Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

যে পাপ আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে

মুমিন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক গুনাহ করে থাকে। যেমন—কবিরা, সগিরা, বিদআত ইত্যাদি। এসব গুনাহর মধ্যে যে গুনাহ আল্লাহ তাআলাকে সর্বাধিক ক্রোধান্বিত করে এবং যার ফলে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়, তা হলো জিনা-ব্যভিচার। বর্তমানে সারা বিশ্বে জিনা-ব্যভিচার এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে মানুষ একে পাপই মনে করছে না। এর মূল হচ্ছে বেপর্দা এবং আল্লাহর ভয় অন্তর থেকে উঠে যাওয়া।

আল্লাহ তাআলার কাছে এ কাজ সবচেয়ে ঘৃণিত, নিন্দনীয় ও মহাপাপ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ করা বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ শত্রুদের তাদের ওপর চাপিয়ে দেন। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ১৩২৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে মুহাম্মদের উম্মত, আল্লাহর শপথ! আল্লাহর চেয়ে রাগী আর কেউ নেই, তিনি রাগ করেন তাঁর সেই বান্দা-বান্দির প্রতি, যে ব্যভিচার করে। হে মুহাম্মদের উম্মত, আল্লাহর শপথ, আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, তাহলে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ১৪৮৩)

মহানবী (সা.) বলেছেন, সপ্ত আকাশ এবং সপ্ত জমিন বিবাহিত ব্যভিচারীর প্রতি অভিশম্পাত করে। জাহান্নামে এদের লজ্জাস্থান থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হবে, যা জাহান্নামিরাও সহ্য করতে পারবে না। আগুনের আজাবের সঙ্গে সঙ্গে জাহান্নামে তারা লাঞ্ছনাও ভোগ করবে। (বাজজাজ)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘ব্যভিচারী কোনো ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদের মুমিনদের জন্য হারাম করা হয়েছে।’ (সুরা নূর, আয়াত : ০৩)

তবে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী যদি তওবা করে ফিরে আসে, তাহলে মুমিন ও মুমিনাদের সঙ্গে তাদের বিবাহ বৈধ হবে। ব্যভিচারের শাস্তি ভয়ানক। হাদিস শরীফে রয়েছে, ব্যভিচারের মন্দ পরিণাম ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায়, আর তিনটি আখিরাতে। দুনিয়ার তিনটি হলো : ১. সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া, ২. দরিদ্রতা, ৩. অকালমৃত্যু। আর আখিরাতের তিনটি হলো—১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি, ২. হিসাব-নিকাশের কঠোরতা এবং ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি (ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ইফা পৃ. ১০৯)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো বান্দা যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং এটি তার মাথার ওপর মেঘখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে। অতঃপর সে যখন তওবা করে, তখন ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ, হাদিস : ৪৬৯০)

তিনি আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে বা শরাব পান করে, আল্লাহ তার ওপর থেকে ঈমান ছিনিয়ে নিয়ে যান, যেভাবে মানুষ মাথার দিক দিয়ে জামা খুলে নেয়। (মুস্তাদরাকে হাকেম : ১/২২)

ফিরাউনের সলীল সমাধি ও মুসা (আ.)-এর মিসর জয়ের পর আল্লাহ তাআলার নির্দেশে মুসা (আ.) যখন বনি ইসরাঈলকে ‘জব্বারিন’ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার হুকুম করেন তখন জব্বারিন সম্প্রদায় বালআম ইবনে বাউরার কাছে সমবেত হয়ে বলল, মুসা (আ.) অতি কঠিন লোক, তদুপরি বিরাট বাহিনী নিয়ে এসেছে, তারা আমাদের দেশ থেকে বের করে দেবে। আপনি তার বিরুদ্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করুন, যাতে তাকে ফিরিয়ে নেয়। বালআম ছিল একজন বড় আবেদ, তার যেকোনো দোয়া কবুল হতো। সে প্রথমে নবীর বিরুদ্ধে দোয়া করতে রাজি হয়নি। পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রীকে লোভনীয় উপঢৌকন দিয়ে তারা দোয়া করতে বাধ্য করল।

সে যত দোয়া করছে তার দোয়া মুসা (আ.) ও তাঁর বাহিনীর পক্ষে এবং জব্বারিনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, আর বালআমের জিহ্বা মুখ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। বালআম যখন বুঝতে পারল যে তার দোয়া বিফল হচ্ছে, তখন সে তাদের একটি পরামর্শ দিল যে তোমাদের সুন্দরী নারীদের মুসা (আ.)-এর সৈন্যদের মাঝে পাঠিয়ে দাও। আর এর ফলে তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে এবং তারা আল্লাহর গজবে পতিত হয়ে ধ্বংস হবে। জব্বারিন তাদের সুন্দরী নারীদের বনি ইসরাঈলদের মাঝে পাঠিয়ে দিলে তাদের একজন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর এর ফলে তাদের মধ্যে কঠিন প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং এক দিনে ৭০ হাজার বনি ইসরাঈল মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

লেখক : প্রধান ফকীহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.