Beanibazarview24.com
অশালীন পোশাকে সংবাদ পাঠকে সমর্থন জানানোর পর নিজের মত পাল্টিয়ে অবশেষে দুঃখ প্রকাশ করলেন বিজয় টিভির নির্বাহী পরিচালক নায়লা বারী। নিজের ফেসবুক ওয়ালে দুঃখ প্রকাশ করে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।
তিনি লিখেন, ‘বিজয় টিভির প্রিয় দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীবৃন্দ, একটি অভ্যন্তরীণ ত্রুটির কারণে, গতকাল সংবাদ পরিবেশনে পোশাক বিষয়ক যে সমস্যাটি হয়েছিলো, তা আমাদের গোচরীভূত হওয়া মাত্রই, সামাজিক গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটে প্রকাশিত সকল মাধ্যম হতে অপসারণ করা হয়েছে। বিষয়টিতে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এ ধরনের ত্রুটি যেন ভবিষ্যতে আর না হয়, সেজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্রডকাস্টার এসোসিয়েশান (এনবিএ)’এর সভাপতি ও এনটিভির সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক মুমতাহিনা রিতু একুশে পত্রিকাকে জানান, বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ার সাথে সাথেই আমি বিজয় টিভির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি এবং তীব্র নিন্দা জানাই। পরে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং দুঃখ প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট রাত ১১টার বিজয় টিভির সংবাদে চ্যানেলটির সংবাদ পাঠিকা সাজিয়া আফরোজের খোলামেলা পোশাকে সংবাদপাঠের পক্ষ নিয়ে মত দেন নায়লা বারী। তখন তিনি বলেন, বিনোদনমূলক চ্যানেল হিসেবে বিজয় টিভি প্রতিষ্ঠিত। ফলে এই চ্যানেলের সব কিছুই বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং বিনোদনকে রিপ্রেজেন্ট করে। নিউজ প্রেজেন্টার শাড়ি এবং বøাউজ পড়েছিলো, কিন্তু একটু ফ্যাশন্যবল। যা সাধারণ বৃত্তের বাইরে। মিডিয়ার সবাই বৃত্তের বাইরে কাজ করে নতুন কিছু নিয়ে আসতে চায়। ফলে এটি স্টাইলের একটি অংশমাত্র। বাঙালি একসময় ব্লাউজ পড়তো না। আমরা পদ্মা নদীর মাঝিতে কপিলাকে তাই দেখেছি। কিন্তু সভ্য সমাজে বøাউজ একটি অপরিহার্য অংশ। ফলে এই ডিজাইনটিকে মোটেও খারাপ বলে আমি মনে করি না। কারণ বর্তমানে সব ফ্যাশন হাউজগুলো স্লিভলেস ডিজাইনের ব্লাউজ প্রমোট করে। তাহলে নিউজে নয় কেন?
প্রসঙ্গত, বিজয়টিভির এধরনের অপেশাদারী আচরণে নিন্দার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেক গণমাধ্যমকর্মীই খোলামেলা পোশাকে সংবাদ পাঠের নিন্দা জানান।
এনটিভির সংবাদ পাঠক রাইসুল হক ফেসবুকে লেখেন, ‘সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এই ধরনের পোশাক কতটা আমাদের ডিসেন্ট প্রতিনিধিত্ব করে? আর আমাদের সিনিয়রদের দেখানো পথটাকে অসম্মানিত করে। হয়তো আমি ব্যকডেটেড। পোশাকের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় বিজয় টিভি কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হওয়া দরকার।’
এটিএন নিউজের সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক সাবিনা সাবী লিখেছেন, ‘আমাদের গণমাধ্যমে একটা নিউজ রুমের সবচেয়ে অবহেলিত জাতি বলে বিবেচনা করা হয় প্রেজেন্টেশন টিমকে। নিউজরুমের বাকীরা মনে করে এরা গোবরসর্বস্ব চেহারাসর্বস্ব জাতি। এরা কাজ করতে আসেনি। সেখান থেকে সবাই যখন মাথা উঁচু করে নিজের সম্মান নিজের মেধাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াই করছেন তখন এই গুটিকতেক প্রেজেন্টারদের গ্ল্যামারসর্বস্ব হয়ে ঝুলে থাকার চেষ্টাটা নেহায়েত লজ্জার। দয়া করে আপনারা নিজেদের এহেন নাদানির জন্য জনতার সামনে অন্যদের ছোট করবেন না। কারণ এই অধিকার আপনাদের কেউ দেয়নি। পারসোনাল লাইফ আর পাবলিক লাইফ এক করার প্রয়োজন নাই। নিউজরুমে যখন পা দিয়েছেন তখনই মাথায় ঢুকিয়ে নিবেন যে নিউজরুমের যে জায়গায় কাজ করেন না কেন দিনশেষে আপনি একজন সাংবাদিক। প্লিজ সবাই কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি না করে কথাগুলো যদি মাথায় ঢুকিয়ে নেই সকলের মঙ্গল হবে এটা আমার বিশ্বাস।’
সংবাদ পাঠকদের সংগঠন ন্যাশনাল ব্রডকাস্টার অ্যাসোসিয়েশন (এনবিএ)এর যুগ্ম সম্পাদক ও মাই টিভির সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল একুশে পত্রিকাকে জানান, এমন পোশাক পরে সংবাদ পাঠ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
একজন সংবাদ পাঠক শুধু একটি টিভি চ্যানেল নয় পুরো গণমাধ্যমেরই প্রতিনিধিত্ব করে। বিজয় টিভির সংবাদ পাঠিকা যে পোশাক পড়ে সংবাদ পাঠ করেছেন তা কোনোভাবেই আমাদের গণমাধ্যম কিংবা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে না।
উনি ব্যক্তিগতভাবে যে পোশাকই পরিধান করেন না কেন সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, কিন্তু উনি যেহেতু সংবাদ পাঠের মাধ্যমে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেক্ষেত্রে শালীনতার বিষয়টি তাঁর মাথায় থাকা উচিত ছিলো।
সূত্রঃ একুশে পত্রিকা
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.