Beanibazarview24.com
ভাগ্যান্বেষণে ঝুঁকি নিয়ে স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে পা বাড়াচ্ছেন সিলেটের বিপুল সংখ্যক তরুণ ও যুবক। কিন্তু তাদের সবার ভাগ্যের চাকা ঘুরছে না, কারো কারো ভাগ্য তাকে টেনে নিচ্ছে পরপারে। এই যেমন ২৬ বছর বয়সী যুবক শাহীন আহমদ স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চরম ঝুঁ’কি নিয়েছিলেন।
এক দেশ থেকে পাড়ি জমাচ্ছিলেন আরেক দেশে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই মেসিডোনিয়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহ’ত হন এই যুবক। প্রায় এক মাস অন্তহীন অপেক্ষার পর তার মৃ’ত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছে পরিবার।
শাহীন আহমদ সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের পাগইল গ্রামের মখলিছুর রহমানের ছেলে। একই গ্রামের আরেক যুবক জহির উদ্দিন মেসিডোনিয়া থেকে শাহীনের মৃ’ত্যুর বিষয়টি তার পরিবারকে জানিয়েছেন।
শাহীনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার জন্য দুই বছর আগে প্রথমে ইরাকে যান শাহীন। সেখান থেকে দালালের মাধ্যমে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে যান তিনি। বেশ কিছুদিন গ্রিসে অবস্থানের পর গত ২৩ আগস্ট ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে আরো ১৪ জনের সাথে কাভার্ড ভ্যানে করে রওয়ানা দেন শাহীন। দালালচক্র তাদেরকে অবৈ’ধভাবে সড়কপথে ইতালি নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ইতালি যাওয়ার আগেই মেসিডোনিয়ার দেবার নামক স্থানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ওই কাভার্ড ভ্যান। পেছন থেকে একটি ট্রাক ওই ভ্যানটিকে ধাক্কা দিয়েছিল।
এ দুর্ঘটনার পরপরই ভ্যানটিতে আগুন ধরে যায়। এতে গুরুতর আহ’ত হন শাহীন ও জহিরসহ অন্যরা। স্থানীয় পুলিশ তাদেরকে উ’দ্ধার করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহীনকে পাঠানো হয় মেসিডোনিয়ার স্কোপজে শহরের একটি হাসপাতালে। সেখানে তার মৃ’ত্যু হয়।
নিহ’ত শাহীন আহমদের চাচা মোশাহিদ আহমদ বলেন, সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট শাহীন বাড়িতে ফোন করে সড়কপথে ইতালিতে রওয়ানা হওয়ার কথা জানায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছিল না। দীর্ঘ ২৪ দিন পর গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে জহির উদ্দিন ফোন করে সড়ক দুর্ঘটনায় শাহীনের মৃ’ত্যুর বিষয়টি জানায়।
জহিরের বরাত দিয়ে মোশাহিদ বলেন, মেসিডোনিয়ার দেবারে থাকা জহির কিছুটা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে শাহীনের বিষয়ে জানতে চায়। তখন হাসপাতাল থেকে জানানো হয় স্কোপজে শহরের একটি হাসপাতালে শাহীন মা’রা গেছেন। পরে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানকার একটি সংস্থার মাধ্যমে শাহীনকে মুসলিম রীতিতে সমাহিত করে।
বাংলাদেশ থেকে ইরাক, এরপর তুরস্ক হয়ে গ্রিসে এবং সর্বশেষ ইতালি পাড়ি জমাতে শাহীনের পরিবারের ১৫ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। এ টাকার সিংহভাগই নিয়েছে দালালরা।
এদিকে, আচমকা শাহীনের মৃ’ত্যুর সংবাদ শুনে একেবারে বাকহারা হয়ে পড়েছেন তার বাবা মখলিছুর রহমান ও মা সন্তরা বেগম। স্বজনরাও শোক্যে মুহ্যমান।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসে দালালদের মাধ্যমে অবৈ’ধভাবে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে সিলেটের অন্তত ২০ জন যুবক নিহ’ত হন।
– সিলেটভিউ২৪ডটকম
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.