Beanibazarview24.com
পদ হারানো ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সংগঠনটির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের টিএসসিতে তারা বিক্ষোভ করেন।
এসময় পদবঞ্চিতরা বলেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে তার তদন্ত করে বিচার করতে হবে। শুধু পদ থেকে সরিয়ে দেয়াই তাদের একমাত্র শাস্তি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকীব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর ঘণ্টা দুয়েক পর টিএসসি হয়ে শোভন-রাব্বানীকে বহনকারী গাড়ি এলিফোন্ট রোডের দিকে যাওয়া সময় তাদের পক্ষেও স্লোগান দেন কিছু শিক্ষার্থী। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এছাড়া শোভন-রাব্বানীকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আনন্দ-উল্লাস করেছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগের কমিটির নতুন দায়িত্বশীলদের নাম ঘোষণার পরপরই ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখাগুলোর নেতাকর্মী টিএসসিতে জড়ো হতে থাকেন।
এসময় তারা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন এবং আনন্দ-উল্লাস করেন। রাত ১২টা পর্যন্ত সেখানে তাদের স্লোগান দিয়ে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১০ মাস আগেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের পদ হারালেন।
তীব্র বিতর্কের মুখে তারা পদত্যাগপত্র জমা দিলে তা গ্রহণ করা হয়। এর আগে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিতে বলা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ সেপ্টেম্বর দলের মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
এরপর ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর গণভবনে দলীয় সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ফেরত আসেন শোভন-রাব্বানী। এরই মধ্যে তাদের গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত হয়ে যায়।
এরপর ভুল সংশোধনের সুযোগ চেয়ে ও ক্ষমাপ্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছিলেন গোলাম রাব্বানী। শুক্রবার ‘ভিসির কাছে চাঁদা দাবি’- শিরোনামে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হলে আলোচনা নতুন মোড় নেয়।
সারা দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি নিন্দার ঝড় ওঠে।
কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ১ বছর না পেরোতেই শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা উঠে আসে।
এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না করা অন্যতম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা, ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও ছিল।
এর বাইরে রাতজাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কর্মসূচিতে বিলম্বে যাওয়া, প্রধান অতিথিদের বসিয়ে রাখা, জেলা সম্মেলন করতে না পারা, বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ও এ তালিকায় রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগও আছে। এসব দেখে-শুনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.