Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

আলু থেকে পরিবেশবান্ধব পলিথিন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সুমন


বাংলাদেশে আলু থেকে পলিথিন উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিলেন মাহবুব সুমন। তিনি তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নবায়নযোগ্য শক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বিকল্প জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা গবেষক দলের সদস্য।

তিনি জানান, পলিথিন ও প্লাস্টিকের দূষণ কমানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ দেশের আলু চাষি ও কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের জন্যও সুফল বয়ে আনতে পারে।

তিনি আরো জানান, দ্রুতই ‘শালবৃক্ষর’ পক্ষ আলু থেকে তৈরি পলিথিনের ব্যাগের বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ইতোমধ্যেই আলু থেকে এক্সপেরিমেন্টাল পলিথিনের শিট তৈরি করে তা থেকে ব্যাগ ব্যাগ বানিয়ে ভর বহন ক্ষমতা পরীক্ষা করেও দেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে প্রতিটি ব্যাগের বিক্রয় মূল্য হবে আনুমানিক ৩ টাকা। এটি ৩০ দিনের মধ্যে মাটিতে মিশে যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি গতানুগতিক সাইজের ব্যাগগুলোর ওজন ধারণ ক্ষমতা ৫/৬ কেজি।

মাহবুব সুমন জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিলে মুন্সিগঞ্জ এলাকার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সৌর বিদ্যুতের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার পর তাদের ব্যবসায়িক দুরবস্থার কথা জানতে পারি। দেশের উত্তরাঞ্চলে আলুর চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় একসময় একচেটিয়া ব্যবসা করলেও মুন্সিগঞ্জের আলু চাষি ও কোল্ড স্টোরেজগুলো গত কয়েক বছর ধরে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে। নতুন করে বিনিয়োগের সক্ষমতা নেই বলে আমাদের জানান কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা।

তিনি জানান, এ পরিস্থিতিতে আলু থেকে কোন সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি প্রোডাক্ট ডেভেলপ করে দিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতি কিভাবে এড়ানো যায় তা ভাবতে থাকি। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিসহ পণ্যটি যদি পরিবেশবান্ধব হয় তাহলে তাদের উপকারের পাশাপাশি পরিবেশের দূষণও কম হবে। মাঝখান থেকে প্রচুর নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাতো থেকেই গেল।

মাহবুব জানান, বিষয়টি নিয়ে নানানজনের সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে ইয়ান শ্মিডট নামে আমার এক জার্মান এনার্জি স্পেশালিস্ট বন্ধু আমাকে ‘পলকা’ বানানোর একটি প্রক্রিয়া শিখিয়ে দেন। শ্মিডটের সাহায্য নিয়ে আলু দিয়ে একদমই স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও কমনসেন্সের ব্যবহার করে আমরা যে পলিথিন বানালাম তার নামই পলকা (POLKA)। কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক এর মধ্যে নেই।

তিনি বলেন, পলকা কি জিনিস তা বুঝতে হলে জানতে হবে প্লাস্টিক কি। অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্লাস্টিককে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাতে হাইড্রো কার্বনের খুব ছোট ছোট কণা বা মনোমার পরপর সজ্জিত হয়ে দীর্ঘ শেকলের পলিমার তৈরি করে আছে। এ রকম অনেক পলিমার একত্র হয়ে প্লাস্টিক তৈরি করে। প্লাস্টিকের পাতলা ব্যাগ পলিমারের তৈরি বলে তাকে বলা হয় পলিথিন। এই হাইড্রোকার্বন পলিমার মাটিতে পচে না ও অনেক দূষণ তৈরি করে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি এই পলিথিন। আমরা সবাই জানি জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ তেল, গ্যাস, কয়লা পৃথিবী ধ্বংস করে সকল প্রাণ মেরে ফেলছে। এর বিকল্প দরকার। ফলে আমরা যদি এমন পলিমার বানাতে পারি যা একই রকম লংচেইন পলিমার কিন্তু মাটিতে দ্রুত পচে যাবে এবং কোন দূষণ তৈরি করবে না তাহলে ব্যাপারটা বেশ হয়। পলকা হচ্ছে সেই পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিমার, যা আমরা আলু দিয়ে তৈরি করেছি।

পলকা বানানোর প্রক্রিয়াও জানালেন মাহবুব সুমন। এর জন্য লাগবে আলুর স্টার্চ, পানি, হোয়াইট ভিনেগার, গ্লিসারিন।

আলু থেকে স্টার্চ বানানোর প্রক্রিয়া

বাজার থেকে গোল আলু কিনে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে ছিলে নিতে হবে। তারপর ছিলা আলুকে কুচিকুচি করে কেটে বা গ্রিটারে গ্রিট করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১০ মিনিট। তারপর হাত দিয়ে চেপে বা অন্য যেকোনো উপায়ে চেপে চেপে ভেতরের সমস্ত নির্যাস বের করে নিতে হবে। শেষে সেই পানিটা কোন পরিষ্কার পাত্রে রেখে দিলে তলায় স্টার্চ জমা হবে। এই স্টার্চটা লালচে ময়লাযুক্ত থাকবে। একে কয়েকবার পাতন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নিলে ধবধবে সাদা পরিষ্কার স্টার্চ পাওয়া যাবে। প্রতি ১০ কেজি আলু থেকে ১৩শত গ্রামের মতো স্টার্চ তৈরি করা যাবে।

স্টার্চ থেকে পলকা (POLKA) বানানোর প্রক্রিয়া

তৈরি হওয়া স্টার্চ জটলা পাকানো গাদা গাদা পলিমারের একটা দঙ্গল। এই দঙ্গলের সঙ্গে পানি মেশালে তা মোটামুটি লাইনে চলে আসে। লংচেইন পলিমার যেমন হয় সেরকম হয় দেখতে। কিন্তু অনুবিক্ষণিক লেভেলে এতেও প্রচুর শাখা প্রশাখা থেকে যায়। এই শাখা প্রশাখা ছেঁটে ফেলে একে একটা সিঙ্গেল লংচেইন পলিমারে রূপান্তরের জন্য এতে ভিনেগার প্রয়োগ করতে হবে। এই অবস্থায় ‘পলকা’ বানালে প্লাস্টিকের মতো একটা কিছু হবে, কিন্তু তা হবে খুবই শক্ত ও ভঙ্গুর। ভঙ্গুর প্রবণতা কমানো ও জিনিসটাকে নরম বা ফ্লেক্সিবল করার জন্য এই মিশালে গ্লিসারিন প্রয়োগ করতে হবে। গ্লিসারিনের অণুগুলো লংচেইন পলিমারের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে পড়ে একে নরম করে ফেলে। এই নরম পলকাকে কোন ফ্ল্যাট সারফেসে লেপ্টে দিলেই পেয়ে যাব আমাদের কাঙ্ক্ষিত পলকা শিট। শিট থেকে পরে আমরা ব্যাগ বা র‌্যাপিং পেপার বানিয়ে নিতে পারব সহজেই।

পরীক্ষা করার জন্য একটা পাত্রে ১০ গ্রাম স্টার্চ, ৫ মিলি ভিনেগার, ৫ মিলি গ্লিসারিন, ৬০ মিলি পানি ভালো করে মিশিয়ে গরম করতে হবে। কিছুক্ষণ গরম করলে এটি ঘন থিকথিকে হয়ে উঠবে। গরম অবস্থাতেই একে কোন ফ্ল্যাট সারফেসে লেপে দিয়ে ওভেন বা ড্রায়ারে ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ ঘণ্টা শুকাতে হবে। শুকানোর পর যে পলিমার শিট পাওয়া যাবে সেটাই ‘পলকা’। এবার ওই পলকা শিক যেকোনো আকৃতিতে কেটে নিয়ে ব্যাগ, Wrapping Paper হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.