Beanibazarview24.com
বিশ্বে এক করুণ দৃশ্য দেখাল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। হয়তো কেউ আগে এমন দৃশ্যের সম্মুখীন হয়নি। যে দৃশ্য কখনো কল্পনাই করা যায় না, তেমনই এক দৃশ্য দেখা গেল দক্ষিণ লন্ডনের চিসলেহার্স্ট এলাকার এটারনাল গার্ডেনস মুসলিম গোরস্থানে। দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে এক বালকের জানাজায় অংশ নিতে বাধ্য হলেন তার আত্মীয়রা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই মুসলিম বালকের নাম ইসমাইল আব্দুল ওহাব (১৩)। করোনায় আক্রান্ত ওই বালকের সোমবার ভোরের দিকে লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়।
মারাত্মক ছোঁয়াচে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক দেশে এটা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এমনকি সরকার পরিচালনার কাজও করা হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
দক্ষিণ লন্ডনের চিসলেহার্স্ট কর্তৃপক্ষও ইসমাইলের আত্মীয়-স্বজনদের বাধ্য করে দূরত্ব বজায় রেখে জানাজা শেষ করতে। শুধু তাই নয়, তার জানাজায় অংশ নেন হাতেগোনা কয়েকজন আত্মীয় (মৃতের চাচা ও খালাত-মামাত ও ফুফাত ভাইয়েরা)। তাদের হাতে লক্ষ্য করা যায় গ্লাভস ও মুখে মাস্ক। আর যারা লাশ বহন করে কবরের কাছে নিয়ে যান, তাদের পরনে ছিল পিপিই (সুরক্ষা পোশাক)।
এ-সংক্রান্ত প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, জানাজায় হাতেগোনা যে কয়জন অংশ নিয়েছেন তারা অপরজন থেকে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়েছেন। মরদেহের কফিন কবরে নামানোর সময় আত্মীয়রা দূর থেকে নীরব দৃষ্টিতে আব্দুল্লাহকে শেষ বিদায় জানান।
ডেইলি মেইল জানায়, ইসমাইলের পরিবারের আরও দুইজন সদস্যের করোনার উপসর্গ ধরা পড়েছে এবং তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। সেজন্য তারা জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। তবে মা সাদিয়াসহ বাকি আত্মীয়রা লাইভ ভিডিওতে ইসমাইলকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পান। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্যান্সারে ভুগে পাঁচ বছর আগে মারা যান ইসমাইলের বাবা।
লন্ডনের মুসলমানদের রীতি অনুযায়ী, কোনো মুসলমান মারা গেলে তার মরদেহ মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয় জানাজার জন্য। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সব মসজিদ বন্ধ থাকায় ইসমাইলকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় গোরস্থানে।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, খুবই ভদ্র, পরোপকারী ও হাস্যেজ্জ্বল ছেলে ছিল ইসমাইল। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সে শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল।
গত শুক্রবার ইসমাইলের শরীরে ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনদিন পর সোমবার মারা যায় সে।
যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ইসমাইলই দেশটির প্রথম কোনো বালক যে এই ভাইরাসে মারা গেল।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.