Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বিদেশ নাকি মৃত্যু ফাঁদ!







আমরা পৃথিবীর ইতিহাস যদি দশ বছর ধরি, তবে সভ্যতার ইতিহাস মাত্র কয়েক সেকেন্ডের। আজ মানুষ নিজেদের সভ্য দাবী করছে। আসলেই কি আমরা সভ্য! এই সভ্যতার যুগে মানুষের অসভ্যতা সেই প্রস্তর যুগ বা তারও পূর্বের কালের মানু‌ষেরদেরকেও হারমানায়। সেই সময় মানুষ সামান্য খাদ্যের জন্যই মেরে ফেলত মানুষ অনেকটা পশুর মত। এখন মানুষ টাকার জন্য হত্যা করছে মানুষ। আর এই মানুষ রুপি অমানুষদের সাহায্য করছি আমাদের মত কিছু বোকা মানুষ। আধু‌নিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ, আধুনিক যুগ ইন্টারনেটের যুগ।



আর এ যুগে এসেও আমরা এমন সব কাজ করি যার ফলশ্রুতিতে আমাদের পরিবার পরে যায় মহা বিপদে। সব কিছুতেই আমাদের কেমন গাছাড়া ভাব। আমরা প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্ন বুনি আবার ভেঙ্গেও যায়। স্বপ্নতো আর বাংলা ছবির কাহিনীর মত নয় যে একটি গাড়ির নাট ঘুরা‌তে ঘুরা‌তে নায়ক বড় হয়ে যাবে এবং ধনীও হয়ে যাবে। আসলেই স্বপ্ন বহুদূর, স্বপ্ন ধূসর। আমরা প্রতিদিন ছুটছি টাকার পিছনে। আর ছুটতে ছুটতে আমরা হারিয়ে ফেলি জীবনের খেই।



বর্তমান যুবসমাজকে ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করলে ৭০ ভাগ চোখ বন্ধ করে বলে দিবে বিদেশ। যে কারোর বিদেশ যাওয়ার মাধ্যম বা পদ্ধতিই বলে দিবে সে আসলেই কোথায় পৌছাবে, বিদেশ নাকি মৃত্যু ফাঁদে। বিদেশে আসলেই  কি মধু আছে! তাছাড়া বর্তমানে অধিকাংশ যুব সমাজ পড়া লেখা শেষ করুক বা না করুক বিদেশ যাওয়ার জন্যে একবার হলেও চেষ্টা করবে। এর বিশেষ কিছু কারণও আছে। বেকারত্ব, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, অধিক উপার্জনের আশা, উন্নত জীবন যাপনের প্রত্যাশা এছাড়াও আরো বহুবিধ কারণ রয়েছে এই বিদেশ পারি জমানোর । যারা বিদেশে যেতে চায় তারা মনে করে বিদেশে মৌচাক আছে গেলেই চুক চুক করে মধু খাওয়া যাবে। আর এই মধু খেতে গেলতো অনেক সময় মৌমাছির হুল ফুটবেই।



কিভাবে এই ফাঁদে পা দেয় মানুষ? বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপন দেখে। যারা বিজ্ঞাপন দেয় তারা ভালো করেই জানেন কিভাবে মানুষকে আকর্ষণ করতে হবে। তাই তাদের এই বিজ্ঞাপনে থাকবে রং চং মাখা কিছু কথা বার্তা। বিদেশ যাওয়ার জন্য মানুষ প্রথম চায় নিশ্চয়তা, অর্থের নিশ্চয়তা, ভিসার নিশ্চয়তা, কাজের নিশ্চয়তা ও স্থায়ীভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা। এসবই আদম বেপারীদের কাছে প্যাকেজ হিসেবে থাকে। অন্যদিকে মানুষ এসব নিশ্চয়তা পেলে কেনইবা ঝাপিয়ে পরবে না?  কেউ যদি বলে কানাডা পৌছানোর পরে টাকা তার পূর্বে এক টাকাও লাগবে না, তাহলে যে কেউ ঝাপিয়ে পরতে বাধ্য। আসলে এটাতে পা দেয়া আর  মৃত্যু কুপে স্বেচ্ছায় ঝাপ দেয়া একই কথা। মূলত এটা একটা প্রতারণার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।



আর এসব তথাকথিত ভুয়া এজেন্সির আরো একটি প্রতারণা হচ্ছে এরা নাকি ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডার ভিসা করে এম্বাসির সাক্ষাককার ছাড়াই। আবার ভিসা স্টিকার ছাড়াও বিদেশে মানুষ পাঠিয়ে দেয়। এসব প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে এমন সুযোগ আছে কিনা সকলের জানা উচিৎ। এ বেপারে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতমত হচ্ছে না নেই। এমন কি কেউ যদি কানাডা, আমেরিকা বা দক্ষিণ কোরিয়ার ভিসা পেতে চায় এবং  প্রার্থীর যদি পূর্ববর্তী কোন পাসপোর্ট থাকে এবং তার নাম্বার বর্তমান পাসপোর্টে সংযুকক্ত থাকে তবে অবশ্যই তা পদর্শণ করতে হবে অন্যথায় সে ভিসা পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আবার কানাডার ভিসার ক্ষেত্রে সেটা পিএনপি হোক আর এক্সপ্রেস এন্ট্রি, ব্যবসা ভিসা বা ছাত্র ভিসা হোক এখানে সকল ভিসা মিলে মোট ৩৭ টি শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব শর্তের যেকোন একটি পূরণে ব্যর্থ হলে ভিসা মিলবে না। সুতরাং যেখানে এত করা করি সেখানে ভিসা স্টিকার ছাড়া সেসব দেশে যাওয়ার চিন্তাটা পাগলের প্রলাপ নয় কি?  এখন এতো সব জানার পরেও কেউ যদি এ পথে পা বাড়ায় তাহলে এটা আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় এসব ভুয়া এজেন্ট নাকি এম্বেসিও কন্টাক্ট করে। আসলে সত্যি কথা বলতে কি যে সব দেশ দূর্নীতিতে শূণ্য সহিষ্ণু তাদের এম্বেসি কন্টাক্ট করা কি এতই সহজ? সত্যি কথা এটাও প্রতারণা।



ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায়ও এরা খুবই পারদর্শী। আসলেই কি তাই? আবার অনেকেই বলে পর্তুগাল বা স্পেনে তার দশটি দোকান আছে আর সে চাইলেই যে কাউকে এসব দেশে নিয়ে যেতে পারবে। এ বিষয়ে স্পেনে বসবাসকারী আশিক রানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন “কথাটি সঠিক নয়”। এভাবেই অভিনব পন্থায় প্রতিদিন হচ্ছে প্রতারণা। সত্যি বলেই বলতে হয়, আমরা যারা বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী আছি তারা অবশ্যই জানি বাংলাদেশ থেকে কেমন শ্রমিক বিদেশে যায়। যারা যায় তারা অধিকাংশ সময়ে অদক্ষ বা আধা দক্ষ। আর যারা দক্ষ শ্রমিক যায় বিদেশে গিয়ে সেই কাজটা পায় না যাতে তারা দক্ষ। একমাত্র সিঙ্গাপুর ছাড়া। তবে ইদানিং কালে মধ্যপ্রাচ্য কিছু দক্ষ শ্রমিক নিচ্ছে। তবে ইউরোপ আমেরিকার বেলায় সেটা খুবই বিরল। একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো একটি দেশ তখনি বিদেশী শ্রমিক নিবে যখন তার প্রচুর কাজ থাকবে কিন্তু শ্রমিকের ঘাটতি হবে তবে সে ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অবশ্যই শ্রম চুক্তি থাকতে হবে। যদি এ ধরনের কোন চুক্তি না থাকে তাহলে কোন মতেই ওয়ার্ক পারমিটে সে সব দেশে যেতে পারবে না কেউ। শ্রম চুক্তি আছে কিনা তা যানতে হলে অবশ্যই বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোতে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবেনা ম্যান পাওয়ার ছাড়া একটি লোকও বিদেশে কাজের ভিসায় যেতে পারবে না। যদি কেউ যায় তবে পরবে মহা বিপদে। মোট কথায় বিদেশেই যেতে পারবেনা। তারপরও যদি কোন এজেন্সি বলে তারা নিতে পারবে। তাহলে অবশ্যই এটি একটা ফাঁদ।

এতো সব জানার পরেও যারা বিনা টাকায়, ভিসা ছাড়া বা যে সব দেশে কাজের ভিসা হয়না সেসব দেশে যেতে আগ্রহী হন তবে তাদের জন্য আছে সীমাহীন দূর্ভোগ। এমন ক্ষেত্রে দালালরা উপরোক্ত লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাবে দিল্লী। এখানে গিয়ে প্রার্থীদের যে রুমে রাখা হবে তার নাম সেইফ হোম বা নিরাপদ ঘর। কার জন্য নিরাপদ? না, প্রার্থীর জন্য নয়, এটা নিরাপদ দালালদের জন্য। নির্যাতন করার জন্য নিরাপদ।এখানে আলাদা আলাদা টর্চার রুম বা নির্যাতন কক্ষ আছে। প্রথমে সবার সামনে একজনকে বেদম প্রহার করবে যাতে অন্য সবাই ভয় পায়। কেন এই নির্যাতন টাকা দিলেই নির্যাতন শেষ। এভাবে দিনের পর দিন চলবে নির্যাতন যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্যাতিতারা দেশে ফোন দিয়ে বলে টাকা দিতে। যখন পরিবার এই নিশ্চয়তা পায় যে কারোর ভাই বা ছেলে ইউরোপে চলে গিয়েছে। আসলেতো তারা আছে দিল্লির বন্দী শিবিরে। টাকা আসতে যত দেরি হবে টর্চারও আরো বেশি চলবে। আর টাকা দিতে যারা ব্যর্থত হবে  তাদের  শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ বিক্রি করে দেয়া হবে বা তাদের হত্যা করা হবে। এভাবেই কত পরিবার হচ্ছে নিঃস্ব, কেউ হারাচ্ছে তাদের স্বজন, তার খবর কে রাখে? এটাতো বিদেশ যাত্রা নয় এ যেন মৃত্যু ফাঁদ। …..চলবে……..
লেখকঃ সিকদার মোঃ শাহ আলম














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.