Beanibazarview24.com
সম্প্রতি চিনের প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে মাস্কের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাঝেও বৃদ্ধি পেয়েছে মাস্ক ব্যবহারের পরিমাণ।
ফলে হঠাৎ করে এর মূল্য কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। মাস্কের সঙ্কট বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। এদিকে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না বলে গুজব উঠেছে বিভিন্ন স্থানে।
বাজারে মাস্কের সঙ্কট ও দাম বাড়ার বিষয়ে মঙ্গলবার (০৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলেও মাস্কের সঙ্কট হবে না।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সংক্রমণ রোধে জাপান সরকার ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ৬৮ লাখ পিস মাস্ক বিনামূল্যে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মাস্কের সঙ্কট দেখা দিয়েছে- এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী এমন গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাছে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করে মুনাফা লুটতে চাইছে।
মুনাফার আশায় অনেক ব্যবসায়ী দোকান ও ফার্মেসিতে মাস্ক মজুত রাখছেন। সরবরাহ কম বলে বেশি দাম হাঁকছেন। ক্রেতাদের কেউ কেউ ভয়ে আগাম মাস্ক ক্রয় করে রাখতে দোকানে ঢুঁ মারছেন। এ কারণে মাস্কের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
দেশে দুটি কোম্পানি মাস্ক তৈরির প্রতিষ্ঠান আছে বলে জানিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, একটি নরসিংদীর গেট ওয়েল অপরটি রাজশাহীর হ্যালো ইউ।
এ দুটি কোম্পানির একটি দৈনিক ১৫ হাজার ও অপরটি ৫০ হাজার মাস্ক তৈরি করে। সম্প্রতি চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে মাস্ক উৎপাদনকারী এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন তিনি।
জরুরি বৈঠক তিনি জানতে পারেন, হ্যালো ইউ নামের প্রতিষ্ঠানটির কাছে বর্তমানে মাস্ক তৈরির কাঁচামাল নেই। তবে গেট ওয়েল কোম্পানি যেটি দৈনিক ১৫ হাজার মাস্ক উৎপাদন করে তাদের কাছে পর্যাপ্ত কাঁচামাল মজুত রয়েছে।
মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি হ্যালো ইউ কোম্পানির কাছে গেটওয়েল কোম্পানিকে কাচামাল দেয়ার আহ্বান জানালে তারা রাজি হয়।
শুধু তাই নয়, হ্যালো ইউ কোম্পানিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে মাস্কের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে দৈনিক ১৫ হাজারের বদলে ৫০ হাজার মাস্ক উৎপাদনের প্রস্তাব দিলেও রাজি হয়। আগামী সপ্তাহ থেকেই বাজারে দৈনিক ১ লাখ মাস্কের সরবরাহ হবে বলে জানান মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জাপানের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সংক্রমণ রোধে জাপান সরকার ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ৬৮ লাখ পিস মাস্ক বিনামূল্যে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে মাস্কের সঙ্কট হওয়ার কোনো কারণ নেই। জনগণ যেন অযথা ভয় না পায় সেজন্য গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য প্রচার করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না এলে এ ভাইরাস ছড়াবে না বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একাধিক কর্মকর্তা।
তারা জানান, এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। অতএব অযথা আতঙ্কিত না হয়ে ‘কান নিয়েছে চিলে’ প্রবাদের মতো সবাই মাস্ক কেনায় ব্যস্ত না হলেও চলবে।
প্রসঙ্গত, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে এর উৎপত্তি। গোটা চীনে ২০ হাজারের বেশি মানুষ এখন করোনা ভাইরাস নামের নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত। এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪২৫ জনের।
বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে উহান শহরে। তবে হুবেই প্রদেশের চারপাশেও অনেকে মারা গেছে। গত ১৪ দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছে প্রদেশটির মানুষ। বিশ্বের ২৬টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.