Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

কুয়েতে অনলাইন দা’সী বাজার, কেনাবেচা হচ্ছে নারী গৃহকর্মী







ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানে কুয়েতে ইন্টারনেটে গৃহকর্মীদের দা’স হিসাবে ব্যবসার তথ্য পাওয়ার পর তদন্তের কথা জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বিবিসি নিউজ অ্যারাবিকের তদন্তে দেখা যায়, গুগল ও অ্যাপল অ্যাপের মাধ্যমে ইন্টারনেটে দা’স ব্যবসার পাশাপাশি, ফেসবুক মালিকানাধীন ইন্সটাগ্রামেও এই ব্যবসা চলছে।

অনলাইনের মাধ্যমে নারী গৃহকর্মীদের ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। বিক্রির সময় হ্যাশট্যাগে লেখা হয়েছে মেইডস ফর ট্রান্সফার (হস্তান্তরের জন্য গৃহকর্মী) বা মেইডস ফর সেল (বিক্রয়ের জন্য গৃহকর্মী)।



তবে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর সাথে জড়িতদের এসব বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর করতে হবে যে, ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের আর কোন কাজ করবে না।

বিবিসির তদন্ত

কুয়েতের পথেঘাটে চলাফেরার সময় আপনি এই নারীদের দেখতে পাবেন না। তারা বদ্ধ দরজার পেছনে থাকে, যাদের মৌলিক অধিকারগুলোও থাকে না। তারা ছুটি পায় না এবং বেশি দরদাতার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।



তবে একটি স্মার্টফোনের অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি এই নারীদের হাজার হাজার ছবি দেখতে পাবেন। সেখানে তাদের শ্রেণী-বর্ণসহ বিস্তারিত তথ্য পাবেন এবং মাত্র কয়েক হাজার ডলারের বিনিময়ে তাদের কিনতে পারবেন।

বিবিসি অ্যারাবিকের একটি গোপন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশটির বিস্তার হতে থাকা অনলাইন ব্লাকমার্কেটে গৃহকর্মীদের অ’বৈধভাবে কেনাবেচা করা হচ্ছে। এর অনেক ব্যবসা ফেসবুক মালিকানাধীন ইন্সটাগ্রামে হচ্ছে, যেখানে বিশেষ হ্যাশট্যাগ দিয়ে ছবি আপলোড করা হচ্ছে। এরপর ব্যক্তিগত মেসেজে দরদাম চলছে।



এর বাইরে গুগল ও অ্যাপলে অনুমোদিত অ্যাপের মাধ্যমে গৃহকর্মীদের বেচাকেনা চলছে, পাশাপাশি এই ব্যবসা চলছে ই-কমার্স ভিত্তিক কয়েকটি ওয়েবসাইটেও। ছদ্মবেশে দাসত্ব প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত উর্মিলা ভোলা বলছেন, তারা একটি অনলাইন দাস ব্যবসা চালু করেছে। গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক বা অন্য কোন কোম্পানি যদি এ ধরনের অ্যাপ হোস্টিং করে থাকে, তাহলে তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

এ বিষয়ে জানার পর ফেসবুক জানিয়েছে, তারা এ ধরনের হ্যাশট্যাগ নি’ষিদ্ধ করে দিয়েছে। গুগল আর অ্যাপল জানিয়েছে, এ ধরনের অ’বৈধ কর্মকাণ্ড ব’ন্ধ করার জন্য তারা অ্যাপ ডেভেলপারদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে।



দা’সের বাজার

কুয়েতের প্রতি ১০টি বাড়ির অন্তত নয়টি বাড়িতে গৃহকর্মী থাকেন; যারা দরিদ্র দেশগুলো থেকে আয় রোজগারের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাড়ি জমান। সদ্য কুয়েতে এসেছেন এমন এক দম্পতির ছদ্মবেশে বিবিসি অ্যারাবিকের গোপন অনুসন্ধানী দল ৫৭ জন অ্যাপ ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলেছে এবং কয়েক ডজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছে, যারা তাদের বাড়িতে থাকা গৃহকর্মীকে ফোরসেল নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে বিক্রি করতে চান।

এই বিক্রেতার গৃহকর্মীদের পাসপোর্ট জব্দ ও বাড়ির ভেতর তাদের আ’টকে রেখেছে, গৃহকর্মীদের কোন ছুটি দেয়া হয় না। তাদের ফোনের সুবিধা দেয়া হয় খুবই কম, অথবা একেবারেই দেয়া হয় না। ফোরসেল নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের জাতি এবং মূল্য হিসাবে ফিল্টার করেও গৃহকর্মীদের বাছাই করা যায়।



একজন বিজ্ঞাপন দাতা লিখেছেন, আফ্রিকান কর্মীরা পরিষ্কার আর হাসিখুশি। আরেকজন লিখেছেন, নেপালি কর্মী, যারা ছুটি চাইতে সাহস করে না। যখন এই বিক্রেতাদের সঙ্গে বিবিসি টিমের কথা হয়, বেশিরভাগ সময় তারা বর্ণবাদী মন্তব্য শুনতে পান। একজন বিজ্ঞাপনদাতা বলেছেন, ভারতীয়রা সবচেয়ে নোংরা।

মানবাধিকার লঙ্ঘন

যারা এসব অ্যাপ ব্যবহার করেন, তারা নিজেদের এই নারীদের মালিক বলে মনে করেন। তাদের কোন মৌলিক অধিকার দেয়া হয় না। সপ্তাহে একদিন, এমনকি এক মিনিটও ছুটি দেয়া হয় না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসির টিমকে বলেছেন, বিশ্বাস করুন, সে খুবই ভালো। সে হাসিখুশি থাকে। আপনি যদি ভোর পাঁচটা পর্যন্ত তাকে জাগিয়ে রাখেন, সে অভিযোগ করবে না।

তার কথায় বেরিয়ে আসে যে, কীভাবে নারীদের পণ্যের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আপনি যদি কোন গৃহকর্মীকে ৬০০ কুয়েতি দিনারে কেনেন, তাহলে তাকে আবার এক হাজার কুয়েতি দিনারে বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি পরামর্শ দেন, কীভাবে তার সঙ্গে বিবিসি টিমের আচরণ করা উচিত। তার পাসপোর্ট কখনোই তাকে দেবেন না। আপনি তার স্পন্সর। আপনি কেন তাকে তার পাসপোর্ট দেবেন? একটি ঘটনায় বিবিসির টিমকে ফাতুউ (ছদ্মনাম) নামে ১৬ বছর বয়সী একজন গৃহকর্মীকে কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়। যদিও দেশটিতে ২১ বছরের নিচে গৃহকর্মী আসা নি’ষিদ্ধ।

গিনি থেকে পা’চারকারীদের শি’কার হয়ে ফাতুউকে কুয়েতে নিয়ে আসা হয়। গত ছয় মাস ধরে সে দেশটিতে গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করছে।

স্পন্সরের অনুমতি

ভোলা বলেন, আধুনিক দা’সত্বের এটা একটা বড় উদাহরণ। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকটা গরুর মতো কীভাবে একটি শিশুকে বিক্রি করা হচ্ছে, যেন সে একটা সম্পত্তি। মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে গৃ’হকর্মীদের নিয়ে আসা হয় এবং এরপরে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

সম্ভাব্য নিয়োগদাতারা এজেন্সিকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে গৃহকর্মীদের আনুষ্ঠানিক স্পন্সর হন। কাফালা নামের এই পদ্ধতিতে একজন গৃহকর্মী তার চাকরি পরিবর্তন বা ছাড়তে পারেন না অথবা স্পন্সরের অনুমতি ছাড়া দেশ ছাড়তে পারেন না।

২০১৫ সালে গৃহকর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় কুয়েত কিছু আধুনিক আইন জারি করলেও, সেটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়নি। ফোরসেলের মতো অ্যাপে এই স্পন্সরশিপসহ গৃহকর্মীদের বিক্রি করার সুযোগ করে দেয়া হয়। ফলে আইনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ তৈরি হওয়ায় তা নারীদের আরও নাজুক করে তুলেছে।

কুয়েতে এরকম দা’সত্বের ব্যবসা যদিও সবে শুরু হচ্ছে। কিন্তু বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৌদি আরবে হারাজ নামের আরেকটি অ্যাপ ব্যবহার করে শত শত নারীকে কেনাবেচা করা হচ্ছে।

সত্যিকারের দোজখ

বিবিসির টিম গিনিতে গিয়ে ফা’তোউয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে, যে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটিকে কেনার জন্য কুয়েতে গোপন অনুসন্ধানী টিমকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। প্রতিবছর এই দেশ থেকে শত শত নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গৃহকর্মী হিসাবে পা’চার করা হয়।

সাবেক একজন গৃহকর্মী বলেছেন, কুয়েত হলো সত্যিকারের একটি দোজখ। সেখানে গরুর সঙ্গে গৃহকর্মীদের থাকতে বাধ্য করা হয়। কুয়েতের বাসাগুলো খুব খারাপ। কোন ঘুম নেই, খাবার নেই, কিছু নেই। ফাতুউকে খুঁজে পাওয়ার পর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। দুইদিন পরে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

ফাতুউ বিবিসিকে বলেছেন, তারা আমার সাথে শুধু চিৎকার করতো, আমাকে জানোয়ার বলে ডাকতো। এটা খুব খারাপ লাগতো, মন খারাপ হয়ে যেতো। কিন্তু আমার করার কিছু ছিল না।

এখন সে গিনির কোনার্কিতে ফিরে গিয়ে আবার স্কুলে পড়াশোনা করতে শুরু করেছে। ‘আমি এখন খুব খুশি। মনে হচ্ছে, আমি দা’সত্ব থেকে আবার জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি।’

কুয়েতের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

কুয়েতের জনশক্তি বিষয়ক কর্তৃপক্ষের প্রধান ড. মুবারক আল-আজিমি বলেছেন, ফা’তুউয়ের ঘটনাটি তারা তদন্ত করে দেখতে শুরু করেছেন। যে পুলিশ কর্মকর্তাকে বিবিসির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, তার ব্যাপারেও অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল হতে পারে অভিযুক্তদের গ্রে’প্তার এবং ক্ষ’তিগ্রস্তদের ক্ষ’তিপূরণ দেয়া। ফাতুউয়ের মামলাটির যিনি দেখছেন, সেই আমেরিকান আইনজীবী কিম্বারলি মোটলে বলছেন, আমি মনে করি যারা অ্যাপ তৈরি করেছেন, তাদেরও ফা’তৌউকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেটা অ্যাপল ও গু’গলও হতে পারে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.