Beanibazarview24.com
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে সম্পত্তির জন্য বাবা হাজী উমর আলীকে (৬৫) গলা কে’টে হ’ত্যার পর মাথা নদীতে আর দে’হ জঙ্গলে ফে’লে দেয় ছেলে কাউসার আহমেদ। পুলিশ ম’রদে’হ উ’দ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনও করেছে।
এদিকে হ’ত্যার পর ভু’য়া মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে বাবা নিখোঁ’জের সংবাদ জানিয়ে নিজেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করে কাউসার।
এদিকে ভাই নি’খোঁজের ব্যাপারে সন্দেহ হলে চাচা মো. নায়েব আলীও আদালতে আরও একটি মা’মলা করেন। এ মা’মলায় ভাবি, ভাতিজা, ভাতিজিসহ পাঁচজনকে আ’সামি করা হয়। এরপর সাধারণ ডায়েরি আর মা’মলার ত’দন্তে বেরিয়ে আসে হ’ত্যার লোমহর্ষক সব তথ্য। বুধবার রাতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হ’ত্যায় অংশ নেয়া গ্রে’ফতারকৃত এক আ’সামির আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লা।
নিহ’ত ব্যক্তি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী উমর আলী। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। দ্বিতীয় বিয়ে করায় ক্ষু’ব্ধ হয়ে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা এমন লোমহর্ষক হ’ত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লা বলেন, হ’ত্যায় সরাসরি অংশ নেয় তিনজন। পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় জড়িত ছিল আরও একাধিক ব্যক্তি। সোর্স নিয়োগ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ’ত্যায় সরাসরি অংশ নেয়াদের মধ্যে মনির আহমেদ (৩০) নামে একজনকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রে’ফতার করেছে পুলিশ। সাধারণ কৃষক সেজে পুলিশ তাকে গ্রে’ফতার করে। তিনি জকিগঞ্জের দক্ষিণ নয়াগ্রাম এলাকার এমাদ উদ্দিনের ছেলে। পরে মনিরের দেয়া তথ্যে তার শাশুড়ি একই জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কালাইউড়া গ্রামের মৃ’ত জুবেদ আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুনকে গ্রে’ফতার করা হয়। মনিরকে নিয়ে হ’ত্যার ঘটনাস্থল কালাইউড়ায় সোনাই নদীর তীরে যায়।
পরে বিয়ানীবাজার থানায় তথ্য নিয়ে ম’স্তকবি’হীন বেওয়ারিশ ম’রদে’হের ক’ঙ্কাল উ’দ্ধারের কথা জানতে পারে পুলিশ। থানায় নিহ’তের জ্যাকেটসহ কাপড়-চোপড় দেখে গ্রে’ফতারকৃত মনির তা শনা’ক্ত করে। এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব আহমেদ তালুকদারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বী’কারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দেয়া হয়।
জবানব’ন্দিতে মনির জানান, নিহ’ত হাজী উমর আলীর ছেলে কাউসার আহমেদ সিলেট এমসি কলেজে পড়াশোনা করতেন। আর সিলেটে একটি মুরগির দোকানে কাজ করতেন মনির আহমেদ। সেখানেই তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। মনির কাউসারকে মামা বলে ডাকেন। একদিন কাউসার নিজের এলাকার একজন খারাপ লোককে শায়েস্তা করতে হবে বলে জানান। এতে তিনিও রাজি হয়ে যান। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাবা হাজী উমর আলীকে তিনি বিয়ানীবাজারের কালাইউড়ায় নিয়ে যান। সেখানে মনিরসহ অন্য আ’সামিদের সহায়তায় তাকে গলা কে’টে হ’ত্যার পর মাথা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। আর মৃ’তদে’হ একটি টিলায় ফেলে রাখেন। হ’ত্যার পর তিনি কাউসারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকাও নেন। ওই দিন রাতে মনিরের শ্বশুরবাড়িতে খাওয়া-দাওয়া ও রাতযাপন করেন হ’ত্যাকা’রীরা।
পুলিশ জানায়, নিহ’ত হাজী উমর আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বসবাস করছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম স্ত্রী আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নি’র্যাতন দমন আইনে একটি মা’মলা করেন। মা’মলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। প্রথম স্ত্রীর ঔ’রসজাত সন্তান কাউসার আহমেদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাবাকে মা’মলার আপসের কথা বলে প্রথমে হবিগঞ্জ এবং পরে সিলেট যেতে বলেন। ছেলের কথামতো তিনি প্রথমে হবিগঞ্জ এবং পরে সিলেট যান।
কিন্তু যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটিও ব’ন্ধ পাওয়া যায়। গত ৬ জানুয়ারি কাউসার আজমিরীগঞ্জ থানায় বাবা নিখোঁ’জের সংবাদ জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে নিজের ভু’য়া মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করেন। সাধারণ ডায়েরি করার পর বাড়িতে এসে কাউসার বাবার পালিত ৪টি গরু বিক্রি করে দেন। বাবার জমির দলিলপত্র নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। এতে স্বজনরা বাধা দেন।
একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে স’ন্দেহ তৈরি হয় তার চাচা মো. নায়েব আলীর। বাবার নি’খোঁজে ছেলে ব্যথিত হওয়ার বদলে গরু বিক্রি করছে। জমির দলিলপত্র খুঁ’জছে। এমতাবস্থায় তিনি ভাবি, ভাতিজা, ভাতিজিসহ পাঁচজনকে আ’সামি করে আদালতে একটি মা’মলা করেন। আ’দালত মা’মলাটি তদন্তের জন্য আজমিরীগঞ্জ থানায় পাঠায়। এরপর থেকে কাউসার আহমেদসহ তার সঙ্গীয়রা আ’ত্মগোপন করেন।
মা’মলাটি ত’দন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি (ত’দন্ত) মোহাম্মদ আবু হানিফকে। তিনি বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত রসলিশ সুপার শেখ মো. সেলিমের সহায়তা ও নির্দেশনায় মা’মলাটির ত’দন্ত শুরু করেন। বিভিন্ন স্থানে সোর্স নিয়োগ করেন। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেও আ’সামিদের শ’নাক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অবশেষে হ’ত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া মনির আহমেদকে শ’নাক্ত করে তাকে গ্রে’ফতারে অ’ভিযানে নামেন। মা’মলার তদন্তকারী মলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একজন সাধারণ কৃষক সেজে অ’ভিযান চালিয়ে তাকে গ্রে’ফতার করেন। মা’মলার অন্য আ’সামিরা পলা’তক রয়েছেন। তাদের গ্রে’ফতারে বিভিন্ন স্থানে অ’ভিযান চালানো হচ্ছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.