Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

নিউইয়র্কে উঠতি বয়সী বাঙালি সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পরিবার !


সন্তানদের নিয়ে অনেকেই সীমাহীন দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার শেষ নেই। কখন কী হয় সেই চিন্তায় তারা অস্থির থাকেন। অনেক সময় নিজের নাওয়া-খাওয়া এমনকি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকারও ফুরসত পান না। উঠতি বয়সের একটি বড় অংশ মোবাইল ফোনের মধ্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আনলিমিটেড সময় পর্যন্ত খেলা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছেলে কিংবা মেয়ের বন্ধুর সঙ্গে চ্যাট করা,সারা রাত বিছানার কম্বলের নিচে মুখ লুকিয়ে রেখে মোবাইলে চ্যাট করা, ভিডিও দেখা ও গেম করা ছাড়াও রয়েছে দিনের যেকোনো সময়ে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকা।

হোমওয়ার্কের নামে ল্যাপটপ নিয়ে সারাক্ষণ বসে থাকা, বাবা কিংবা মা সামনে থাকলে তাদের সামনে লেখাপড়ার ব্যস্ততা ও ভাব দেখানো ছাড়াও তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য বেশি সময় ধরে লেখাপড়া করছে এই রকম ভাব দেখানো। বাবা মা কিংবা পরিবারের অভিভাবক সামনে থেকে চলে গেলেই আবার ভিডিও দেখায় ব্যস্ত হয়ে যাওয়া। এ রকমভাবে লেখাপড়ায় দিনে দিনে অমনোযোগী হয়ে পড়ে এ ধরনের শিক্ষার্থীরা। ফলে তারা স্কুলে ভালো গ্রেড করতে পারছে না। অনার রোলের স্টুডেন্টরা কম নম্বর পাচ্ছে। আবার কোনো কোনো সাবজেক্টে ফেল পর্যন্ত করছে। স্কুলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। কারণ সন্তান বাসায় না পড়লে তারা ভালো করতে পারবে না-এটাই স্বাভাবিক। এসব সমস্যার কারণে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই।

ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, কোনো কোনো মা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। যেখানে আগে কখনোই ওষুধ খেতেন না, এখন দিনে ছয়-সাতটা করে ওষুধ খান, এ রকম খবরও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি একজন অভিভাবক তার মেয়ের মোবাইল ফোন টেপা বন্ধ করতে বলায় ও তাকে শাস্তি দিতে চাওয়ার কথা বলায় তার বাবার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছে। পুলিশ বাবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে।

জানা গেছে, বাবার অপারেশন হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেয়ার পর তিনি মেয়ের সারা রাত ধরে মোবাইল টেপা ও চ্যাটিং করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি মেয়েকে সাবধান করে দেন। সেই সঙ্গে এটাও বলে দেন, যদি সে মোবাইল ফোন টেপা ও চ্যাটিং করা বন্ধ না করে তাহলে তার হাত ভেঙে দেবেন। এ ঘটনার পর মেয়ে তার বাবা তাকে মারতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়।

অনেক শিক্ষার্থী হাইস্কুলে ওঠার পর ঠিকমতো লেখাপড়া করে না। ভালো শিক্ষার্থীরা মোবাইলের নেশায় আসক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে তারা ঠিকমতো লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে কোনো রকম গায়ের কাপড় ছেড়েই মোবাইল, ল্যাপটপ ও টিভি নিয়ে বসে। ফলে একদিকে মোবাইলে চ্যাটিং, ল্যাপটপে গেম খেলছে। আবার টিভিও চালিয়ে রাখছে। তিনদিকে একসঙ্গে মনোযোগ দেওয়াতে একটা অস্থিরতার মধ্যে সময় পার করছে। বাসাবাড়িতে জামাকাপড়, বই সবকিছু এলোমেলো করে রাখছে। বাথরুমে যাওয়া, গোসল করার ও খাওয়ারও সময় পাচ্ছে না। গোসল না করার কারণে গায়ে গন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

দিনের পর দিন একই কাপড় পরে থাকার কারণে আবার স্কিনেও সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসকের কাছে যেতে হচ্ছে, সেখান থেকে ওষুধও নিচ্ছে। আবার জানা গেছে, এমনও হচ্ছে ওই বাচ্চারা ঠিকমতো খাচ্ছে না। ফলে তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। সারাদিনে এক বেলা খাচ্ছে। খাবারেও অরুচি হচ্ছে। ঠিকমতো খাবার না খাওয়ার কারণে শরীরের বৃদ্ধি হচ্ছে না। সেই সঙ্গে সারাক্ষণ এসব ডিভাইসে ব্যস্ত থাকার কারণে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। পড়ালেখায় মন বসছে না। এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পড়ার পরই বলছে পড়া শেষ।

বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেও তাকে পড়তে বসাতে পারছে না। সারাক্ষণ অস্থিরতার মধ্যে থাকে। ওই বাচ্চাদের কারণে বাবা-মায়েরা অনেক দুশ্চিন্তায় আছেন। এমনও জানা গেছে, এই বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যার কারণে কেউ কেউ আমেরিকা ছেড়ে যেতে চাইছেন। কিন্তু এখন দেশে গেলে সন্তানরা বাংলাদেশের স্কুলের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে না, পড়ালেখায় পিছিয়ে যাবে- এসব দিক বিবেচনা করে যেতেও পারছেন না। কারণ এখানে টুয়েলভ গ্রেড সম্পন্ন করার পর হাইস্কুল ডিপ্লোমা দেওয়া হয়।

টেন গ্রেডে কোনো সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে বাংলা মাধ্যমে দশম ক্লাসের পর এসএসসি ও বারো ক্লাসের শেষে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। আর যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করে তাদের দশম ক্লাস পরে ও লেভেল এবং বারো ক্লাস পরে এ লেভেল পরীক্ষা হয়। সেখানে পাস করার পর কলেজে ভর্তি হতে হয়। এখানে যারা নবম থেকে টুয়েলভ ক্লাস পর্যন্ত পড়ছে তারা বাংলাদেশে গিয়ে লেখাপড়ার সাথে কোনোভাবে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে না বলেই সব বাবা-মা এখানে থাকছেন। সব মিলিয়ে কিছু কিছু পরিবারে সন্তানদের নিয়ে বাবা-মাকে অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, অনেক বাচ্চাকে নিয়ে তাদের পরিবারে সমস্যা হচ্ছে। এতে করে বাবা-মায়ের অর্থ খরচ হচ্ছে কিন্তু তারা ঠিকমতো লেখাপড়া করছে না। কিন্তু এসব সমস্যার কথা বাইরে শেয়ারও করতে পারছে না। আবার বাচ্চাকে অতিরিক্ত শাসন করবে সেটাও পারছে না। এ নিয়ে অনেক পরিবার বাচ্চাদের সমস্যা সমাধানের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হচ্ছে। কেউ কেউ কাউন্সেলিংও করছেন।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা এটাকে শুধু সন্তানদের ওপর দোষ বলে মানতে রাজি নন। তাদের কাছে তথ্য রয়েছে অনেক পরিবারের বাবা-মা দুজনই কাজ করেন। সন্তানদের ঠিকমতো সময় দেন না। তারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকায় সন্তানরা বাসায় একা থাকে। একা থাকার সুযোগে বাসায় মোবাইল করা, গেম খেলা ও ভিডিও দেখায় ব্যস্ত থাকে। একপর্যায়ে তারা গেম, চ্যাটিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়ে। এটা ছাড়ানো কঠিন হয়ে যায়। আর বাবা-মা যখন এগুলো নিয়ে কথা বলেন তখন সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। আবার অনেক বাবা-মা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তারা ছোট বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য ও ব্যস্ত রাখার জন্য মোবাইল ও ভিডিও গেম দিয়ে বসিয়ে রাখেন। এতে করে ছোটবেলা থেকেই তারা গেমে আসক্ত হতে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে বাবা-মাকে সতর্ক হওয়ার পর পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, বাচ্চাদের মোবাইলে গেম দিয়ে ব্যস্ত রাখলে তারা ছোটবেলা থেকে আসক্তি হতে থাকে। তারা বাচ্চাদের সঙ্গে বাবা-মাকে আরও সময় দেওয়া, তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সন্তানদের পড়ালোখায় মনোযোগী করার জন্য তার লেখাপড়ার অ্যাসাইমেন্টও স্কুল থেকে কী কী দিচ্ছে তা তারা ঠিকমতো সম্পন্ন করছে কি না সেটাও দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।

যেসব বাচ্চা বাবা-মায়ের কথা শুনতে চায় না, তাদের সঙ্গে সম্পর্র্ক স্থাপন করাও জরুরি বলে মনে করেন।
সম্প্রতি জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার জেনারেশন গ্যাপ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানেও বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। সেখানে সন্তানদের আজকালকার বিভিন্ন সমস্যা ও তা সমাধানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। গেম, ভিডিও দেখা ছাড়াও কেউ কেউ মাদকাসক্ত হচ্ছে। ধূমপান করার কারণেও অনেক সন্তান বিপথগামী হচ্ছে।

নিউজ সুত্র ঃ নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: সাপ্তাহিক ঠিকানা

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.