Beanibazarview24.com
ফরিদপুরের সবজি ভা-ার হিসেবে পরিচিত সদরপুর উপজেলা। ঋতুভেদে প্রায় সব ধরনের সবজি উৎপন্ন হয় এ উপজেলায়। এই উপজেলার শৈলডুবি গ্রামের ফসলের ক্ষেতগুলো ভরে উঠেছে বেগুন, সিম, মুলাসহ নানান ধরনের সবজিতে। এরমধ্যে বেগুনের ক্ষেতই বেশি। গ্রামে গেলে মনে হবে এলাকাটি যেনো বেগুনেরই গ্রাম।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরের সদরপুরে বেগুনের আবাদ হয়েছে ৪শ ৮৬ হেক্টর জমিতে। যা থেকে উৎপাদন হবে ১১ হাজার ১শ ৭৮ মেট্রিকটন।
তবে আশঙ্কার কথা হলো, ক্ষেত থেকে তোলার পরই এসব বেগুনে দেয়া হচ্ছে ক্ষতিকর ফরমালিন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, শুধুমাত্র দীর্ঘসময় টাটকা থাকার জন্যই নয়, অতিরিক্ত পোকাপ্রবণ হওয়ায় এই ফরমালিন না মেশালে গাছ থেকে ছেড়ার পরেও বেগুনে পোকা ধরার আশঙ্কা থেকে যায়।
সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার শৌলডুবী, মাঠ শৌলডুবী, আবুলের মোড়, বাঁধানো ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেতের গাছ থেকে বেগুন তুলছেন চাষীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে একাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষেতে। এরপর এসব বেগুন তুলে পাইকারদের নিকট বিক্রি করছেন।
দেখা গেলো, পাইকাররা এসব বেগুন একস্থানে স্তুপ করে রাখছেন। এরপর হাত ভরে সেসব বেগুন তুলে প্রথমেই ফরমালিন মেশানো ড্রামের পানিতে চুবিয়ে নিচ্ছেন। তারাপর সেসব বেগুন বস্তায় ভরে নিচ্ছেন। বিক্রির পর সেসবই চালান করে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এব্যাপারে বেগুন চাষী আবু বাকার বলেন, বেগুনে মাত্রাতিরিক্ত পোকার আক্রমণ হয়। এই পোকা দমনে প্রতি সপ্তাহেই বেগুন গাছে কিটনাশক দিতে হয়। এরপর গাছ থেকে বেগুন তোলার পরেও সেসব বেগুন টাটকা দেখাতে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য তাতে ফরমালিন দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সদ্য তোলা বেগুনেও পোকার কীট থেকে যেতে পারে। সেই শুককিটের আক্রমণ থেকে সবজিগুলোকে রক্ষার জন্যও এটা করা হয়ে থাকে।
আবু বাকারের এই বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারকে অবশ্য তা স্বীকারও করেন। ফরমালিন মেশানোর এ বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে রাজি নন তারা। তাদের দাবি, বেগুনগুলো পানিতে ধুয়ে বস্তায় ভরা হয়। এই পানিতে ফরমালিন নেই। একই ড্রামের সামান্য এই ময়লা পানিতে কি বেগুন ধোয়া যায় কিংবা গাছের এই পিচ্ছিল বেগুনে কোনো ময়লা না থাকলেও কেনো ধুতে হবে? এ প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের এসব গ্রামে প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষেত থেকে বেগুন তোলার পর ফরমালিন মিশিয়ে সেগুলো বস্তাজাত করার দৃশ্য চোখে মিলে। এভাবে বেগুনের বাজার পাওয়ায় কৃষকেরাও খুশি। বেগুন চাষে তাদের আগ্রহও বেড়ে গেছে। তাদের বেগুন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে। দামও পাচ্ছেন আশানুরুপ।
চাষীদের নিকট থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা মণ দরে কিনে এসব বেগুন পাইকারা প্রকার ভেদে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন।
হারেজ মোল্যা নামে সেখানকার একজন কৃষক বলেন, আমরা বেগুন চাষের সময় প্রয়োজনীয় কিটনাশক ব্যবহার করি তবে তাতে ফরমালিন মেশাই না।
শৈলডুবী বাজারে ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, ফরিদপুরের এই অঞ্চলের বেগুনের চাহিদা রয়েছে। এ বেগুন পোকা আক্রান্ত হচ্ছে না। দীর্ঘদিনেও পঁচে যাচ্ছে না। তিনি বলেন, শৈলডুবির বেগুনের কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন বাজার ও হাটে। এখান থেকে বেগুন কিনে ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি, দোহার বাজার, নারিশা বাজার, কার্তিকপুর, শ্রীনগর, মাদারীপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ‘শৈলডুবীর বেগুন চাষিদের মৌসুমের সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বেগুন ক্ষেতগুলোতে বিশেষ নজর রাখে। যেকোনো সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাই চাষীরা বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বেগুনের ক্ষেতে কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রতিহত করতে সহনশীল মাত্রায় কীটনাশক দেয়া হলেও এসব বেগুন গাছ থেকে তোলার পর ফরমালিন মেশানোর বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.