Beanibazarview24.com
সময়টা ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর বেলা। আর ঘটনাস্থল ভারতের রাজধানী দিল্লির খাজুরি খাস শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গমরি এক্সটেনশন লেন। সেখানে থাকেন মোহাম্মদ সাঈদ সালমানির পরিবার। মঙ্গলবার পরিবারের জন্য দুধ কেনার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। এমন সময় তার ছোট ছেলে তাকে ফোন করে। ছোট ছেলে ফোনে জানায়, ১০০-র অধিক সশ’স্ত্র জনতা তাদের লেনে ঢুকে পড়েছে। তারা দোকান ও ঘরবাড়িতে আ’গুন ধ’রিয়ে দিচ্ছে। তাদের চারতলা বাড়িতেও আগুন দেয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এখন মেঝেতে অবস্থান করছেন।
এ কথা শুনেই সালমানির মাথায় হাত। সে তার বাসার দিকে ছুটতে লাগল। এ সময় পাশের লেনের বাসিন্দারা তাকে যেতে বাধা দেয়। তারা বলে, ‘সেখানে গেলে বিপদ হতে পারে। এমনকি তারা তাকে মে’রেও ফেলতে পারে। তাই অপেক্ষা করা উচিত।’
সালমান (৪৮) একজন তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ী। ছেলের ফোন পেয়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। কয়েক ঘণ্টা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন সালমান। তিনি ভাবছিলেন, ততক্ষণে বোধহয় সব শেষ হয়ে গেছে। মা’রা গেছে পরিবারের সদস্যরা।
পরে এলাকায় গিয়ে জানতে পারলেন, দুর্বৃত্তরা বাড়ি ও দোকানপাটে আগুন দিলেও স্থানীয়দের বেশিরভাগই প্রাণে বেঁ’চে গেছেন। তবে তার মাকে বাঁ’চানো যায়নি। আগুনে পুড়ে তৃতীয় তলায় ম’রে পড়েছিলেন সালমানের ৮৫ বছর বয়সী মা আকবরি।
দুর্বৃত্তরা শুধু তার বাড়িতে আগুন লাগিয়েই ক্ষা’ন্ত হয়নি। তারা তার বাসায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও আট লাখ টাকা লু’ট করে নিয়ে গেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইনকে সালমান বলেছেন, ‘এখন আমার আর কিছুই নেই। আমি একদম শূন্য হয়ে গেলাম।
গমরি এক্সটেনশন লেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির খাজুরি খাসের একটি এলাকা। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (সিএএ) কেন্দ্র করে সং’ঘর্ষের জের ধরে দৃ’র্বৃত্তরা সেখানকার মুসলমানদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে আ’গুন ধরিয়ে দেয়। এ সং’ঘ’র্ষে এখন পর্যন্ত ২২ নিহ’ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিলটির পক্ষে ও বিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে এ সং’ঘ’র্ষ বাধে। বিলটির পক্ষের অনুসারীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে মুসলমানদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
রোববার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ না’শকতা সোমবার আশপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার মুসলমানরা বলেছেন, দু’র্বৃত্তরা একের পর এক নাশ’কতা চালিয়ে গেলেও পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। মঙ্গলবার হা’মলার আশ’ঙ্কায় মুসলিম বাসিন্দারা পালিয়ে যান।
সালমানির পরিবারে থাকতেন তার বৃ’দ্ধা মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। ঘটনার সময় তার বড় ছেলে স্ত্রী হাসপাতালে ছিলেন। বাকি সদস্যদের পুলিশ উ’দ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করেন সালমান।
সালমানি বলেছেন, ‘তিনি দুধ কেনার জন্য বাইরে বের হওয়ার পর ঘর তালাব’দ্ধ ছিল। নিরাপত্তার জন্যই এটা করা হয়েছিল। তবে দু’র্বৃত্তরা তালা ভে’ঙে বাসায় ঢুকে পড়ে অগ্নিসংযোগ করে এবং লু’টপাত চালায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার দোকানের কর্মচারীসহ পরিবারের সদস্যরা মেঝেতে নেমে আসেন এবং সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা বাড়িতে আ’টকা ছিলেন। পরে পুলিশ তাদের উ’দ্ধার করে।’
বয়স্ক হওয়ায় ঘর থেকে বের হতে পারেন সালমানির মা
সালমানি জানিয়েছেন, তার মা বয়স্ক ছিলেন। এজন্য সবাই ঘর থেকে বের হতে পারলেও তিনি বের হতে পারেননি। ফলে আব’দ্ধ ঘরে পু’ড়েই মা’রা গেছেন তিনি।
সালমানির অশীতিপর মায়ের ম’রদে’হ গুরু তেজ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালে রাখা আছে। তার পরিবারকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার আকবরি বেগমের ম’য়নাত’দন্ত করা হবে।
মেরুত জেলার নিজ গ্রামে মাকে সমাহিত করার কথা ভাবছেন সালমানি। পাশাপাশি তিনি অ’জ্ঞাত দু’র্বৃত্তদের নামে এফআইআর দায়ের করবেন।
কোরআন পু’ড়েছে, এক মুসলমানকেও জীব’ন্ত দ’গ্ধ করতে চেয়েছিল দু’র্বৃত্তরা
গমরি লেন এলাকায় ৯০-১০০ মুসলিম পরিবারের বসবাস। সেখানে আজিজিয়াহ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রায় দেড়শ জনের একটি সশ’স্ত্র গ্রুপ অন্তত ২০০ মুসলিমের ওপর আ’ক্র’মণ করে। তাদের হাতে ছিল লা’ঠি ও পা’থর। পরে মুসলমানরা প্রাণ বাঁ’চাতে মসজিদটিতে আশ্রয় নেয়। সারারাত মসজিদে কা’টানোর পর সকালে স্থানীয় অন্যান্য মুসলমানরা তাদের উ’দ্ধার করেন।
মসজিদে আ’শ্রয় নেয়া ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি জানান, “তারা ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিয়ে একের পর এক বাড়ি, দোকান-পাটে আগুন দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা মসজিদে ঢুকে ব্যাপক ভাং’চুর চালায়। কোরআন শরিফে আ’গুন দেয়। এমনকি এক মুসলমানকে জীব’ন্ত দ’গ্ধও করতে যাচ্ছিল তারা। তবে স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের বাধায় তা সম্ভব হয়নি।’
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশো’ধনী বিল পাস হয়। পরদিন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করলে সেটি আইনে পরিণত হয়। বিলটি আ’ইনে পরিণত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষো’ভ করছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ। তবে গত তিনদিন ধরে দিল্লিতে এই বিক্ষো’ভ সহিংস আকার ধারণ করেছে। সেখানে মুসলিমদের বেছে বেছে মারধর, বাড়িতে আগুন, দোকানপাটে লুটপা’ট করছে বিজেপির সমর্থকরা।
গত তিনদিন ধরে দিল্লিতে নার’কীয় ধ্বং’সযজ্ঞ চললেও এ নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরিস্থিতি ভ’য়াবহ আকার ধারণ করায় বুধবার নীরবতা ভে’ঙে এক বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।
এক টুইটে মোদি বলেছেন, তিনি বিরাজমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণ করছিলেন। শান্তি এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মাঠে থেকে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী।
টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নৈতিকতার ভিত্তি হলো শান্তি এবং সম্প্রীতি। আমাদের দিল্লির ভাই এবং বোনদের প্রতি শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, বুধবার সকালের নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লিতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দিল্লির অন্যান্য অংশেও কা’রফি’উ জারি করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ট্যুডে বলছে, নয়াদিল্লির মৌজপুর, জাফরাবাদ, চাঁদবাগ ও কারাওয়াল নগর এলাকায় কা’রফি’উ জারি করেছে প্রশাসন। সহিংসতায় বিধ্ব’স্ত এলাকায় কা’রফি’উ উপেক্ষা করে কেউ রাস্তায় নামলে দেখামাত্রই গু’লি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গু’তেরেস ভারতের সহিং’সতায় গভীর দৃষ্টি রাখছেন বলে এক প্রতি’বেদনে জানিয়েছে ফার্স্ট পোস্ট।
সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.