Beanibazarview24.com
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) আয়ারা টাকার জন্য রোগীকে দেরিতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ায় গর্ভেই সন্তানের মৃ’ত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ হালিমা বেগম নামে এক আয়াকে আ’টক করেছে। এর সঙ্গে জড়িত অন্য দুই আয়া সন্ধ্যা রানী মালী ও পপি আক্তার পালিয়ে গেছে বলে জানায় পুলিশ। প্রসূতির গর্ভেই সন্তানের মৃ’ত্যুর জন্য আয়ারা দায়ী বলে জানিয়েছেন প্রসূতি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. স্নিগ্ধা।
রোগীর স্বজনরা জানান, বুধবার দুপুরে সিজারিয়ানের মাধ্যমে বিউটি বেগম একটি মৃ’ত সন্তান প্রসব করেছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন অপারেশন করতে দেরি হয়ে যাওয়ায় পেটের ভেতরেই শিশুটি মা’রা গেছে। ভুক্তভোগী বিউটি ঝলকাঠির নলছিটির কান্দেবপুর গ্রামের সোহেল হাওলাদারের স্ত্রী। এটাই তাদের প্রথম সন্তান ছিল।
শারমিন আক্তার নামে বিউটির এক আত্মীয় জানান, বুধবার সকালে প্রসব ব্যথা শুরু হলে বিউটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তাদের স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু তা না হওয়ায় সকাল ১১টার দিকে চিকিৎসকরা রোগীকে সিজারিয়ানের জন্য দ্রুত পঞ্চম তলার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে বলেন।
এ সময় রোগীকে ট্রলিতে করে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রসূতি ওয়ার্ডের আয়া হালিমা বেগম, সন্ধ্যা রানী ও পপি আক্তারকে অনুরোধ করা হয়। আয়ারা রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। ওই সময় রোগীর সঙ্গে কোনও পুরুষ ছিল না। তাই টাকা পরে দেওয়া হবে বললেও তারা রোগী নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। বিষয়টি গাইনি বিভাগের চিকিৎসককে জানানোর পর তিনি আয়াকে দ্রুত রোগী পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপরও কোনও কাজ হয়নি। শেষে সন্ধ্যা রানীর হাতে ১৫০ টাকা দিলে তারা রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দেয়।
ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. স্নিগ্ধা জানিয়েছেন, প্রসূতির বাচ্চা স্বাভাবিক ছিল বলে প্রথমে নরমাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করা হয়। পরে অবস্থা খারাপ হলে তার সিজারিয়ান করা হয়। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছাতে অনেক দেরি হওয়ায় সন্তান গর্ভেই মা’রা গেছে। এজন্য আয়াদের দায়ী করেন ওই চিকিৎসকও।
মৃ’ত সন্তান প্রসবের খবর ছড়িয়ে পড়লে রোগীর উত্তেজিত স্বজনরা নার্সদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি অভিযুক্ত আয়াদের মধ্যে হালিমা বেগমকে আ’টক করে। বাকি দুই আয়া সন্ধ্যা রানী মালী ও পপি আক্তার পালিয়ে গেছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাশেদুল ইসলাম বলেন, যে তিনজন আয়া রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার এবং অসহযোগিতা করেছে তারা কেউ সরকারি কর্মচারী নয়। তাদের মধ্যে দু’জন চুক্তিভিত্তিক এবং আ’টক হালিমা বেগম বহিরাগত আয়া। সে অবৈধভাবে প্রসূতি ওয়ার্ডে কাজ করে আসছিল। চুক্তিভিত্তিক আয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রসূতির স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে আয়া হালিমা বেগমকে আ’টক করা হয়েছে। এই ঘটনায় রোগীর স্বজনরা মা’মলা করবে বলে জানিয়েছেন। মা’মলা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘হালিমা বেগমকে আমিই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। রোগীর স্বজনদের মা’মলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই তিনজনকে মেডিক্যালের কোনও কাজে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি ট্রলি নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেউ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পরিচালক।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.