Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সিলেটি ভাষায় মজার মজার কথা বলে ভাইরাল বিদেশি, জানা গেলো পরিচয় (ভিডিও)







একজন বিদেশি ভদ্রলোক সিলেটি ভাষায় বলছেন, ‘কম বয়সে বিয়া করা ভালা নায়, খরচ বেশি’। দেখতে সাদা চামড়ার লোক হলেও কথা-বার্তায় একেবারে সিলেটি। তার নাম-পরিচয় ছাড়াই প্রকাশ করা ছাড়াই এমন একটি মজার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।

এবার জানা গেলো এই বিদেশি ভদ্রলোকের পরিচয়। লেখক ও থিয়েটার কর্মী জেসমিন চৌধুরী তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ওই বিদেশি নাগরিকের পরিচয় এবং জীবন সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-



‘একজন বিদেশি ভদ্রলোকের সিলেটিতে কথা বলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে আমাকে ইনবক্সে লিংক পাঠাচ্ছেন। উনারা জানেন না এই ভদ্রলোকের সাথে এক চালের নিচে প্রায় ছয় বছর বাস করেছি আমি।

যারা ভিডিওটি আপলোড করেছেন তাদের কাছে এটা একটা খুব মজার বিষয় কিন্তু মজা নিতে গিয়ে ভদ্রলোকের নাম পরিচয় ইত্যাদি জানার বা তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করেননি তারা। তোতা পাখি মানুষের মতো কথা বললে যেমন মজা লাগে তেমনি করেই বিষয়টা উপভোগ করেছেন তারা। আপনারা অনেকেই হয়তো ভিডিওটা দেখেছেন অথবা দেখবেন। এই ভদ্রলোক এতো অসাধারণ একজন মানুষ যে তার সম্পর্কে আরো কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি‌।



তার নাম গ্রাহাম স্মিথ। মূল ঠিকানা গ্রেট বৃটেনের ওয়েলস। পেশায় একজন ইমিগ্রেশন ল‌ইয়ার। এই পেশার সূত্রেই সম্ভবত বাঙালি, বাংলা ভাষা এবং দেশের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়। বহু বাঙালিকে নানানভাবে সাহায্য করেছেন তিনি। বাংলাদেশে গিয়েছেন বহুবার। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে থেকেছেন, চাষীদের সাথে মাটিতে ঘুমিয়েছেন, মশার কামড় খেয়ে অসুস্থ হয়ে ফিরেছেন। তবুও আবার গিয়েছেন, বারবার গিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সামাজিকতা সম্পর্কে অনেক বাঙালি থেকেও বেশি জ্ঞান রাখেন এই ভদ্রলোক।



সিলেটি ভাষার বিলুপ্তপ্রায় অনেক শব্দ তিনি জানতেন। তার বিড়ালের নাম ছিল ‘মেকুর’। এটা একটা সিলেটি শব্দ যার অর্থ বিড়াল। সিলেটি ভাষার অভিধান লেখার ইচ্ছা ছিল তার। নতুন কোনো শব্দ শুনলেই অর্থ সহ টুকে রাখতেন। আমি কাজের সূত্রে নতুন কোনো শব্দ শিখলে তাকে এসে বলতাম। একবার একটা স্কুলে কাজ করতে গিয়ে শিখলাম ‘লড়া দেয়’ অর্থ ফাঁকি দেয়। এটা সিলেটের কোন অঞ্চলে প্রচলিত তা আমার জানা ছিল না। তিনি বলেছিলেন খুঁজে বের করবেন। শেষ পর্যন্ত পেরেছিলেন কী না জানা হয়নি।



আমি বিয়ের পর স্বামীর সাথে লন্ডনে একটা ফ্লাটে গিয়ে উঠলাম। দুই বেডরুমের এই ফ্ল্যাটের ছোট কামরাটায় থাকতেন গ্রাহাম স্মিথ। আমাদের বিল্ডিং এর ঠিক উল্টো রাস্তায় ছিল তার অফিস। এমন উচ্চ আয়ের পেশায় নিয়োজিত একজন মানুষ কেন আরেকজনের বাসায় ছোট একটা কামরায় পড়ে থাকবে? একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলে বললেন তার নির্ভেজাল জীবন ভালো লাগে। ‘যেমন ধরো এই বাসার পর্দা, পেইন্টিং, কার্পেট, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এগুলো তোমাদের মাথাব্যথা। নিজে একটা বাসা নিয়ে থাকলে এগুলো আমার নিজের সামলাতে হবে। আমি এসব ঝামেলা চাই না।’



ঝামেলাবিহীন জীবন বাঁচতে চেয়েই বোধ হয় সংসারে জড়াননি। কখনো কোনো মেয়েবন্ধুও দেখিনি। গান শুনতেন, টিভি দেখতেন, ব‌ই পড়তেন আর দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতেন। এই ভিডিওতে দেখলাম তিনি বলছেন, ‘বিয়ে করিনি। ছোটদের বিয়ে করতে নেই।’ মজার মানুষ।

আমার ছেলের জন্মের পর দেখলাম এই মানুষের অন্য এক রূপ। একটা মানুষ যে অন্যের শিশুর প্রতি কতটা দায়িত্ববান এবং স্নেহবৎসল হতে পারে তা উনাকে দেখেই বুঝলাম। আমাদের সামর্থ্য ছিল না কিন্তু তিনি মিরাজের জন্য দামি সব খেলনা কিনে আনতেন। একবার বিশাল একটা প্লাস্টিকের স্লাইড কিনে এনে আমাদেরকে দস্তুর মতো বিপদে ফেলে দিলেন। ছোট ফ্ল্যাট, কোথায় রাখি?




প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরেই মিরাজের সাথে খেলতেন এবং গল্প করতেন। আমাদের দেশের বাবারা বাচ্চাদের সাথে খেলার বা কথা বলার ধৈর্য্য খুব কম‌ই রাখেন। গ্রাহামের কারণে আমার ছেলের শৈশবে এই অপূর্ণতাটুকু ছিল না।

ছেলেকে নিয়ে দেশে বেড়াতে যাব, অথচ টাকার ভীষণ অভাব। গ্রাহাম যেচে ছয় মাসের ভাড়া এডভান্স দিয়ে দিলেন। এভাবে দুই বার তার কাছ থেকে এডভান্স নিয়ে দেশে গেছি। একটা মানুষ কী ভীষণ উদার হতে পারে সেটাও উনার কাছেই শিখলাম।

তবে ঝগড়াঝাঁটি যে কখনো হয়নি তা নয়। উনি রান্নাঘরে ময়লা বাসন জমিয়ে রাখলে আমি রাগ করতাম। উনি বলতেন,

‘তুমি নিজের বাসন ধোও না?’

‘ধুই তো!’

‘তখন আমারগুলোও ধুয়ে ফেললেই তো হয়?’

‘আমি কেন তোমার বাসন ধোব?’

‘পরিবারের সবার কাজ করা কি তোমার সংস্কৃতির অংশ নয়?
একথা শুনে আমি আরো ক্ষেপে যেতাম। ‘আমাকে আমার সংস্কৃতি শেখাতে আসছে!’ ধর্ম নিয়েও ঝগড়া হতো। গ্রাহাম বলতেন, ‘এনিওয়ান উইথ এন আউন্স অফ ব্রেইন কান্ট বিলিভ ইন রিলিজিওন।’



এসব অবশ্য শুরুর দিকের কথা যখন আমি নতুন দেশে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। কোন আচরণ আন্তরিক আর কোনটা হোয়াইট সুপ্রিমেসি বুঝতে পারতাম না।

কিছুদিনের মধ্যেই, বিশেষ করে মিরাজের প্রতি তার স্নেহপূর্ণ আচরণ দেখার পর আমার ভুল ভাঙে। একবার প্রতিবেশীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ছেলেকে হারাতে বসেছিলাম। সোশাল সার্ভিসের লোকজন ভিজিট করতে এলে আমাকে সাহায্য করার জন্য অফিস বাদ দিয়ে তিনি ঘরে বসেছিলেন। ঐ একটা উপকারের ঋণ‌ই কোনোদিন শোধ হবার নয়।

আমি অবশ্য ঋণ শোধ করার পরিবর্তে তার সাথে ভীষণ অন্যায় করেছিলাম। কীভাবে, বলছি।

মিরাজের জন্মের তিন বছর পর খরচ বাঁচানোর জন্য আমরা লন্ডন শহর থেকে বেশ দূরে তিন রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে চলে যাই। গ্রাহামের অফিস বহু দূরে পড়ে যায় তবু তিনি আমাদেরকে হারাতে না চেয়ে সাথে থাকেন। আমাদের আর্থিক দুর্ভোগ কমাতে একা মানুষ হ‌ওয়া সত্ত্বেও দুটো কামরা নিয়ে নেন। আমরা বাচ্চাকে নিয়ে একটা কামরায় থাকতাম। উনার দেয়া টাকাতেই পুরো বাসার ভাড়া হয়ে যেত। বিল এবং ট্যাক্স ইত্যাদি আমরা দিতাম। তার সাহায্যে আমরা বেশ দ্রুত আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম।

এর কিছুদিন পর ইলার জন্ম হলো। আমি দুইটা বাচ্চা, চাকরি, ঘরের কাজকর্ম সামলে মিরাজকে আগের মতো সময় দিতে পারতাম না। গ্রাহাম কিন্তু ঠিকই দিতেন। অফিস থেকে ফিরে অনেক সময় ধরে ওর সাথে খেলতেন, ব‌ই পড়ে শোনাতেন, মিরাজের বকর বকর আনন্দের সাথে শুনতেন।

এই ফেরেশতাসম মানুষটাকে হঠাৎ একদিন বিদায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি। আমার সিদ্ধান্তের কথা শুনে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তবুও আমি সিদ্ধান্ত পাল্টালাম না। আমার মৌখিক যুক্তি ছিল দুটো বাচ্চকে নিয়ে একটা কামরায় আমাদের চলছে না। কাজেই উনাকে যেতে হবে।

কিন্তু আমার আসল কারণটা তাকে অথবা মিরাজের বাবাকে আমি কখনো বলিনি। এখন বলছি। একদিন লক্ষ করলাম গ্রাহাম এবং মিরাজের বাবা এক‌ই সাথে অফিস থেকে ফিরলেও মিরাজ তার বাবার কাছে না গিয়ে গ্রাহামের দিকে ছুটে গেল। এরপর কয়েকদিন এক‌ই বিষয় লক্ষ করে আমি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলাম। ছেলের সাথে বাবার ভালো সম্পর্ক তৈরি হচ্ছিল না। আমার বয়স কম ছিল, বোধ থাকলেও বুদ্ধি ছিল না। আমি ধরেই নিয়েছিলাম গ্রাহাম চলে গেলে হয়তো ছেলেটা নিজের বাবার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

ছেলের মঙ্গল চিন্তা থেকে আমাদের দুঃসময়ের পরম উপকারী বন্ধুটির সাথে আমি অন্যায় করলাম। আমার সাজানো যুক্তি যথেষ্ট অকাট্য ছিল, ততদিনে আর্থিক অবস্থার‌ও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কাজেই গ্রাহাম অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলে গেলেন।

এরপর‌ও অবশ্য বাচ্চাদের জন্মদিন ইত্যাদি উপলক্ষে বহুবার বাসায় এসেছেন। কিছুদিন পর আমরা চিরতরে বাংলাদেশে চলে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একবার সিলেটের দরগাহ গেইটে তাকে পেয়ে বাসায় এনে খাইয়েছিলাম। সেই শেষ দেখা।

গত দশ বছর ধরে এদেশে আছি। মনে মনে গ্রাহামকে খুঁজি। একে তাকে জিজ্ঞেস করি। কেউ বলতে পারে না। আজ এই ভিডিওটা দেখে মনে হলো হয়তো আমার কোনো ফেইসবুক বন্ধু তাকে চেনেন, হয়তো আবার যোগাযোগ স্থাপন করা যেতে পারে। ভিডিও লিংক প্রথম কমেন্টে। আশা করছি কেউ ইনবক্সে তার খবর দিতে পারবেন।’
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন…







You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.