Beanibazarview24.com
চাঁদা না দেয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রা’সীদের গু’লীতে শরীয়তপুরের দুই ব্যবসায়ী নি’হত হয়েছে। এ সংবাদ পৌছানোর পর নিহ’ত দুই ব্যবসায়ীর পরিবার, স্বজনসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহ’তরা হলেন-শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিসার ইউনিয়নের কাইছকড়ি গ্রামের মৃ’ত শহর আলী মাঝির ছেলে উজ্জল মাঝি (৩১) ও নড়িয়া উপজেলার কাপাশপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্যার ছেলে আলম মোল্যা (৩৫)।
নিহ’তের স্বজনরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক দিন ধরে সেখানের সন্ত্রা’সীরা উজ্জল ও আলম মোল্যার কাছে চাঁদা দাবী করছিল। চাঁদা না দেয়ায় তাদেরকে সন্ত্রা’সীরা গু’লি করে হ’ত্যা করেছে। নিহ’তদের স্বজনরা দ্রুত তাদের ম’রদে’হ ফিরে পেতে সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
নিহ’তদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উজ্জল মাঝি দীর্ঘ ১১ বছর যাবত দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকেন। সেখানে ক্যাপটাউন শহরে একটি মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন। উজ্জল ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট। ১১ বছরের মধ্যে বৈধ কাগজ না থাকায় সে বাড়ি আসতে পারেনি। মাত্র দেড়মাস পূর্বে টেলিফোনের মাধ্যমে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা গ্রামের ফারুক বেপারীর মেয়ে ফারজানা আকতার সুরভীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে সুরভীকে তুলে আনার কথা ছিল। উজ্জল রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার সময় রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টা ও বাংলাদেশী সময় রাত সাড়ে ১১টায় তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিল। এমন সময় সন্ত্রা’সীরা এসে চাঁদা না পেয়ে তাকে পর পর দুটি গু’লি করে। এতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
এ সময় উজ্জলের দোকান কর্মচারী একই জেলার নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের কাপাশপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্যার ছেলে দু’সন্তানের জনক আলম মোল্যা বাসায় রান্না করছিলেন। সন্ত্রা’সীরা বাসায় ঢুকে আলম মোল্যাকেও মাথায় অ’স্ত্র ঠেকিয়ে গু’লি করে হ’ত্যা করে। আলম মোল্যা দেড় বছর আগে জমি বিক্রি করে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায়। সে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তার মা নেই। বৃদ্ধ বাবা প্যারালাইজড হয়ে ঘরে পড়ে আছেন।
নিহ’ত আলম মোল্যার স্ত্রী রুমাসহ আফসা নামের ৪ বছরের এক মেয়ে ও হানিফ নামে আড়াই বছরের এক ছেলে রয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা স্বজনদের মাধ্যমে এ সংবাদ শোনার পর উভয় পরিবার ও তাদের স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। উজ্জলের বৃদ্ধ মা মরিয়ম বিবি কাদতে কাদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। শুধু ছেলের জন্য আহাজারি করছেন। আলমের স্ত্রী রুমা ও বোন নাছিমার আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। বাবা ইব্রাহিম কথা বলতে পারছেন না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে বুক চাপড়িয়ে কাঁদছেন। পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনেরা খবর পেয়ে নিহ’তদের বাড়ি এসে ভিড় করছেন। নিহ’তদের লা’শ ক্যাপটাউন শহরের একটি হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের উভয়ের লা’শ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে আফ্রিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশীরা নিহ’তদের পরিবারকে জানিয়েছেন।
নিহ’ত উজ্জল মাঝির ভাবী পারভিন আকতার বলেন, আমার দেবর উজ্জল ১১ বছর যাবত দক্ষিণ আফ্রিকা থাকেন। সেখানে মুদি দোকানে ব্যবসা করেন। বৈধ কাগজ না থাকায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না। কাগজ করার জন্য জমা দিয়েছেন। কাগজ হাতে পেলেই বাড়ি আসবেন বলে দেড় মাস পূর্বে ফোনের মাধ্যমে তার বিয়ের কাবিন হয়েছে। তাকে সন্ত্রা’সীরা চাঁদার জন্য গু’লি করে হ’ত্যা করেছে। আমরা সরকারের মাধ্যমে তার লা’শটি ফিরে পেতে চাই।
নিহ’ত আলম মোল্যার বোন নাছিমা বলেন, আমার একমাত্র ভাই আলম মোল্যা দেড় বছর পূর্বে আমার জমি বিক্রি করে বিদেশে গেছে। আমার ভাইকে সন্ত্রা’সীরা বাসায় গিয়ে গু’লী করে হ’ত্যা করেছে। এখন আমাদের উপায় কি ? এ সংসারের একমাত্র উপার্জন কারী ছিল সে। এখন কিভাবে এরা বেচে থাকবে। কে দিবে তাদের টাকা পয়সা । কে করবেন তাদের দেখা শোনা। সরকারের কাছে আমাদের দাবী আমার ভাইয়ের লা’শটা যেন দেশের মাটিতে দাফন করতে পারি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.