Beanibazarview24.com
যৌ’নক’র্মীরাও মানুষ। পাপ-পুণ্যের বিচার করবেন আল্লাহ। জানাজা পড়াতে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। ম’রণের পর ইমাম জানাজা পড়াবেন, এটি ভাবতেই ওরা অ’শ্রুসি’ক্ত। ওদের চোখে জল দেখে কাঁদলাম আমিও।
বলছিলেন, রাজবাড়ী গোয়ালন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান। গত ২ ফেব্রুয়ারি আশিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানেই দৌলতদিয়া যৌ’নপ’ল্লীর এক কর্মীর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ইতোমধ্যে। ইমাম জানাজা পড়াবেন, লা’শ দা’ফন হবে, এটি এখন যৌ’নপ’ল্লীর আনন্দের খবর।
মূলত গোয়ালন্দ যৌ’নপ’ল্লীর কোনো কর্মীর মৃ’ত্যু হলে তাদের ম’রদে’হ আশপাশ গ্রামের কোনো কবরে দাফন করতে দেয়া হয় না। ধর্মীয় ও সামাজিক বাধার কারণেই যৌ’নক’র্মীর ম’রদে’হ দাফনে নানা বাধা। ম’রদে’হ দা’ফন নিয়ে যৌ’নক’র্মীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর মা’রামারি’র ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।
আগে অধিকাংশ ম’রদে’হ পদ্মায় ভাসিয়ে দেয়া হতো। গ্রামের কোনো মৌলভীও জানাজা পড়াতে আসেন না এ পাড়ায়। কোনো ডোমও আসেন না হিন্দু নারীদের ম’রদে’হ সৎ’কারে। পল্লী নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠনের কর্মীরাই ম’রদে’হের জানাজা আর দা’ফনের ব্যবস্থা করেন।
এখন অবশ্য যৌ’নকর্মীর ম’রদে’হ দাফনের কিছুটা সুরাহা হয়েছে। ২০০৬ সালে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ পল্লীর পাশেই হোসেন মণ্ডল পাড়ায় কবরস্থানের ব্যবস্থা করেন। যৌ’নক’র্মীদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থান ইট দিয়ে ঘিরেও দিয়েছেন সাবেক সাংসদ আলী নওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম। এখন অনেকটা স্বস্তিতেই দাফন হয় এখানকার নারীদের ম’রদে’হ। যদিও বাইরের লোকেরা জানাজায় শরিক হন না। খদ্দের আর পল্লীতে বসবাসরত পুরুষরাই এখানকার জানাজার মুসল্লি।
দা’ফনের ব্যবস্থা থাকলেও স্থানীয় কোনো ইমাম জানাজা নামাজ পড়াতে আসেন না এখানে। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে গত ১ ফেব্রুয়ারি। গোয়ালন্দ থানার ওসির ব্যবস্থাপনায় এক কর্মীর জানাজা অনুষ্ঠিত হলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
ওসি আশিকুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর পল্লীর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। ডিআইজি মহোদয় পল্লীর সমস্যা দূরীকরণে নির্দেশ দিয়ে যান। যৌ’নক’র্মীদের দাবি, তাদের ম’রদে’হ যেন ধর্মীয় রীতিতে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি তেমনই এক আলোচনায় অংশ নিই। আলোচনা চলাকালেই এক যৌ’নক’র্মী মা’রা যান। আমি স্থানীয় মসজিদের ইমামকে ডেকে আনতে সহকারীকে পাঠাই। প্রথমে ইমাম আসতে রাজি হননি। পরে আমি নিজে গিয়ে বোঝাতে থাকি। একপর্যায়ে রাজি হন ইমাম।
আশিকুর রহমান বলেন, ইমাম এলেও সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশ নিতে দ্বিধাবোধ করতে থাকে। আমি এবং আমার সহকারীরাও নামাজে অংশ নেই। এরপর সাধারণ মানুষও অংশ নিতে থাকে। মৃ’ত্যুর ঘটনা হলেও দিনটি ছিল যৌ’নপ’ল্লীর জন্য অতি আনন্দের। তাদের জানাজা কোনো ইমাম আগে পড়াননি। আমি সে রেওয়াজ ভেঙে দিয়েছি। ইমামের নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। যদিও মুসল্লিদের ভয় পাচ্ছিলেন ইমাম।
তিনি বলেন, ম’রণের পরে তার পরিচয় নিয়ে আর কোনো আলোচনা হতে পারে না। বিচার করবেন আল্লাহ। লা’শের দা’ফন বা জানাজা করতে ধর্মে বাধা আছে বলে আমার জানা নেই। সবার আগে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে হয়। এ দায়িত্ব পালন করলে হয়তো কেউ এমন নি’ষিদ্ধ পথে পা রাখবেন না।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.