Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

অবৈধপথে ইউরোপ যাত্রায় এগিয়ে সিলেটের তরুণরা







সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মনিরগিয়াতি গ্রামের শিপন আহমেদ। পেশায় ছিলেন অটোরিকশা চালক। বিদেশ যাওয়ার ভূত চাপে তাঁর মাথায়। হালের গরু বিক্রি ও জমি বন্দক করে এবং ধারকর্জ করে দালালের মাধ্যমে শিপনকে ইতালি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তাঁর বাবা।

দালালের সাথে চুক্তি বাবাদ তাকে আট লাখ টাকা দেওয়া হয়। লিবিয়া যাওয়ার পর আরো দুই লাখ টাকা দাবি করে দালালরা। বাধ্য হয়ে সেই টাকাও পরিশোধ করেন শিপনের বাবা হেলাল মিয়া। ইতালি যাওয়ার জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহানোর পর গত ২১ জুন তিউনেশিয়া থেকে দেশে ফিরেন শিপন।



শিপনের মত হাজারো তরুণ ভাগ্য বদলের আশায় ইউরোপ যেতে প্রতিনিয়ত অবৈধ পথে পা বাড়াচ্ছেন। আর এই অবৈধ পথে বিদেশগামীদের মধ্যে সিলেট বিভাগের তরুণরাই সবচেয়ে এগিয়ে। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মানবপাচার নিয়ে এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই চিত্র।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে শুধুমাত্র ইরান থেকে দেশে ফিরেছেন ২৪৫ বাংলাদেশী। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের আছেন ১৪১ জন। ইরান থেকে দেশে ফেরা ২৪৫ জনের মধ্যে আছেন সুনামগঞ্জের ৮৫ জন, সিলেট ২৮ জন, হবিগঞ্জ ২৮ জন, কুমিল্লা ২১ জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১০ জন।



ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মীরা এই গবেষণার জন্য পাচারের শিকার হয়ে দেশে ফেরা ভুক্তভোগীদের সাথে বিমান বন্দরে উপস্থিত থেকে আলোচনা ও তাদের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন। এসব পর্যালোচনা করে সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার জেলা সমূহ চিহ্নিত, টার্গেট দেশ, গন্তব্যে পৌঁছানোর রুট ও মাধ্যম এবং বর্তমান সময়ে পাচারের ধরণ নিয়ে গবেষণা করেন।



গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাচারের শিকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬৮ শতাংশ ছিলেন পুরুষ, ২১ শতাংশ নারী ও ১১ শতাংশ শিশু। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাচারের ধরণ এক থাকলেও এই চার বছরে বদলেছে পাচারের রুট। বর্তমানে পাচারকারীরা ইরাক এবং মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইউরোপ পাঠাচ্ছে।



বিমান বন্দরে ভুক্তভোগীদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ইউরোপে যাওয়ার জন্য তিউনেশিয়া, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এই ৬টি দেশের রুট ব্যবহার করে পাচারকারীরা। মানব পাচারকারীদের সাথে জড়িত আছে বাংলাদেশী, পাকিস্তানী, আফগানিস্থানী এবং ইরানীরা। এই দালালরা বহু দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্নস্থানে অবস্থান করছে।

ব্র্যাকের গবেষণায় উঠে আসে ইরানে মানব পাচার প্রক্রিয়া ও ইউরোপে যেতে কিভাবে নিয়ে যাওয়া হয় কর্মীদের।

জানা যায়, পাচারকারীদের লক্ষ্য থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এবং ওমানে নতুন আসা বাংলাদেশী তরুণদের উপর। যারা বিভিন্ন জায়গায় অনিয়মিত চাকুরী করেন কিংবা স্বল্প বেতনের চাকুরী করে বেশী বেতনের স্বপ্ন দেখেন তাদের। এছাড়াও যারা কয়েক বছর ধরে চাকুরী করে ভাল সঞ্চয় করেছে তারাও তাদের তালিকায় থাকেন।



ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এবং ওমান থেকে নিয়ে আসা হয় ওমানের মাসকট বন্দরে। মাসকট বন্দর থেকে স্পিডবোট এ ওমান উপসাগর অতিক্রম করে নিয়ে যায় ইরানের বন্দর আব্বাসে। তারপর ইরানের বিভিন্ন শহর ও জঙ্গলে আটক রাখে দালালরা। সেখান থেকে ইরাক ও তুরস্ক।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ প্রবাসী কল্যাণ সেলের দায়িত্বরত সহকারী কমিশনার শাকিল আহমদ বলেন, অবৈধপথে যারা বিদেশ যান তাদের কোনো তালিকা আমাদের কাছে নেই। এছাড়াও যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন বা ধরা খেয়ে ফিরে আসছেন এসবের কোনো তালিকা নেই। আমাদের কাছে শুধু যারা বৈধপথে বিদেশগামীদের তালিকা আছে। এছাড়া বৈধ পথে বিদেশ গিয়ে যারা বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফিরে আসছেন তাদের তালিকা আছে। সুনামগঞ্জের যে এত বড় একটা অংশ অবৈধ পথে বিদেশ যান সেটা সম্পর্কে অবগত নই।

তিনি বলেন, তারা অবৈধ পথে যাচ্ছেন সেজন্যই হয়তো আমরা তাদের খোঁজ খবর পাচ্ছি না। আমরা মূলত একাডেমিক কাজগুলো বেশি করি। যেমন হজ্জ যাত্রীদের প্রশিক্ষণ, বিদেশে কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার মরদেহ আনার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এছাড়াও অবৈধ পথে বিদেশ না যাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন সভা সেমিনারের মাধ্যমে সকলকে আহবান জানাই। মানুষজন যাতে বৈধ পথে বিদেশ যান সেজন্য আমরা বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে প্রচারণা করি।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রবাসী কল্যাণ শাখার দায়িত্বরত সহকারী কমিশনার শামমা লাবিবা অর্ণব বলেন, সিলেট বিভাগের যে এত সংখ্যক লোক অবৈধ পথে বিদেশ যাচ্ছেন সেই তথ্য আমার জানা নেই। দালালদের মাধ্যমে কেউ বিদেশ গেলে আমাদের কাছে কোনো ডাটা থাকে না। কারণ যারা অবৈধ পথে বিদেশ যান তারা মূলত সব কিছু গোপন করেই যান। পরবর্তীতে যখন সমস্যা হয় তখন সেটা সবার কাছে প্রকাশ পায়।

তিনি বলেন, আমরা মূলত প্রবাসীদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকি। এছাড়াও যারা বৈধভাবে বিদেশ যাচ্ছেন তাদির বিপদে আপদে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করি।

তবে মানব পাচার রোধে আমরা জেলা কমিটির মাধ্যমে সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠক করি। বিভিন্ন ভাবে সিলেটের বেকার যুবক ও অভিবাদকদের সচেতন করার চেষ্টা করি। শুধু তাই নয় ট্রাভেলস এজেন্সির লাইসেন্স নবায়ন করার সময়ও আমরা একজন অফিসার নিয়োগ করে তদারকি করাই। কোনো এজেন্সি যদি মানবপাচারের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে তার লাইসেন্স নবায়ন করা হয় না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি।














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.