Beanibazarview24.com
‘আমার বোনটা কত কষ্ট পেয়ে মারা গেছে, আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বোনটাই মারা গেল, আমার বোনকে ছাড়া আমি খাব না’- এভাবেই বিলাপ করছিল মৌলভীবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত প্রিয়া রায়ের ছোট বোন পাপিয়া রায়। বারবার চিৎকার করে বোনকে ডাকছিল। তার শরীর কাঁপছিল, বারবার দাঁত লেগে আসছিল। ঘটনার পর থেকে সে কিছুই মুখে দেয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে মৌলভীবাজারের সাইফুর সড়কের পিংকি সু স্টোরে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন পাঁচজন। এরা হলেন পাপিয়ার বাবা পিংকি সু স্টোরের মালিক সুভাষ রায় (৬৫), পাপিয়ার বোন প্রিয়া রায় (১৯)। তার কাকি দীপ্তি রায় (৪৮), মামি দীপা রায় (৩৫) ও মামাতো বোন বৈশাখী রায় (৩)।
পাপিয়া রায় নিহত প্রিয়া রায়ের ছোট বোন। ঘটনার দিন অন্য সবার সঙ্গে তিনিও দোতলা টিনের ঘরের ওপরতলায় ঘুমিয়েছিল। আগুন লাগার সময় প্রিয়া নিচে থেকে ওপরের সবাইকে নামানোর জন্য চিৎকার করতে করতে ওপরে উঠেন। এরই মধ্য নিচে নেমে আসতে সক্ষম হন পাপিয়া কিন্তু প্রিয়া আর নামতে পারেননি অন্য চারজনের মত তিনিও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান।
বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাশের একটি দোকানে বসে বিলাপ করছেন পাপিয়া। বারবার বোনকে ডাকছেন। শত চেষ্টা করেও কেউ কিছু মুখে তুলে দিতে পারছেন না।
পাশেই উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা জানান, দুই বোনের খুব আন্তরিকতা ছিল। একজন আরেকজনের সঙ্গে বন্ধুর মতে চলাফেরা করত। কিছুই মুখে তুলছে না পাপিয়া। এরই মধ্যে সে অসুস্থ হয়ে গেছে। পরিবারের চারজনকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা।
পাপিয়ার বড় বোন প্রিয়াংকা রায় বলেন, আমাদের পরিবারের কিছুই নেই। আমার বাবা, বোন, মামি, মামাতো বোন সব শেষ। কীভাবে বেঁচে আছি তা কি করে যে বুঝাই!
পিংকি সু স্টোরের মালিক নিহত সুভাষ রায়ের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। দ্বিতীয় মেয়ে প্রিয়া রায় মারা গেছেন আগুনে পুড়ে বাবার সঙ্গে। ছোট মেয়ে পাপিয়া এবং ৯ বছরের ছেলে সৌম্য রায় বাবা আর বোনের শোকে এখন স্তব্ধ।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) পরিমল দাস। এদিকে, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.