Beanibazarview24.com
নিজের পয়সায় রাস্তা সারানো? এসব কেউ করে নাকি? প্রশ্ন করলে কেঁদে ফেলেন ৪৬ বছর বয়সী দাদারাও বিলহোর। ২০১৫ সালের রাস্তার খানাখন্দই কেড়ে নিয়েছিল তাঁর ১৬ বছরের ছেলে প্রকাশকে। তারপর থেকে রাস্তা সারিয়ে চলেছেন এই সবজি বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘‘আর কোনও বাবা-মা যেন সন্তানহারা না হন! সেজন্যই রাস্তায় গর্ত দেখলেই বুজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার ছেলেও নিশ্চয় তা-ই চাইত।’’
বালি-সিমেন্ট মাখা এক হাতে, অন্যহাতে সেই মশলা মাখার কড়াই। রাস্তায় রাস্তায় বুজিয়ে দিচ্ছেন খানাখন্দ। কখনও বা রাস্তা থেকেই কুড়িয়ে নিচ্ছেন ইটের টুকরো। ঢেকে দিচ্ছেন পুরসভা বা পূর্ত দফতরের কর্মীদের কাজের নমুনা— বড় বড় গর্ত! যাতে কেউ পড়ে না যান। মুম্বাইয়ের আন্ধেরির (পূর্ব) বিজয়নগরের আশপাশের রাস্তায় ঐ মধ্যবয়সীর এ ধরণের পথ-সেবা এখন পরিচিত দৃশ্য।
ওই বছর ২৮ জুলাই ভানদুপের এক পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এক কাজিনের সঙ্গে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিল প্রকাশ। জোগেশ্বরী-ভিখরোলি সংযোগ সড়কে চলছিল পৌরসংস্থার কাজ। রাস্তা খোঁড়া হলেও বিভিন্ন জায়গায় তা ভরাট করা হয়নি।
প্রবল বৃষ্টির পর সেই সব গর্তই ছিল পানিতে ভরা। পৌরসংস্থার পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দিয়ে লাগানো হয়নি কোনও বোর্ডও। তেমনই একটি গর্তে পড়ে উল্টে যায় প্রকাশদের মোটরবাইক। প্রকাশ এবং তার কাজিন কয়েক ফুট দূরে ছিটকে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় প্রকাশের। কাজিন রাম গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
ছেলের মৃত্যুর সুবিচার পেতে আইনি লড়াইও চালাচ্ছেন বিজয়নগরের এই বাসিন্দা। তিনি জানান, পুরসভার বরাত পাওয়া যে বেসরকারি সংস্থা রাস্তা খুঁড়েছিল, সেটির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ (অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু) এবং ৩৩৮ (প্রাণঘাতি আঘাত করা) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাস্তা মেরামতির কাজে যুক্ত বম্বে পৌরসংস্থার এক কর্মকর্তাকে এবং এক ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তাঁদের জামিন দেওয়া হয়।
প্রথম প্রথম এলাকার লোকেরা ছিলেন নিছকই কৌতূহলী। এখন দাদারাও যেখানেই রাস্তা সারাতে যান, এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। সাধ্যমতো সাহায্য করেন তাঁকে। দাদারাও রাস্তা সারান আর কাঁদেন। আমার মেয়ে রয়েছে। বাড়িতে আমি কান্নাকাটি করলে ও আরও ভেঙে পড়বে। তাই…!’’ তাঁর ক্ষত শুধু ভরিয়ে যেতে থাকে রাস্তার গর্ত।
মুম্বাইয়ের রাস্তার খানা-খন্দের জন্য গিনেস বুকে শহরের নাম তোলানোর দাবি বহু দিন ধরেই রয়েছে বাণিজ্যনগরীর বাসিন্দাদের। নবীন লাদে নামে মুম্বইয়ের এক বাসিন্দা একটা ওয়েবসাইটই খুলে ফেলেছেন এ ব্যাপারে। তার অ্যাড্রেস ‘www. mumbaipotholes. com‘। সরকারি পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, রাস্তার খানা-খন্দের জন্য দুর্ঘটনায় দেশে প্রতি ১০ দিনে মৃত্যু হয় এক জনের। ২০১৭ সালে এই ভাবে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৭ জনের।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.