Beanibazarview24.com
‘আমি ঠিকঠাক কানাডায় পৌঁছে গেছি। কোনো অসুবিধা হয়নি। চাকরির ব্যবস্থাও হয়ে যাচ্ছে। এখন ওদের টাকাটা দিয়ে দাও।’ টেলিফোনে ছেলে হাবিবুর রহমান আকন্দ রাসেলের এমন সুখবর শুনে তার মায়ের যেন খুশির শেষ নেই।
ছেলের সঙ্গে কথা বলে তার মা বলেছিলেন, আচ্ছা বাবা। খুব খুশি হয়েছি। তোর খবর না পেয়ে এ কদিন দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আচ্ছা বাবা ওদের টাকা দিয়ে দিব।
কোনো সমস্যা নেই। অনেক দিন পর এমন সুখবর পেলাম। ভালো থাকিস বাবা। জমি বিক্রির টাকাটা কাল হাতে পাব। তখন ওরা বাড়িতে আসলেই দিয়ে দিব। ফোনে মা আর ছেলের কথা শেষ হয়।
পরদিন বিদেশ পাঠানোর লোকজন রাসেলদের নরসিংদীর বাড়িতে যেয়ে বাকি ১২ লাখ টাকা গ্রহণ করে। আগে নিয়েছিল আট লাখ। মোট ২০ লাখ টাকার চুক্তি ছিল তাদের মধ্যে। রাসেল শুধু নয়, একই গ্রুপে আরও ১০ জন গিয়েছে স্বপ্নের কানাডায়।
রাসেলদের পরিবারে চলছে খুশির বন্যা। কারণ অনেকেই তাদের ভয় দেখিয়েছিল। বলেছিল, পা.চা.র.কা.রী চ.ক্রের হাতে পড়েছে মনে হয়। যে কারণে যোগাযোগ করছে না। কিন্তু ছেলের কণ্ঠে কথা শুনে সেসব আ.শ.ঙ্কা সব এখন দূরে।
কিন্তু মায়ের সেই হাসি আর বেশিদিন থাকেনি। কদিন পরই মা তার ছেলের দুসংবাদ শুনতে পান। জানতে পারেন, তার ছেলে প্রকৃত অর্থেই ভ.য়.ঙ্ক.র চ.ক্রে.র হাতে পড়েছে। ছেলে তার কানাডায় নয়, ভারতের দিল্লিতে রয়েছে।
চক্রের সদস্যরা তাকে পি.টি.য়ে র.ক্তাক্ত করে দিল্লির রাস্তায় ফেলে রাখে। পরে তাকে উ.দ্ধা.রের পর বাংলাদেশ দূতাবাস দায়িত্ব নেয়। এর কিছুদিন পরেই তাকে পাঠানো হয় দেশে। এ ঘটনায় এলিট ফোর্স র্যাব পা.চা.রকা.রী চ.ক্রের ৩ সদস্যকে গ্রে.ফ.তার করে। এদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
রাসেল ও আ.ইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে জানা যায় তাদের সেই ভ.য়.ঙ্ক.র কাহিনী। রাসেলের সঙ্গে পরিচয় ছিল সাইদুল বাশার জাবের নামের এক ব্যক্তির। যিনি আ.দ.ম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রাসেলকে সে কানাডায় উচ্চতর বেতনে চাকরি এবং উন্নত জীবনের প্র.লো.ভন দেখায়।
তাকে ১৮ লাখ টাকা দিলে সে ভিসা প্রক্রিয়াকরণসহ কানাডা ইমিগ্রেশনের যাবতীয় ব.ন্দো.ব.স্ত করার কথা বলে বনানীর ‘গ্লো.বাল এ.ক্স.প্রেস’ অফিসে নিয়ে যায়।
সেখানে রাসেলকে তামান্না ফারহানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রাথমিকভাবে পাসপোর্ট ও ১ লাখ টাকা দিলে ভারতের ভিসার ব্যবস্থা করে তাকে সেখানে নিয়ে যাবে এবং ভারতে যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে দিল্লি থেকে ভিসা প্রসেস করে কানাডার ফ্লাইটের টিকিট দেবে বলে জানায়। এ ছাড়া অবশিষ্ট টাকা কানাডা পৌঁছার পর দিতে হবে বলে জানানো হয়।
চুক্তি মোতাবেক রাসেল তামান্নাকে নগদ ১ লাখ টাকা প্রদান করে। পরে রাসেলকে ভারতের কলকাতায় পাঠানো হয়। তামান্নার সূত্রে অমিত এবং রাজেশ নামে ২ জন লোক রাসেলকে কানাডায় ফ্লাইট দেওয়ার কথা বলে অ.জ্ঞা.ত স্থানে নিয়ে আ.ট.কে রাখে।
এরপর শুরু হয় মারধর, শা.রী.রি.ক ও মা.ন.সি.ক নি.র্যা.ত.ন এবং প্রা.ণ.না.শের হু.ম.কি। মা.র.ধ.রের কারণে পরিবারকে ফোন করে রাসেল বলতে বাধ্য হয় ‘আমি কানাডা পৌঁছে গেছি, আমি ভালো আছি, তামান্না এবং জাবেরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বাকি টাকা প.রি.শো.ধ করে দাও’।
এরপর রাসেলের পরিবার তামান্না ও জাবেরের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। মু.ক্তি.প.ণের টাকা বুঝে পাওয়ার পর রাসেলকে হাত.-পা বেঁ.ধে দিল্লির কাছে অ.জ্ঞা.ত স্থানে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় রাসেলকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, ভালোভাবে না জেনে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করা ঠিক নয়। এতে টাকা-পয়সা ছাড়াও জীবনও হু.ম.কি.র মধ্যে পড়তে হয়। এ ধরনের চ.ক্র এখন সারা দেশেই ছড়িয়ে রয়েছে। চ.টকদার বি.জ্ঞাপন দিয়ে তারা ফাঁ.দ পাতে। লোকজন যোগাযোগ করলেই তাদের ভারত নিয়ে মু.ক্তি.প.ণ আ.দায় করে থাকে।
তথ্যসূত্র: বিডি প্রতিদিন
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.