Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

প্রবাসীদের নানা অভিযোগ ‘বাংলাদেশ বিমান’ নিয়ে







জীবিকার তাগিদে পরবাসে রয়েছে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি। সংসারের সুখের আশায় প্রবাসীরা শত কষ্ট মাথা পেতে সহ্য করছে। নিজের সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতিনিয়ত দূর-পরবাসে পাড়ি জমান এসব মানুষেরা। কেউ সুখী হয় কেউ আবার দুঃখে ভরা জীবন পার করে। এসব গোল্ডেন বয়দের বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে শুরু করে লাশ দেশে আসতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ এসেছে।

চাইলেই সুখ মিলবে এমনটা কিন্তু নয়। তবু জীবনের সঙ্গে অবিরত যুদ্ধ চালায় ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রেমিটেন্স যোদ্ধারা। লক্ষ্য থাকে সবাই মিলেমিশে সুখে থাকবে। দিন-রাত পরিশ্রম করে মাস শেষে যা বেতন পায় সবই দেশে পাঠিয়ে দেয়। নিজের কথা নিজের ভবিষ্যতের কথা একবারও ভাবার সময় হয় না।

প্রবাসীরা (২০১৫-১৬) অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে মোট ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে বরাবরের মতো রেমিটেন্স পাঠানোর দিক থেকে সৌদি আরব শীর্ষে রয়েছে। এ দেশ থেকে মোট ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে।

সৌদির পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এ দেশ থেকে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এরপরেই রয়েছে কুয়েত, এ দেশ থেকে ৮ কোটি ৮৯ লাখ রেমিটেন্স এসেছে, আর কুয়েতের পরই চার নম্বরে রয়েছে ওমান। ওমান থেকে ৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূর-প্রবাসে রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতিতে এমন ভূমিকা রাখলেও এই প্রবাসীরা এয়ারপোর্টে ভোগান্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ইস্যুসহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির শিকার হন, এমনকি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসে মারা যাওয়ার পর তার মরদেহটি দেশে পাঠাতে গুণতে হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।

ওমান থেকে এত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে গেলেও আজ হাজারো শ্রমিক বিনা কারণে জেলখানায় বন্দি, শুধুমাত্র একটি টিকিটের জন্য মাসের পর মাস জেল খাটছে বহু রেমিটেন্স যোদ্ধা।

হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে বহু রেমিটেন্স যোদ্ধার মরদেহ। শুধুমাত্র টাকার জন্য পাঠানো যাচ্ছে না মরদেহগুলো। রাতে ঘুমের ঘরে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের। গ্রেফতার আতংক, পারিবারিক চাপ, কাজের অনিশ্চয়তা, এইসব কারণে অল্প বয়সে প্রতিনিয়ত ঝরে যাচ্ছে অনেক রেমিটেন্স যোদ্ধা।

প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা দেখার জন্য রয়েছে একটি মন্ত্রণালয়, সেইসঙ্গে আর্থিক সেবা দিতে রয়েছে একটি ব্যাংক ও। নিজস্ব মন্ত্রণালয় ও ব্যাংক থাকার পরেও কতটুকু উপকৃত হচ্ছেন এই প্রবাসীরা, এই প্রশ্ন আজ সকল প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি, একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ আর একজন প্রবাসীর স্বপ্ন একই সুতোয় বাঁধা থাকলেও প্রবাসীরা কখনো কখনো নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেন দেখার কেউ নেই। দীর্ঘ পাঁচ মাস যাবৎ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক রেমিটেন্স যোদ্ধার দেশে ফেরার আকুতিতে ভারী হয়ে উঠেছে ওমানের সুমাইল হাসপাতালের আকাশ বাতাশ।

সেখানে যেন মানবতা নির্বাসিত। একদিকে কর্তৃপক্ষের হসপিটাল ত্যাগের নির্দেশ অন্যদিকে দেশে ফিরতে নিজের দেশের সরকারি বিমান সংস্থার অসহযোগিতা সব মিলিয়ে এই অসহায় মানুষটি এখন পরিণত হয়েছে জীবন্ত লাশে। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার সাধনপুর বদরের দরগা এলাকার মো. বেলাল হোসেন পিতা আব্দুল ছালাম একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পাঁচ মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি।

এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেনি। ডাক্তারদের বক্তব্য হলো তিনি হয়তো আর কোনদিনই সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন না। নিজের পরিবার-পরিজনের কাছাকাছি থাকলে হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় স্বাভাবিক হলেও হতে পারেন।

বীমা কোম্পানি অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়ায় এখন চিকিৎসাও বন্ধ। অন্যদিকে দেশেও আসতে পারছে না। কারণ নিরাপত্তার দোহাই আর ছোট বিমানের অজুহাতে বিমান বলছে এমন রোগী তারা বহন করবে না আর অন্য এয়ারলাইন্সগুলোতে খরচের পরিমাণ অনেক বেশি যা বহন করা এই রোগীর পক্ষে অসম্ভব।

ওমানে নিযুক্ত বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার নিজের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘দেখুন এসব রোগী পাঠানোর ক্ষেত্রে ওপরের কিছু নির্দেশনা আছে আমরা চাইলেও এর বাহিরে যেতে পারছি না। বিমানে ভ্রমণ সুবিধার জন্যে কিছু নিয়ম ও শর্তের কথা বলেছেন এই কর্মকর্তা যা একজন রোগী নয় কেবল একজন সুস্থ মানুষেরই হতে পারে।

দেশের একমাত্র সরকারি বিমান সংস্থার এমন উদাসীনতায় হতাশ এই ভুক্তভোগী ছাড়াও গোটা ওমান প্রবাসীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই দেশের পতাকাবাহী এই বিমান সংস্থাটির ওপর। বারবার বিমান কর্মকর্তাকে অনুরোধের পরও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

প্রবাসীরা এহেন দূরাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা বলেন, একজন প্রবাসী যতক্ষণ সুস্থ থেকে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে অসামান্য ভূমিকা রাখছেন ততক্ষণ তাকে সূর্য সন্তান, রেমিটেন্স যোদ্ধা আরো কতো নামে ডাকা হয় আর যখন একজন প্রবাসী বিপদে পড়ে তখন তারা সরকার থেকে তেমন কোন সাপোর্ট পান না।

এটাকে তারা প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা বলেই করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন যেন বিমানে রোগী কিংবা লাশ বহনে নিয়মনীতিগুলো আরো সহজতর করে বিনা খরচে দেশে ফেরত পাঠিয়ে প্রবাসীদের এই দূরাবস্থা থেকে মুক্তি দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দূতাবাসের কাউন্সিলর শ্রম টেলিফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দূতাবাসের লেবার উইংয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে আব্দুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে দূতাবাসের বক্তব্য হচ্ছে তারা এ রকম আরো অনেক রোগী ও লাশ দেশে পাঠানো নিয়ে নিজেরাও যথেষ্ট বিপাকে রয়েছেন।

ইতোপূর্বে দূতাবাসও বিমানকে অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন এ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বিমান মন্ত্রণালয়, ফরেন মিনিস্ট্রির সচিব ও মন্ত্রী বরা বর অনেকবার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেও কোনো ফল হয়নি বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

তার দাবি প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত করতে রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার দেশের একমাত্র সরকারি বিমান সংস্থা ও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে প্রবাসীরা বলছেন, তাদের সঙ্গে এহেন অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার প্রধান উপাদান হতে পারে, তাই কোনো রকম কালক্ষেপণ ছাড়াই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪.কম

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.