Beanibazarview24.com
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হ’ত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৩ নম্বর আ’সামি আকাশ হোসেনের (২১) পক্ষে কোন আইনজীবী পাচ্ছেন না তার বাবা আতিকুল ইসলাম। জানা গেছে, টাকার অভাবেই কোন আইনজীবী ধরতে পারেননি ভ্যানাচালক এই বাবা। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আমরা এখনও পর্যন্ত কোন আইনজীবী ধরতে পারেনি, পয়সা পকেটে না থাকার কারণে।
আমরা একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাকে ৩০০ টাকা দিয়েছিলাম, তিনি তখন বলেন, বাংলাদেশে ৩০০ টাকায় কোনো আইনজীবী মেলে না। টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় আর কোন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারিনি।
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, প্রতিদিন আদালতে যাই, আর ফিরে চলে আসি। আমি পেশায় একজন ভ্যানচালক। বাড়ি জয়পুরহাট জেলার দোগাছী ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকা ও প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলাম বুয়েটে। আশা ছিল, অভাবের সংসারে এক সময় পূর্ণতা আসবে আকাশের হাত ধরে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে আকাশ সংসারের হাল ধরবে। তবে এমন কাজ আমার ছেলে করতে পারে, আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আতিকুল বলেন, সব স্বপ্ন শেষ। এখন স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা, জীবনটাই বাঁচানো দায় হয়ে পড়ছে। পুরো পরিবার দুশ্চিন্তায়, চোখে মুখে সব ঝাঁপসা দেখতেছি। তিনি বলেন, ছেলেকে বুয়েটে পাঠায়ছিলাম ইঞ্জিনিয়ার বানাতে। নিজে না খেয়ে তার জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠিয়েছি, আজ এই দিন দেখার জন্য!
আকাশের বাবা আরো বলেন, পুরো জয়পুরহাট জেলার লোক তার সুনাম করছিল। মেট্রিক-ইন্টারে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এলাকার মানুষ তার লেখাপড়ায় নিজ থেকে সহযোগিতা করেছে। আজ সব শেষ হয়ে গেল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হ’ত্যার ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। আবরার হ’ত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন জয়পুরহাটের ভ্যানচালক আতিকুল ইসলামের ছেলে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আকাশ হোসেন (২১)। বুধবার আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আকাশের বাবা আতিকুল ইসলাম বলেন, আকাশ ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সদস্য, এটা জানতাম না। তবে ছেলেকে রাজনীতিতে জড়িত না হতে বারবার নিষেধ করেছিলাম। সে যদি আমার কথা শুনতো তাহলে আজ এ পরিস্থিতি হতো না।
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার ম’রদেহ উ’দ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ম’য়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লা’শের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পি’টিয়ে হ’ত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হ’ত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আ’টক করেছে পুলিশ। নি’হত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অ’ভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। অ’ভিযোগের সত্যতা উদ্ঘাটনে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.