Beanibazarview24.com
সংবিধানের পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও সেখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নি’র্যাতন চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাগুলোর মতে, ভারত শাসিত এই অঞ্চলটিতে চলমান বিদ্রোহ দ’মন করতে নি’র্যাতনকেই একমাত্র অ’স্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে ক্ষমতাসীন মোদী সরকার।
রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরসহ অঞ্চলটির বিভিন্ন জেলায় কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহ দ’মনের নামে প্রশাসন কাশ্মীরিদের ব’ন্দি করে জল-বোর্ডিং, ঘুম বঞ্চনা ও যৌ’ন হ’য়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের নি’র্যাতন করে থাকে।
গত সোমবার (১২ আগস্ট) রাজ্যের স্বজনহীন ব্যক্তিদের সংগঠন (এপিডিপি) এবং জম্মু ও কাশ্মীরের কোয়ালিশন অফ সিভিল সোসাইটির (জেকেসিসিএস) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে ব’ন্দিদের নিঃ’সঙ্গ জীবন, ঘু’ম বঞ্চনা ও ধ’র্ষণসহ নানা নি’র্যাতনের কথা বলা হয়েছে। যা এতদিন কাশ্মীরিদের বি’রুদ্ধে নি’র্যাতনের কৌশল হিসাবে ব্যবহার করা হতো।
৫৬০ পৃষ্ঠার সেই প্রতিবেদনে বন্দিদের করা নি’র্যাতনের অন্যান্য পদ্ধতির কথাও উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- বৈদ্যুতিক শর্ট দেওয়া, ছাদ থেকে ঝুলিয়ে রাখা, আ’টককৃতদের মাথা বারংবার পানিতে ডু’বিয়ে রাখা (যা কখনো কখনো মরিচের গুঁড়ো দিয়ে মিশ্রিত হয়)।
আটককেন্দ্রগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া বন্দিদের দাবি, নি’র্যাতনের সময় তাদের আগে ন’গ্ন করা হতো। তখন আটককেন্দ্রের কর্মীরা তাদের শক্ত লা’ঠি দিয়ে পি’টিয়ে অ’জ্ঞান করে শরীরে হি’টার কিংবা সিগারেটের আ’গুন লাগিয়ে দিত।
সদ্য মুক্তি পাওয়া মঞ্জুর আহমদ নাইকু কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম ‘আল-জাজিরা’কে বলেন, ‘আমি আর আমার বন্ধু মোজাফফর আহমেদ মির্জা কারাগারে ব’ন্দি থাকা কালীন অনেক নি’র্যাতনের শি’কার হয়েছি। আমাদের ম’লদ্বার দিয়ে একটি রড ঢোকানো হয়েছিল। এতে আমাদের অভ্যন্তরীণ অ’ঙ্গগুলোর একাধিক অংশ ফেটে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘মির্জার ফুসফুস ফেটে যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃ’ত্যু হয়। তবে পাঁচটি অ’স্ত্রোপ’চারের মাধ্যমে আমি জীবন রক্ষা পাই।’
নাইকু বলেন, ‘এগুলো ছাড়াও আমার লি’ঙ্গের চারপাশে একটি কাপড় জড়িয়ে আ’গুন ধ’রিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটিতে এখন পর্যন্ত স্থানীয়দের সশস্ত্র বিদ্রোহ দ’মনের নামে সরকার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে। গত বছর সংগঠনটির মানবাধিকার সংস্থা স্থানীয়দের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল।
যার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানও রাজ্যটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার জন্য কমিশন অফ ইনকয়েরির (সিওআই) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট (সোমবার) ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছিল ক্ষমতাসীন মোদী সরকার। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে বিতর্কিত লাদাখ ও জম্মু ও কাশ্মীর সৃষ্টির প্রস্তাবেও সমর্থন জানানো হয়।
এসবের মধ্যেই চলমান কাশ্মীর ইস্যুতে পাক-ভারত মধ্যকার সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে একে একে ভারত সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য, যোগাযোগসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। যদিও এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পাক সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি চীন; আর ভারত পাশে পেয়েছে রাশিয়াকে।
এ দিকে এসবের প্রেক্ষিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর ইস্যুটি ভীষণ সংবেদনশীল; যে কারণে এ বিষয়ে সরকারের আরও সময় নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যটির একটি আঞ্চলিক দলের করা পিটিশনের জবাবে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) আদালত এমনটাই জানিয়েছেন বলে দাবি গণমাধ্যম ‘এনডিটিভি’র।
অপর দিকে গত ১০ আগস্ট ন্যাশনাল কনফারেন্সের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা পিটিশনে বলা হয়, ‘সংবিধানের ৩৭০ (১) (ঘ) অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধানকে পাইকারিভাবে পুনস্থাপিত করার কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি।’ যে কারণে সুপ্রিম কোর্টকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
আদালতে কাশ্মীরি এই পার্টির করা পিটিশন অনুযায়ী, রাজ্যের মানুষ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের (কাশ্মীরের বিধানসভা) সঙ্গে আলোচনা ও কোনো ধরনের সম্মতি না নিয়েই অঞ্চলটির দীর্ঘ দিনের বিশেষ মর্যাদা একতরফাভাবে রদ করা হয়েছে। মূলত যার মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং স্বাধীনতাকে সামান্যতম মূল্যায়ন করা হয়নি; যা কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
সূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.