশনের কারণে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমেও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে খুব দ্রুত সহিংস হয়ে উঠছে মানুষ। অল্প ঘটানাতে অধিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে বিরোধে জড়ায় কিশোরা। পরবর্তিতে এই বিরোধ দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে ও অপরাধ ঘটে।

কিশোর অপরাধ নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জেদান আল মুসা বলেন, ‘সিলেটে কিশোর অপরাধ বাড়ছে। এটা অবশ্যই উদ্বেবগজনক। হ’ত্যা, চু’রি, ছি’নতাই, জু’য়াসহ বিভিন্ন অ’পরাধমূলক কর্মকাণ্ডে গ্রে’প্তারকৃতদের মধ্যে কিশোরদের একটি অংশ পাওয়া যায়। এই কিশোর অ’পরাধ প্রতিরোধ করতে শুধুমাত্র আইন প্রয়োগই যথেষ্ট নয়। এজন্য পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে পরিবারকেই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।’




তিনি বলেন, ‘আপনার সন্তান কোথায় যায় কি করে, কার সাথে চলাফেরা করে তার খোঁ’জ খবর রাখতে হবে। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। সন্তানদের চলফেরার শোভনীয় মনে না হলে তার সাথে রাগ না করে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনতে হবে। সর্বোপরী তাকে ভাল থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

জেদান আল মুসা আরো বলেন, ‘কিশোরদের অপরাধ প্রবণ হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত বিনোদনের অভাব। এখন বাচ্চাদের খেলার জন্য মাঠ নেই। মূল ধারার সাংস্কৃতিক চর্চা করছে গুটিকয়েকজন। পাড়া ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের চেয়ে রাজনৈতিক সংগঠন বেশি তৈরি হচ্ছে। যার ফলে কিশোররা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিজেদের বিনোদন ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিচ্ছে। যার ফলে বড় হওয়া আগেই তারা বড়দের মত আচরণ করতে শুরু করে। বয়সের সাথে আচরণের সামঞ্জস্য না হওয়ার কারণে অ’পরাধ প্রবণতা শুরু হয় কিশোরদের। তাই আপনার সন্তানদের প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেন। এরপরও বিভিন্ন কারে ণ এসব ব্যবহার করা প্রয়োজন হলে বাবা মায়ের যেন মনিটরিং থাকে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে কিশোর অ’পরাধ রোধ করতে বিভিন্ন সময় পাড়া-মহল্লা, স্কুল কলেজে গিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করি। কিন্তু পরিবারের চেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো তৈরি হয়নি। তাই কিশোর অপরাধ রোধ করতে পরিবার থেকেই বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।’
সূত্রঃ সিলেট টুডে২৪ ডটকম






You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.