Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

‘আমাকে এই জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন’ :লিবিয়ায় বন্দিদশা থেকে বাংলাদেশির আর্তনাদ

‘আমাকে বাঁচান। আমি এই জীবনে কখনও বিদেশের নাম নেব না। আমাকে এই জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমাকে ওরা মেরে ফেলবে।’ এভাবেই দেশে স্বজনদের কাছে বাঁচার আকুতি জানান বিদেশে দালাল চক্রের হাতে জিম্মিরা। প্রায় চার মাস যাবত জিম্মি তারা। রাখা হয়েছে টর্চার সেলে। এটি অন্ধকার ছোট একটি কক্ষ। সেখানে রাখা হয়েছে ১০ থেকে ১২ জনকে।

রাত এলেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে দালালরা। একেক জন করে ডেকে নেয় আলাদা কক্ষে। তারপর কান্নায় ভারি হয়ে উঠে বাতাস। বিদেশে-বিভূঁইয়ের এই কান্না চার দেয়ালেই আটকে থাকে। তবে দালালরা মাঝে-মধ্যে কান্নার শব্দ শোনায় দেশে থাকা স্বজনদের। কান্নার শব্দ শুনিয়ে দাবি করে টাকা। দাবিকৃত টাকা না দিলে হত্যা করার হুমকি দেয়। এখানেই শেষ নয় অত্যাচারের। মারধর ছাড়াও খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়। খাবার নেই, পানি নেই। দিনে একবার, কখনও কখনও এক দিন পরপর নাম মাত্র খাবার ও পানি দেয়া হয়। খেয়ে না খেয়ে শরীর শুকিয়ে হাড্ডিসার।

বিভিন্ন উন্নত দেশের কথা বলে তাদের লিবিয়ায় এনে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দিনের পর দিন অত্যাচার করে বাড়িতে থাকা তাদের স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এভাবেই লিবিয়ার টর্চার সেলে অন্যান্যদের সঙ্গে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার তারাশুলের মো. সামাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে মানবপাচার ট্রাইবুন্যালে মামলা করেছেন তার চাচা আব্দুল কদ্দুছ।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাতেন তিনি। গরীব কৃষক পরিবারের এই সন্তানকেই টার্গেট করে দালাল চক্র। একই এলাকার গণেশপুরের নুর আলী তাকে প্রলোভন দেখায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় লক্ষাধিক টাকা বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে। সেই প্রলোভনে পা দেন সামাজুল। কথানুসারেই এক মাসের মধ্যে নগদ তিন লাখ টাকাসহ ভিসার জন্য পাসপোর্ট, ছবি নুর আলীর নিকট দেন তিনি। অতঃপর গত ১৮ই মে নুর আলী তাকে জানান, সাউথ আফ্রিকার ভিসা হয়েছে। পরদিন ফ্লাইট। দ্রুত আরও দেড় লাখ টাকা দিতে হবে। এবার তাড়াহুড়া করে নিজের শেষ সম্বল সিএনজি অটোরিকশা বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা তুলে দেন নুর আলীর হাতে।

১৯শে মে বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিমানে তুলে দেয়া হয় সামাজুলকে। জানানো হয়, দুবাইয়ের শারজাহ বিমানবন্দরে দালাল চক্রের লোকজন তাকে গ্রহণ করবে। সেখান থেকে স্থল পথে সাউথ আফ্রিকা পাঠানো হবে তাকে। স্বজনরাও তাকে বিদায় জানালেন। বিমানটি আকাশে উড়লো।

সেই যে দেশ ছেড়ে গেলেন এরপর থেকে সামাজুলের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। দীর্ঘদিন তার কোনো হদিস নেই। দালাল নুর আলী, এই চক্রের সদস্য রাসেল মিয়া, রাকিব হাসান, নাসির, সুজন, জামান কেউ কোনো সন্ধান দিতে পারে না। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান স্বজনরা। এভাবে একে একে প্রায় তিন মাস কাটে। সামাজুল বেঁচে আছে কি-না, তাও জানেন না তারা।

গত ১৫ই আগস্ট হঠাৎ করেই ফোনে সামাজুলের কল। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সামাজুল। তিনি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার কথা বলে তাকে লিবিয়ায় আটকে রাখা হয়েছে। একটি ছোট অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছে সামাজুলসহ আরও ১০-১২ জনকে। লিবিয়ায় চক্রটির হয়ে কাজ করে অ্যারাবিয়ানরা। প্রতি রাতেই বেদম প্রহার করা হয় তাদের। চক্রের সদস্যদের দাবি একটাই, টাকা চাই। দেশ থেকে টাকা নিতে চাপ দিচ্ছে তারা।

সামাজুলের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। সামাজুল হাতে-পায়ে ধরে অনুনয় করেন। সামাজুল জানান, তিনি গরীব। তার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। সেটিও বিক্রি করে দিয়েছেন বিদেশে যাওয়ার জন্য। এখন তার কিছুই নেই। চক্রের সদস্যদের তাতে মায়া হয় না মোটেও। বরং টাকা না পেয়ে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। আগুন দিয়ে রড গরম করে ছ্যাকা দেয়া হয়। লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করা হয় তাকে। নামমাত্র খাবার দেয়া হয়। কোনোভাবে বেঁচে আছেন তিনি।

সামাজুল ইসলামের বড় ভাই তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। সামাজুল তার শেষ সম্বল বিক্রি করে সাউথ আফ্রিকা যেতে চেয়েছিলো। দালালরা প্রতারণা করে তাকে লিবিয়া নিয়ে বন্দি করে নির্যাতন করছে। তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এই অবস্থায় আমার চাচা আদালতে মামলা করেছেন। মামলা দায়েরের পর দালালরা আমার ভাইকে ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এখনও সামাজুলকে ছাড়েনি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.